নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
দুবরাজপুর ও হলদিয়ার ঘটনার প্রেক্ষিতে রাজ্যে শিল্পের পরিবেশ এবং জমি-সমস্যা নিয়ে সর্বদল বৈঠক ডাকার জন্য রাজ্যপাল এম কে নারায়ণনের কাছে দাবি জানাল বিরোধী বামফ্রন্ট। তাদের বক্তব্য, দুবরাজপুরের সাম্প্রতিক ঘটনা একটি দৃষ্টান্ত মাত্র। শিল্পের জন্য জমি সংগ্রহে রাজ্য সরকার কোথাও হস্তক্ষেপ না-করার অবস্থান নেওয়ায় দালাল-রাজ মাথাচাড়া দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে সর্বত্র। জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণ বা বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরির কাজও জমি-সমস্যায় আটকে গিয়েছে। এই অবস্থায় সর্বদল বৈঠক ডেকে সমাধানসূত্র বার করার চেষ্টা করা উচিত বলে বামেরা মনে করছে।
রাজ্যপালের কাছে দুবরাজপুরের লোবায় গুলিচালনার ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তও দাবি করেছে বামেরা। তাদের পরিষদীয় প্রতিনিধিদল লোবা ঘুরে এসে রাজ্যপালকে জানিয়েছে, আহতেরা সরকারি হাসপাতালে ভর্তি থাকলেও তাঁদের ওষুধপত্র বা ইঞ্জেকশন বাইরে থেকে কিনে নিতে বলা হচ্ছে। আহতদের ক্ষতিপূরণ এবং চিকিৎসার ভার সরকারের নেওয়ার দাবি সোমবার রাজ্যপালের কাছে জানিয়েছে বামেরা। |
তার আগেই বিজেপি-র তরফে রাজ্যপালের কাছে লোবার ঘটনায় সিবিআই তদন্তের দাবি জানানো হয়েছে। রাজভবন থেকে বেরিয়ে বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ এ দিন বলেন, “সিবিআই তদন্তের দাবি রাজ্যপাল মানেননি। পরেও তিনি এই ব্যাপারে রাজ্য সরকারকে রাজি করাবেন, এমন কোনও ভরসা রাখছি না। পুজোর ছুটির পরে আমরাই সিবিআই তদন্ত চেয়ে আদালতে যাব। নন্দীগ্রামে গুলিচালনার ঘটনায় হাইকোর্টের নির্দেশেই সিবিআই তদন্ত হয়েছিল।”
দুবরাজপুরের ফব বিধায়ক বিজয় বাগদি-সহ ১১ বাম বিধায়ক এ দিন রাজভবনে গিয়ে হলদিয়া-কাণ্ডের কথাও তোলেন। রাজ্যপালের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, “বিরোধী হলেও ইতিবাচক ভূমিকা পালন করা দরকার। সর্বদল বৈঠক ডাকা যেতে পারে। শুধু দুবরাজপুর নয়, জমি নিয়ে সামগ্রিক ভাবেই সমস্যা হচ্ছে। সরকারের ভূমিকা থাকা দরকার। দালালদের হাতে পড়লে সর্বনাশ হবে। গ্রামবাসীদের মত নিয়েই আলোচনা করতে হবে। ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণ আটকে গিয়েছে। কাটোয়ায় এনটিপিসি থমকে গিয়েছে জমি-সমস্যায়। এ ভাবে চললে পশ্চিমবঙ্গ পিছিয়ে পড়বে।” একই সঙ্গে প্রাক্তন মন্ত্রী সূর্যবাবুর মন্তব্য, “যখন সরকারে ছিলাম, বিরোধী হিসাবে ওঁদের ডাকলে আসতেন না। এখন সরকারে গিয়ে ডাকছেন না! নিজেরা বিবৃতি দিয়ে অনেক জটিলতা তৈরি করছেন!”
কংগ্রেস-প্রভাবিত শ্রমিক সংগঠন আইএনটিইউসি এ দিনই হলদিয়া বন্দরে এবিজি-র কর্মচ্যুত শ্রমিকদের কাজে পুনর্বহালের জন্য রাজ্যপালের কাছে আবেদন জানিয়েছে। ছাঁটাই কর্মীদের কাজে ফেরাতে রাজ্য সরকারের কোনও তৎপরতা নেই বলেও তারা রাজ্যপালের কাছে অভিযোগ
করেছে। নিরাপত্তার জন্য ১৭ লক্ষ টাকা জমা দেওয়া সত্ত্বেও এবিজি কেন পুলিশ-প্রশাসনের সাহায্য পায়নি, সেই প্রশ্নও তুলেছে তারা। রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করার পরে সংগঠনের রাজ্য সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, “হলদিয়ায় রাজ্য সরকার ছাঁটাই
হওয়া শ্রমিকদের পাশে না-দাঁড়িয়ে রাজনীতি করছে।” |