রবিবার রাতে ওয়াশিংটন থেকে বিমানে চড়েছেন সোমা ভট্টাচার্য। স্বামী শিবপ্রসাদ ভট্টাচার্য বিজ্ঞানী। প্রায় ২৫ বছর তাঁরা আমেরিকায় রয়েছেন। কিন্তু পালা করে প্রতি বছর এক বার স্ত্রী, একবার স্বামী আসেন কালীপুজোতে। দিল্লি থেকে তরুণ ভট্টাচার্যও প্রতি বছর কালী পুজোর সময় বাড়ি আসেন। তাঁর কথায়, “দুর্গাপুজোয় আমরা বাড়ি ফিরি না। কিন্তু কালীপুজোর রাতে বেলপুকুরের বাড়িতে যেতেই হয়।”
নদিয়ার জেলা সদর কৃষ্ণনগর থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরের গ্রাম বেলপুকুর, সুপ্রাচীন বিল্বপুষ্করিনী। চৈতন্যের মামার বাড়ি। চৈতন্য হওয়ার আগে নিমাই এখানে আসতেন দাদামশায় নীলাম্বর চক্রবর্তী ও মেসো চন্দ্রশেখরের বাড়ি। তবে এখন বেলপুকুরের যে জন্য খ্যাতি, সেই কালীপুজোর শুরু চৈতন্যের সময় থেকে অন্তত দু’শো বছর পরে। এখন কৃষিপ্রধান এই গ্রাম সারা বছর নিরুত্তাপ। কেবল কার্তিকী অমাবস্যার রাতে আমূল বদলে যায় নদিয়ার এই প্রত্যন্ত জনপদ। তিনশোর বেশি কালী পুজো হয় বেলপুকুরে। তার মধ্যে তিরিশটি বারোয়ারি। বাকি সবই বাড়ির পুজো। কথিত রয়েছে, নদিয়া রাজের প্রত্যক্ষ মদতে এই কালী পুজো শুরু হয়। ব্রাহ্মণ পণ্ডিতদের এই গ্রামে বাস করার তখন শর্তই ছিল, কালীপুজো করতে হবে। সে জন্য রাজানুগ্রহও মিলত। সেই প্রথা রয়ে গিয়েছে এখনও।
আর তা রক্ষা করতে হিমসিম খাচ্ছেন বারোয়ারি পুজোর উদ্যোক্তা থেকে গৃহস্থ বাড়ির কর্তা--সকলেই। এক রাতে তিনশো প্রতিমা, তাই স্বভাবতই সব থেকে বেশি চাপে রয়েছেন মৃৎশিল্পীরা। তাঁদের এক জন গোবিন্দ পাল বলেন, “রং থেকে সাজ, সব কিছুরই দাম বাড়ছে। কিন্তু মূর্তির দাম তো সে ভাবে বাড়ানো যাচ্ছে না। তাই আমাদের লাভ কমছে।” ৫০০ থেকে ৫০০০ টাকার প্রতিমা রয়েছে। কিন্তু সেই সব প্রতিমার দাম তেমন বাড়েনি। গোবিন্দবাবুর কথায়, “দাম বাড়াব কী করে? গ্রামেরই তো পুজো।” স্থানীয় একটি বারোয়ারির প্রধান উদ্যোক্তা শীতল ঘোষ বলেন, “কী করে কী হবে, জানি না। কৃষি নির্ভর গ্রামে চাষির হাতে পয়সা নেই। খেতমজুরের কাজ নেই। বহু মানুষই ঐতিহ্য ধরে রাখতে হিমসিম খাচ্ছেন।” আর এক বারোয়ারির উদ্যোক্তা তরুণ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “গত বছরের ২০ হাজার টাকায় যে মণ্ডপ হয়েছিল, এ বার তার জন্য ১৫ হাজার টাকা বেশি লাগছে। কিন্তু আমরা কী করে সেই টাকা সংগ্রহ করব? তাই মণ্ডপ ছোট হয়ে গিয়েছে।” স্থানীয় পুরোহিত সৌতম স্মৃতিরত্ন বলেন, “অনেক ত্যাগ স্বীকার করেও এই প্রথা টিকিয়ে রাখতে হচ্ছে।”
বেলপুকুরের পাশাপাশি কালীপুজোর প্রস্তুতি তুঙ্গে ধুবুলিয়ায়। বেশ কয়েকটি বারোয়ারির মধ্যে রীতিমতো প্রতিযোগিতা হয় এখানে। এলাকার সব থেকে বড় বাজেটের পুজো ক্ষুদিরাম সংঘের। তাদের কোষাধ্যক্ষ রাজু দত্ত বলেন, “প্রায় চার লাখ টাকা এ বারের খরচ। মণ্ডপ হচ্ছে মায়নমারের আনন্দ টেম্পল অনুকরণে। প্লাই ও থার্মোকলের কাজ।” রবিবার থেকেই জমে উঠেছে কালীপুজোর মেলা। আর একটি বড় বারোয়ারি বিনয় সঙ্ঘের সম্পাদক সুব্রত চক্রবর্তী বলেন, “আমাদের বাজেট ২ লাখ।” |