|
|
|
|
রঙে-আলোয় মাতন এগরায় |
অমিত কর মহাপাত্র • এগরা |
এক রাত্রির উৎসব, তবু তাকে ঘিরে উৎসাহের অন্ত নেই এগরা শহরে। শাক্তদেবী কালীর আরাধনায় রঙে-আলোয় তাই সেজে উঠেছে এগরা শহর। আলোর জয়গান শোনাতে এবং উৎসবের আনন্দ ভাগ করে নিতে সাধারণ মানুষ উদ্যোগী হয়ে এই উৎসবকে করে নিয়েছে তিন দিনের। শহরে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় চল্লিশটি পুজো হয়। সেই পুজোগুলিতে কোথাও দেবী মাহাত্ম্য, কোথাও বা প্রাচীন মন্দির, কোথাও আবার মণ্ডপ ও প্রতিমার থিমই আকর্ষণ। কয়েকটি পুজো কমিটি আলোকসজ্জা, আতসবাজি প্রদর্শন, ফুলের সাজ বা সামাজিক কর্মসূচিতে জোর দেয়। চলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও।
এগরার কর মহাপাত্র পরিবারের হট্টনাগরের কালী মন্দিরের পুজো সাড়ে চারশো বছরের প্রাচীন। স্থায়ী মন্দিরে কালো পাথরের দ্বিভুজা মূর্তি সোনা-রূপার অলঙ্কারে সজ্জিতা। এগরা বাজার ব্যবসায়ী সমিতির (আদি) পুজোও প্রায় দু’শো বছরের পুরনো। প্রথা মেনে মাটির প্রতিমা গড়ে পুজো করেন পুরোহিত। ঐতিহ্যশালী এই শ্যামাকালী সজ্জিতা হন সোনা-রূপার অলঙ্কার ও অস্ত্রে। আদি বাসাবাড়ির পুজো (বসু চৌধুরী) দু’শো বছরেরও বেশি প্রাচীন। সুউচ্চ দেবীমূর্তি, বলিও হয়। স্থায়ী মণ্ডপের সামনে মেলা বসে, যাত্রানুষ্ঠান হয়। বাসাবাড়ির পুজোর অন্যটি তুলনায় নবীন। একই প্রথা। আতসবাজি প্রদর্শন অন্যতম আকর্ষণ। |
|
এগরার একটি মণ্ডপ। ছবি: কৌশিক মিশ্র। |
বাড়ির পুজোর পাশাপাশি সর্বজনীন পুজোগুলির জৌলুসও কম নয়। এগরা বাজার ব্যবসায়ী সমিতির (বাসস্ট্যান্ড) পুজো শতাধিক বছরের প্রাচীন। সুউচ্চ শ্যামামূর্তিই আকর্ষণ। এগরা মিলনীর পুজো ৫৬ বছরের। স্থায়ী মণ্ডপ। রূপার অস্ত্র ধারণ করেন দেবী। এগরা ন্যাশনাল ক্লাবের পুজো ৪৫ বছরের। প্রতি বছর দেবী মূর্তির আঙ্গিক বদলই এই পুজোর বিশেষত্ব। এবার সুউচ্চ দেবী মূর্তিটি করালবদনা। হাসপাতাল মোড় ব্যবসায়ী সমিতির পুজো এবার ৪৫তম। প্রতিমা পঞ্চমুখী নিশাকালী। থাকছেন পঞ্চানন শিবও। সামাজিক কর্মসূচি রয়েছে। জাঁকজমক করেই পুজো হয় এগরা শ্মশানকালী মন্দিরে। স্থায়ী প্রতিমা ও সুসজ্জিত মন্দির। রাজকুমারস ক্লাবের পুজো এবার ২৯ বছরে পড়ল। পাহাড়ের উপর বসে রয়েছেন শিব, নীচে গুহার ভিতর কালী। থাকছে আলোকসজ্জা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এগরা বাজার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমিতি ২৫ বছর ধরে করে আসছে কালী পুজো। ২৫ বছরে পড়ল বয়েজ অ্যাসোসিয়েশন। সাবেক পুজো। ঘোষ মার্কেট, নেতাজি মার্কেটের পুজোও সাবেকি। এগরা স্কুল গ্রাউন্ড রোড ব্যবসায়ীদের পুজোয় মন্দিরের আদলে মণ্ডপ, ডাকের সাজে দক্ষিণাকালী। নবরূপ ক্লাবের শ্যামাপুজোর উদ্যোক্তা মহিলারাই। নিউ তারামা সবজি মার্কেট কমিটির মুখ্য আকর্ষণ বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা ও দেবী মূর্তি। পূর্ব কসবা শ্যামাপুজো কমিটির ১৮তম পুজো। মন্দিরের আদলে মণ্ডপে মাটির হাঁড়ির কাজ। প্যাশান হান্টের পুজো এবার ১৭তম। বিষ্ণুপুরের একটি মন্দিরের আদলে মণ্ডপ, আলোকসজ্জা আকর্ষণ। ১৩ বছরে পড়া সন্তানদল ক্লাব জোর দিয়েছে ফুলের সাজ ও আলোকসজ্জায়। কালীঘাটের কালীমূর্তির আদলে প্রতিমা। এগরা স্কুল ক্রীড়াঙ্গণে পল্লির শ্যামাপুজোর মণ্ডপে থাকছে তাসের কাজ।
দীপান্বিতা কালী অশুভনাশিনী ও মঙ্গলদায়িনী। তাই দেবী পুজোর প্রাক্কালে এগরাবাসীর প্রার্থনা, “যাক অবসাদ বিষাদ কালো, দীপালিকায় জ্বালাও আলো।” |
|
|
|
|
|