|
|
|
|
দীপাবলির বল্লভপুর যেন রং-তুলির দেশ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
বসে আঁকো প্রতিযোগিতা নয়, রং-তুলি নিয়ে খেলা। উদ্যোক্তারা চেয়েছিলেন, খোলা ক্যানভাসে ইচ্ছেমতো আঁকুক কচিকাঁচারা। তবে ভাবনা ছিল, টিভি ছেড়ে কেউ আসবে তো! বিকেল হতেই অবশ্য দূর হয়েছে সংশয়। যেমন খুশি আঁকতে তখন মণ্ডপের সামনে চার থেকে চোদ্দোর খুদেদের ভিড়। তাই শেষবেলায় উদ্যোক্তারা শুধু ক্যানভাস নয় ব্যবস্থা করলেন আর্ট- পেপারে আঁকতে দেওয়ার।
রবিবার বিকেলে এমনই ‘প্রতিযোগিতা’র আয়োজন হয়েছিল মেদিনীপুরের বল্লভপুরের তালপুকুর লেনে। স্থানীয় ইন্ডিয়ান ক্লাবের উদ্যোগে প্রতি বছরইএলাকায় হয় কালীপুজো। এ বার ২১ তম বর্ষ। সেই উপলক্ষেই রবিবার এই আয়োজন করা হয়েছিল। খুদেদের আঁকা সেই ছবিগুলিই এখন তালপুকুর লেনকে পরিণত করেছে রঙ-তুলির দেশে। রাস্তার দু’পাশে নানা ফ্রেম বসানো হয়েছে। কোনওটায় রয়েছে বাঁশের কারুকাজ, কোনটায় মাটির হাঁড়ি,তালপাতার পাখা। এ সবই আবার রঙিন হয়ে উঠেছে। |
|
ছোটদের আঁকিবুঁকিতেই সেজে উঠছে মণ্ডপ চত্বর। —নিজস্ব চিত্র। |
রবিবার বিকেলে শ্রেষ্ঠা দাস, ঋসভ সাহা, অঙ্কিতা সিংহের মতো খুদেরা এসে যে ক্যানভাসগুলিতে এঁকেছে, সেগুলিও রাস্তার দু’পাশে ফ্রেমের নীচে রাখা হয়েছে। যাতে বাবা-মায়েরাও তাঁদের সন্তানদের আঁকা ছবি দেখতে পারেন। সঙ্গে দর্শকেরা তো রয়েছেই। শুধু এলাকার সাজ্জসজ্জায় নয়, প্রতিমাতেও রয়েছে নতুনত্ব। আগে পরিত্যক্ত প্লাস্টিক, নারকেল গাছের সরঞ্জাম দিয়ে প্রতিমা তৈরি হয়েছে। এ বার চরকি- ঝুরঝুরি প্রভৃতি আলোর বাজি দিয়ে। উদ্যোক্তাদের বার্তা, আলোর উৎসবে আলোর রোশনাই থাকুক। তবে শব্দের মাত্রা যেন নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে থাকে।
তবে, ‘প্রতিযোগিতা’ শব্দটির ক্ষেত্রে আপত্তি রয়েছে পুজো উদ্যোক্তাদের। পুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা আকাশ ভট্টাচার্য, সুশান্ত দাস প্রমুখরা বলেন, “আমরা কোনও প্রতিযোগিতার আয়োজন করিনি। শুধু চেয়েছিলাম ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা আসুক। মনের মতো আঁকুক। সেটাই হয়েছে।” পুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা শুভজিৎ দাঁ বলছিলেন, “এছাড়া কোনও বিকল্প ছিল না। কেউ আঁকতে এলে তো তাকে ফেরানো যায় না। আমাদের আবেদনে সাড়া দিয়ে বাবা- মায়েরা তাঁদের বাচ্চাদের আঁকতে পাঠিয়েছিলেন। আমরা ক্যানভাসের ব্যবস্থা করেছিলাম। জানিয়েছিলাম, ক্যানভাসেই আঁকতে হবে। ছেলেমেয়েদের হাতে শুধু তুলি দিয়ে পাঠাবেন। রং- ক্যানভাসের ব্যবস্থা আমরাই করব। অধিকাংশ ছেলেমেয়ে ক্যানভাসেই এঁকেছে। তবে কয়েকজনকে বসে আঁকার বন্দোবস্ত করে দিতে হয়েছে।”
উদ্বোধনেও এই পুজো অন্যদের থেকে বেশ খানিকটা আলাদা। ফিতে কেটে বা প্রদীপ জ্বেলে নয়, রবিবার সন্ধ্যায় থার্মোকলের উপর জোড়াফুল ছবি এঁকে পুজোর উদ্বোধন করেছেন মেদিনীপুরের বিধায়ক মৃগেন মাইতি। ওই বিকেলে যে সব ছেলেমেয়েরা রং- তুলির খেলায় মেতেছিল, তাদের সকলকেই পুরস্কৃত করা হয়েছে সোমবার সন্ধ্যায় এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে।
পুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা তারক পাইন বলছিলেন, “শিশুদের সংস্কৃতি-চর্চায় উৎসাহিত করতেই আমাদের এই আয়োজন। এখন তো বইয়ের ‘বোঝা’ সামলাতে ওদের হিমসিম অবস্থা। হাতে রং-তুলি নিয়ে অনেকেই নিজের ইচ্ছেমতো ক্যানভাসে আঁকিবুকি কেটেছে। আনন্দ করেছে। আমরা সকলে এটাই চেয়েছিলাম।”
|
|
|
|
|
|