উপযুক্ত সংরক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়ে গিয়েছে বর্ধমানের লাকুড্ডির বেলেকাঠের প্রাচীন দুর্লভা কালীর মূর্তিটি। তার পরে মূর্তি তৈরি করা হয়েছিল সিমেন্ট দিয়ে। পঞ্চাশ বছর যেতে না যেতে খসে পড়ছে প্রতিমার গায়ের আস্তর। অগত্যা শ্বেতপাথরের মূর্তিকেই শ্রেয় মনে করছেন দুর্লভা কালীর সেবাইতেরা। কিন্তু এ বারের পুজো হবে সিমেন্টের পুরনো মূর্তিতেই।
মন্দির সূত্রে জানা গিয়েছে, শতাধিক বছরের পুরনো কালীমূর্তিটি তৈরি হয়েছিল বেলেকাঠ দিয়ে। উই পোকার দৌরাত্ম্যে আর ঘুন ধরে সেটি নষ্ট হয়ে যায়। বছর পঞ্চাশেক আগে স্থাপন করা হয় সিমেন্টের মূর্তিটি। এত দিনে চাঙর খসে পড়ছে মূর্তির গা থেকে। ঢালাই ভেদ করে বেরিয়ে পড়ছে রড। শ্বেতপাথরের মূর্তি গড়ার পরিকল্পনা নিয়েছেন সেবাইতেরা। এলাকার মানুষ সে জন্য অর্থ সাহায্যও করছেন। কলকাতায় সেই মূর্তি তৈরি করতে দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তাঁরা। |
লাকুড্ডির এই প্রাচীন পুজোকে কেন্দ্র করে নানা কিংবদন্তী ছড়িয়ে রয়েছে জনমানসে। কথিত, দুর্লভ ভট্টাচার্য নামে কে ব্রাহ্মণ প্রথমে পুকুরে স্নান করতে গিয়ে একটি শিলা পেয়েছিলেন। ‘স্বপ্নে জানতে পারেন’ ওই শিলা আদতে স্বয়ং দেবী কালী। শিলা রূপেই সেখানে প্রতিষ্ঠিত দেবী। কিন্তু তাঁর মন্দির গিয়েছিল নষ্ট হয়ে। স্বপ্ন পেয়ে সেই শিলাকেই কালীরূপে পুজো করতে শুরু করেন দুর্লভ। তাঁর পাণ্ডিত্যে মুগ্ধ হয়ে বর্ধমান রাজা বিজয়চন্দ মহতাব বেলেকাঠের মূর্তি নির্মাণ করে দেন। ভট্টাচার্য পরিবারের সদস্যেরা জানান, মন্দির তৈরিতেও অর্থ সাহায্য করেন তিনি।
কিন্তু রাজার পৃষ্ঠপোষকতায় তৈরি সেই বেলেকাঠের মূর্তি শেষপর্যন্ত নষ্ট হয়ে যায়। ভট্টাচার্য পরিবারের বর্তমান সেবাইত মঙ্গল ভট্টাচার্য জানান, মন্দিরের কড়িবর্গা ছিল কাঠের। দরজাও কাঠের। তাতেই প্রথম উই ধরে। ঘুণ ধরতে শুরু করে কাঠে। ধীরে ধীরে মূর্তিতেও উই লেগে যায়। তাঁর কথায়, “বাপ-ঠাকুর্দার মুখে শুনেছি বাধ্য হয়ে সিমেন্টের মূর্তি তৈরি করা হয়।” তিনি আরও জানান, দু’টি পুজো হয় মন্দিরে। বৈশাখ সংক্রান্তিতে হয় যোগাদ্যা পুজো। দুর্গাপুজোর সময়ে দুর্গাজ্ঞানেই দেবীকে পুজো করেন ভক্তেরা। চলে নিত্য পুজোও। জনশ্রুতি, একদা মন্দির এলাকাতেই এসে লুঠের মাল ভাগাভাগি করত ডাকাতেরা। তাই দেবীর অপর নাম ‘ডাকাতে কালী’।
শুধু দুর্লভাই নন, পুরনো মূর্তির পরিবর্তে শ্বেতপাথর বা ধাতুর নতুন মূর্তি বসানো হচ্ছে বর্ধমানের বিভিন্ন মন্দিরেই। ইছলাবাজারের একটি মণ্ডপে শ্বেতপাথরের মূর্তি বসছে এবার। বেনারস থেকে নিয়ে আসা হয়েছে সেই মূর্তি। রবিবার বিকেলে শোভাযাত্রা করে প্রতিমাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে সদ্যপ্রতিষ্ঠিত মন্দিরে। বছর কয়েক আগে বর্ধমানের অন্যতম কালী মন্দির বড়মা কালী-র মূর্তি তৈরি হয়েছে অষ্ট ধাতু দিয়ে। প্রতি বছর পুজোর আগে কালো রঙ করা হয়। উদ্যোক্তারা জানান, বার বার মাটির মূর্তি তৈরি করার খরচ ও সময় বাঁচাতেই এই ধাতুর প্রতিমা গড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। |