কলাবাগানে বস্তাবন্দি দেহ ছাত্রের, বিক্ষোভ
স্তাবন্দি অবস্থায় এক স্কুলছাত্রের ক্ষতবিক্ষত দেহ মিলল কলাবাগানে। সোমবার ভোরে পূর্বস্থলীর কালেখাঁতলা ১ পঞ্চায়েতের ফলেয়া গ্রামের ঘটনা। ক্ষুব্ধ স্থানীয় বাসিন্দারা উপযুক্ত পুলিশি তদন্তের দাবিতে দুপুর পর্যন্ত দেহ আটকে বিক্ষোভ দেখান। সন্ধ্যা পর্যন্ত অবশ্য পুলিশ খুনের কারণ সম্পর্কে কিছু জানাতে পারেনি।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ফলেয়া গ্রামের বাসিন্দা নির্মল বৈদ্যের তিন ছেলেমেয়ের মধ্যে সব থেকে ছোট বরুণ (৮)। পূর্বস্থলীরই সরংপুর গ্রামে মামারবাড়িতে থেকে পড়াশোনা করত সে। সেখানকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ত বরুণ। পুজোর ছুটি থাকায় বাড়ি ফিরেছিল সে। বাড়ির লোকজন জানান, রবিবার সকাল থেকে বাড়ির কাছেই খেলাধুলো করছিল বরুণ। বেলা ১১টা নাগাদ দোকান থেকে তেঁতুল কিনে এনে দিদি পূজার সঙ্গে ভাগ করে খায়। পূজা বলে, “তার পরে ভাই ঘুড়ি ওড়াতে বেরিয়ে যায়। দুপুর ১২টা নাগাদ বাড়ি ফিরে বলে,‘খিদে পেয়েছে’। ওকে রুটি-আলুভাজা খেতে দিই। তার পরে আবার যে খেলতে বেরিয়ে গেল, আর ফেরেনি।”
এই কলাবাগানেই মিলেছিল বস্তাবন্দি দেহ।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বরুণের বাবা নির্মলবাবু মাছ বিক্রেতা। রবিবার সকাল থেকে তিনি বাড়িতে ছিলেন না। মা যমুনাদেবীও খেত জমিতে ফসল দেখাশোনার কাজে গিয়েছিলেন। দুপুর ১টা নাগাদ তিনি বাড়ি ফেরেন। তার পরে বরুণের খোঁজ শুরু হয়। কিন্তু হদিস মেলেনি। বিকেল পর্যন্ত বাড়ি না ফেরায় এলাকায় মাইকে করে প্রচার করা হয়। সন্ধ্যায় পূর্বস্থলী থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন নির্মলবাবুরা। এ দিন সকালে গ্রামেরই একটি কলাবাগানে এলাকার কয়েক জন একটি মাছ ধরার ছেঁড়া জাল দিয়ে মুখ বাঁধা বস্তা দেখতে পান। সেটি খুলতেই বরুণের দেহ মেলে। তার মুখের নানা অংশ ও মাথায় ক্ষতচিহ্ন ছিল।
সকালে খবর পেয়ে পুলিশ গেলে গাড়ি আটকে বিক্ষোভ শুরু করেন স্থানীয় মানুষজন। তাঁদের দাবি, গত বছর দুর্গাপুজোর সপ্তমীর দিন এলাকার এক তিন বছরের শিশুর দেহ উদ্ধার হয়েছিল। তার আগের বছর কালীপুজো ও কার্তিক পুজোর মাঝামাঝি সময়ে নিখোঁজ হয় বছর সাতের এক বালক। এখনও তার কোনও খোঁজ নেই। পুলিশের তদন্তকারী কুকুর আনার দাবি জানান বাসিন্দারা। সকাল ১০টা নাগাদ তদন্তের জন্য কুকুর আসে। বস্তা ও ছেঁড়া জাল শোঁকার পরে সেই কুকুর এলাকার একটি খেত জমিতে যায়। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, মাঠের মাঝে ফসল ঘিরে রাখার জন্য টাঙানো জালের একটি অংশ ছেঁড়া। তদন্তকারী কুকুর অবশ্য এর বেশি কিছু করতে পারেনি।
শোকার্ত পরিজনেরা। সোমবার তোলা নিজস্ব চিত্র।
সকাল ১১টা থেকে বাসিন্দারা উপযুক্ত তদন্তের দাবিতে ফের বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। স্থানীয় বাসিন্দা অংশুমান অধিকারী, রবিন ঘরামিরা বলেন, “পরপর এমন ঘটনা কেন ঘটছে, তা পুলিশকে খুঁজে বের করতে হবে। অবিলম্বে খুনিকে গ্রেফতার করতে হবে।” দুপুর পৌনে ১টা নাগাদ বর্ধমানের অতিরিক্ত জেলাশাসক তরুণ হালদার, কালনার এসডিপিও ইন্দ্রজিৎ সরকার, পূর্বস্থলীর আইসি রঞ্জন সিংহ ও পূর্বস্থলী ২ বিডিও মোদাস্সর মোল্লা স্থানীয় মানুষজনের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। রবিবার দুপুরে বরুণকে কখন এবং কোথায় শেষ দেখা গিয়েছিল, তা কারও জানা থাকলে তা পুলিশকে জানানোর জন্য অনুরোধ করেন এসডিপিও। পুলিশ ও প্রশাসনের আধিকারিকেরা তদন্তের ব্যাপারে আশ্বাস দেওয়ার পরে দুপুর ২টো নাগাদ দেহ নিয়ে যাওয়া হয়।
ফলেয়া স্টেশন থেকে কিছুটা দূরেই এক তলা বাড়ি নির্মলবাবুর। এ দিন সকাল থেকেই সেখানে ছিল গ্রামবাসীদের ভিড়। দুঃসংবাদ পাওয়ার পরে যমুনাদেবী বারবার জ্ঞান হারাচ্ছেন। নির্মলবাবু বলেন, “আমি ছোট ব্যবসায়ী। কারও সঙ্গে শত্রুতা নেই। তা সত্ত্বেও কে এমন সর্বনাশ করল জানি না।” গত সাড়ে তিন বছর ধরে মামারবাড়িতে ছিল বরুণ। তার মাসতুতো দিদি মনিকা বৈদ্য বলে, “ভাইকে যে বা যারা খুন করেছে তাদের ধরে কড়া শাস্তি দিক পুলিশ।” এ দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত অবশ্য এই ঘটনায় পুলিশ অন্ধকারেই। জেলা পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা বলেন, “আগের কোনও ঘটনার সঙ্গে এ বারের ঘটনার কোনও যোগসূত্র আমরা পাইনি। তবে কারা ছেলেটিকে খুন করল তা জানতে তদন্ত চলছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.