টানা বর্ষণে কোচবিহার জেলার বিস্তীর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের জনজীবন পুরোপুরি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার প্রায় দিনভর জেলাজুড়ে তুমুল বৃষ্টি হয়েছে। তারমধ্যে কোচবিহার ও তুফানগঞ্জ পুরসভায় বৃষ্টির জেরে নিকাশি ব্যবস্থার বেহাল দশা ফের স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। দিনভর নাকাল হন ওই দুই পুরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডের বাসিন্দারা। এদিন বৃষ্টির মধ্যে বাজ পড়ে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। তুফানগঞ্জ থানার ঝলঝলি এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে। পুলিশ জানায়, মৃতের নাম মঙ্গল শীল (৪৫)। কালজানি নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে বাজ পড়ে তিনি জখম হন। টানা বৃষ্টিতে সকাল থেকেই কোচবিহার শহরের রাস্তাঘাট ছিল প্রায় শুনশান। দোকানপাটও অন্য দিনের তুলনায় দেরিতে খুলেছে। বৃষ্টির জল জমে যাওয়ায় শহরের বিস্তীর্ণ এলাকায় পথচারীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। অমরতলা, বাদুরবাগান, সুভাষপল্লি, রবীন্দ্রনগর, কলাবাগান, ব্যাঙচাতরা রোড, স্টেশন রোডের বিভিন্ন অংশে পাকা রাস্তার জল জমে যায়। শহরের অন্যতম ব্যস্ততম রাস্তা কেশব রোডের একাংশেও ছিল জলের স্রোত। পুলিশ লাইনের মাঠ, রাসমেলার মাঠ জুড়েও থইথই জল দেখা গিয়েছে। কোচবিহার পুরসভার বিরোধী দলনেতা সিপিএমের মহানন্দ সাহা বলেন, “গত বর্ষার পরেও পুরসভা নিকাশির হাল ফেরাতে পরিকল্পনামাফিক কোনও কাজ করেনি। গড়িমসির খেসারত দিতে হচ্ছে বাসিন্দাদের।” আর তৃণমূলের পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান আমিনা আহমেদ অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, “বর্ষার পর সমস্ত হাইড্রেন সাফাই করা হয়েছে। ওয়ার্ডেও ড্রেন সাফাইয়ের কাজ হচ্ছে। ব্যাপক বৃষ্টি হওয়ায় কিছু এলাকায় জল জমেছে। তবে তা আগের মত নয়।” নিকাশির বেহাল ছবি ছিল জেলার তুফানগঞ্জ পুরসভা এলাকাতেও। শহরের নিউটাউন এলাকার মেইন রোডের ওপর দিয়ে বুধবার সকাল থেকে ছিল জল। জেটি রোড, বিবাদী বাগ রোড, রবীন্দ্রনগর, বীনাপানি রোড, নিবেদিতা রোড, বিদ্যাসাগর রোড, বাজার চত্বরের অধিকাংশ বাড়িতে জল জমে যায়। লম্বাপাড়া, সাতভাই পাড়া, সত্যজি সরণি, হাসপাতাল পাড়ার মত অন্যান্য রাস্তার ওপরেও বিক্ষিপ্ত ভাবে ড্রেন উপচে জল জমে যায়। তুফানগঞ্জ পুরসভার তৃণমূলের বিরোধী দলনেতা বিশ্বজিৎ দে বলেন, “শহরই টানা বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত। অসংখ্য বাড়িতেও জল জমে গিয়েছে। বহু এলাকায় রাস্তার ওপরেও জল দাঁড়িয়েছে। পুরসভা কর্তৃপক্ষ নিকাশির হাল ফেরাতে আখেরে কোনও কাজ না করার জন্যই ওই পরিস্থিতি হয়েছে।” তবে পুরসভার সিপিএম চেয়ারম্যান সুভাষ ভাওয়াল অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, “প্রবল বৃষ্টির জন্য শহরে ওই পরিস্থিতি হয়। কিছু সময়ের মধ্যে জল নেমেও গিয়েছে। নিকাশি চাঙা করতে পুজোর আগে ফের সমস্ত ড্রেন সাফাই করার কাজ শুরু করব।” গত ২৪ ঘন্টায় কোচবিহার সদরে ১১০ মিমি, তুফানগঞ্জে ১৫৩ মিমি, দিনহাটায় ১৩ মিমি ও মাথাভাঙায় ৭৪ মিমি বৃষ্টি হয়েছে। টানা বৃষ্টির জেরে তোর্সা, মানসাই, রায়ডাক, তিস্তা-সহ জেলার বিভিন্ন নদীর জলও বাড়তে শুরু করেছে। |