একে রাস্তায় বেসরকারি বাস নেই। সরকারি বাসও হাতে গোনা। বেসরকারি ধমর্ঘটে ভোগান্তি চলছেই নিত্যযাত্রী থেকে শুরু করে বাসিন্দাদের। তার উপরে কোচবিহার শিলিগুড়ি রুটের একটি প্যাসেঞ্জার ট্রেন বাতিল করায় বুধবার নিত্যযাত্রীদের ভোগান্তি চরমে উঠল। একটি মাত্র ট্রেন বামনহাট-শিলিগুড়ি প্যাসেঞ্জারে ঠাসাঠাসি করে কোনও মতে বাদুড়ঝোলা হয়ে গন্তব্যে পৌছতে হয়েছে যাত্রীদের। কিন্তু নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে নেমেও নিস্তার মেলেনি। অটো পরিষেবা বন্ধ রেখে তৃণমূল প্রভাবিত শ্রমিক সংগঠনের সমর্থক চালকরা মিছিলে যোগ দেওয়ায় শিলিগুড়ি এনজেপি থেকে হেঁটে অথবা বাড়তি ভাড়া দিয়ে রিকশায় তাঁদের গন্তব্যে পৌছনোর চেষ্টা করতে হয়েছে। উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের আলিপুর দুয়ার ডিভিশনের কমার্শিয়াল ম্যানেজার অলোকানন্দ সরকার বলেন, “মঙ্গলবার রানিনগরের কাছে মালগাড়ির কয়েকটি বগি লাইনচ্যুত হয়েছে। লাইনের কাজ চলছে। তাই কোচবিহার-মালদহ প্যাসেঞ্জার ট্রেনটি বাতিল করা হয়। কিন্তু বামনহাট ট্রেনটি চলেছে।” |
এ দিকে বেসরকারি বাস ধর্মঘট উঠে যাওয়ার কোনও ইঙ্গিত এ দিনও মেলেনি। উত্তরবঙ্গের ইন্টার ডিস্ট্রিক্ট বাস ও মিনিবাস ওনার্স অ্যসোসিয়েশনের সম্পাদক প্রণব মানি বলেন, “এখনও জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ অথবা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আলোচনায় বসার প্রস্তাব আসেনি। এমন কী রাস্তা মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। আমাদের ধর্মঘট চলবে।” দু’টি প্যাসেঞ্জার ট্রেনের একটি না-থাকায় বুধবার নিউ ময়নাগুড়ি, জলপাইগুড়ি রোড, রানিনগর, বেলাকোবা ও আমবাড়ি ফালাকাটা স্টেশনে ছিল যাত্রীদের ভিড়। উপচে পড়া যাত্রী নিয়ে কোচবিহারের বামনহাট থেকে শিলিগুড়ি জংশনগামী ট্রেনটি যে স্টেশনে দাঁড়িয়েছে সেখানেই হুড়োহুড়ি পড়েছে। নিরুপায় হয়ে অফিস যাত্রীরা ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনের দরজার হাতল ধরে ঝুলে রওনা দেন। বেসরকারি বাস ধর্মঘটের তৃতীয় দিনেও জাতীয় সড়কে যানজট অব্যহত ছিল। রানিনগর এলাকা থেকে পণ্যবোঝাই ট্রাকের লাইন টপকে ছোট যানবাহনগুলি চলাচল করতে পারেনি। ওই পরিস্থিতিতে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে নিত্যযাত্রী ও ব্যবসায়ীরা ছোট ট্রাকগুলিতে চড়ে বসেন। ময়নাগুড়ি, ধূপগুড়ি, জলপাইগুড়ি থেকে কয়েকশো শিক্ষক-শিক্ষিকা, অফিস কর্মী ও ব্যবসায়ী এ ভাবে ফাটাপুকুর, রানিনগর, তালমা, ফুলবাড়ি, ভোটপট্টি, চ্যাংরাবান্ধায় যাতায়াত করতে বাধ্য হন। বহু যাত্রীকে রাধিকাপুর-কাটিহার রুটের তিন জোড়া প্যাসেঞ্জার ট্রেনে গাদাগাদি করে যেতে দেখা যায়। বহু যাত্রী সরকারি বাসের ভিতরে জায়গা না পেয়ে বাসের ছাদে চেপে রায়গঞ্জ থেকে কালিয়াগঞ্জ, ডালখোলা, হেমতাবাদ, ইটাহার, করণদিঘি ও ইসলামপুরে যান। |
সরকারি কর্মী, বহু স্কুল শিক্ষক এ দিন রায়গঞ্জের শিলিগুড়িমোড় থেকে ভুটভুটি ও ট্রাকে চেপে কালিয়াগঞ্জ ও ইসলামপুরে যান। উত্তর দিনাজপুর জেলা বাস, মিনিবাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন সম্পাদক অশোক চন্দ বলেন, “সরকার জাতীয় সড়ক সংস্কার ও ভাড়া বৃদ্ধির আশ্বাস দিয়েছে বলে শুনেছি। ছয় জেলার বাসমালিকরা আলোচনা করেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত হবে।” জলপাইগুড়ি, শিলিগুড়ি, কোচবিহার সর্বত্র একই ছবি। সন্ধ্যায় এনজেপি থেকে দেরিতে ট্রেন ছাড়ায় জলপাইগুড়ি স্টেশন-সহ জেলার বিভিন্ন স্টেশনে যাত্রীদের লম্বা লাইন দেখা যায়। |