|
|
|
|
|
বিদ্যুৎ, ফোনের ধাঁচে বাসেও
ভাড়া-কমিশন চান মালিকেরা
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
|
বিদ্যুৎ, টেলিফোন বা বিমার মতো পশ্চিমবঙ্গে গণ পরিবহণের মাসুল নির্ধারণে নিয়ন্ত্রণ কমিশন চালু করার দাবি তুললেন বেসরকারি বাস-মালিকেরা। বুধবার এ ব্যাপারে তাঁরা একপ্রস্থ আলোচনা করেছেন রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্রের সঙ্গে। মালিকপক্ষ ও প্রশাসনের একাংশের ধারণা, এমন একটি কমিশন থাকলে সরকারি হস্তক্ষেপ বাঁচিয়ে ভাড়া নির্ধারণ সম্ভব হবে, বার বার সমস্যাও এত জটিল হবে না।
এ দিন সরকারের সঙ্গে বৈঠকের পরে মালিকদের তরফে বাস-মিনিবাস ধর্মঘট স্থগিত রাখার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। আলোচনার জন্য প্রশাসনকে ১০ দিন সময় দিয়েছেন তাঁরা। তবে ট্যাক্সি সংগঠনগুলি পূর্ব নির্ধারিত সূচি অনুযায়ীই আজ, বৃহস্পতিবার থেকে ৭২ ঘণ্টার ধর্মঘটে নামছে।
বিদ্যুৎ-ফোনের ধাঁচে বাস-ট্যাক্সি-অটো ইত্যাদির ভাড়া নির্ধারণে নিয়ন্ত্রণ কমিশন গঠন প্রসঙ্গে জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বাস সিন্ডিকেটসের যুগ্ম সম্পাদক তপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এ দিনের প্রাথমিক আলোচনায় ঠিক হয়েছে, প্রস্তাবিত নিয়ন্ত্রণ কমিশনে সরকার ও বাস-মালিক, দু’পক্ষের প্রতিনিধি থাকবে। সংগঠনের তরফে বৃহস্পতিবার এ ব্যাপারে লিখিত আবেদন মহাকরণে পাঠানো হবে।” প্রস্তাবটি নিয়ে রাজ্য পরিবহণ দফতরের অন্দরেও আলোচনা শুরু হয়েছে বলে মহাকরণ-সূত্রের খবর।
দেশে বিদ্যুৎ ও টেলিফোন কলচার্জের গ্রাহক-মূল্য নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব যথাক্রমে বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (জাতীয় ও রাজ্য পর্যায়ে) ও টেলিকম রেগুলেটরি অথরিটি (ট্রাই)-র হাতে। বিমাক্ষেত্রেও গ্রাহকমূল্যে নজরদারির জন্য রয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এগুলি স্বয়ংসম্পূর্ণ, এবং তাদের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। যেমন, কয়লার দাম চড়লে বিদ্যুতের ‘ফুয়েল সারচার্জ’ যে বেড়ে যায়, সেটা নিয়ন্ত্রণ কমিশনের সম্মতিক্রমেই হয়ে থাকে। উল্লেখ্য, আগে রাজ্য বিদ্যুৎ দফতরই বিদ্যুতের মাসুল নির্ধারণ করত। তাদের ধার্য মাসুল-হার ঘিরে জলঘোলাও হতো হামেশা। সমস্যার সুরাহায় রাজ্যে রাজ্যে বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণ কমিশন গড়া হয়। কেন্দ্রীয় স্তরেও বিদ্যুৎ-মূল্যে নজরদারির জন্য তৈরি হয় নিয়ন্ত্রণ কমিশন।
এখন রাজ্যের বেসরকারি বাস-মালিকেরা তো বটেই, পরিবহণ-কর্তাদেরও অনেকে মনে করছেন বাস-মিনি-ট্যাক্সি-অটোর ক্ষেত্রেও এমন ব্যবস্থা থাকলে ভাড়াবৃদ্ধি নিয়ে বার বার অচলাবস্থার মুখোমুখি হতে হবে না। আমজনতার ভোগান্তি কমবে। এতে বাস-ট্যাক্সি-অটোকে অনেকটা শাসনের শৃঙ্খলাতেও বাঁধা যাবে বলে এই মহলের আশা। উদাহরণ হিসেবে পরিবহণ দফতরের একাধিক কর্তার বক্তব্য: অটোর ভাড়ায় রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ নেই, সেখানে শ্রমিক সংগঠনগুলোর হাতেই রাশ। জ্বালানির দর বাড়লে বিভিন্ন অটো-রুট নিজেদের মতো ভাড়া বাড়িয়ে নেয়। কমিশন হলে তারাই ভাড়া ঠিক করে দেবে, ‘নৈরাজ্যের’ দায়ও সরকারের উপরে বর্তাবে না। বেঙ্গল বাস সিন্ডিকেটের সহ-সভাপতি দীপক সরকারের মন্তব্য, “একমাত্র এমন একটা কমিশনই পরিবহণকে বাঁচাতে পারে। বাম আমলে এ নিয়ে কথা হলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি।”
এ তো গেল বেসরকারি পরিবহণ। রাজ্যে পরিবহণ-মূল্য নিয়ন্ত্রক কমিশন হলে তা কি সরকারি বাস-ট্রামের ভাড়াও বেঁধে দেবে? ঠিক যেমন সরকারি টেলিকম সংস্থারও কলচার্জ নিয়ন্ত্রণ করে ট্রাই? কিংবা বেসরকারি বিদ্যুৎসংস্থার দরের লাগামও থাকে বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের হাতে?
মহাকরণের খবরে তেমন ইঙ্গিত মেলেনি। বরং সূত্রের বক্তব্য, রাজ্য সরকারের সম্মতি ছাড়া সরকারি পরিবহণের ভাড়া বাড়ানোর প্রশ্ন নেই। অর্থাৎ খরচ বাড়লে বেসরকারি বাসের ভাড়া হয়তো বাড়তে পারে, কিন্তু সরকারি বাসের ভাড়া একই থাকবে।
আর তা হলে সরকারি পরিবহণ নিগমগুলোর ঘাড়ে লোকসানের বোঝা আরও ভারী হয়ে চেপে বসবে বলে মনে করছেন দফতরের অফিসারদের একাংশ। বস্তুত ডিজেলের সাম্প্রতিক মূল্যবৃদ্ধির পরে বাস-মিনি-ট্যাক্সির ভাড়া বাড়ানো ছাড়া যে উপায় নেই, সে সম্পর্কে পরিবহণ-কর্তারা এক রকম নিশ্চিত। এমনকী, পরিবহণ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গড়ে দেওয়া ‘মন্ত্রিগোষ্ঠী’র কোনও কোনও সদস্যও তা মানছেন। যদিও মুখ্যমন্ত্রী এখনও তাঁর সিদ্ধান্ত জানাননি। বরং এ দিন মহাকরণে মমতার হুঁশিয়ারি, “গায়ের জোর দেখালে বাসের ভাড়া বাড়ানো হবে না। মালিকেরা তিন দিন ধরে বাস বন্ধ করে রেখেছে! মানুষকে হয়রান করছে!”
অন্য দিকে বেসরকারি বাস-মিনিবাস মালিকদের সংগঠনের দাবি, সরকারের দিক থেকে ভাড়াবৃদ্ধির ‘নিশ্চিত আশ্বাস’ পেয়েই ধর্মঘট স্থগিত রাখা হচ্ছে। জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বাস সিন্ডিকেটস, বেঙ্গল বাস সিন্ডিকেট এবং মিনিবাস অপারেটর্স কো-অর্ডিনেশন কমিটির নেতারা এ দিন পরিবহণমন্ত্রী ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রিগোষ্ঠীর অন্যতম সদস্য তথা শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকের পরে মালিকপক্ষের তরফে বলা হয়, “ভাড়া না-বাড়ালে বাস চালাতে পারব না। সরকারের কাছে নিশ্চিত আশ্বাস পাওয়ায় আমরা দশ দিনের জন্য ধর্মঘট তুলে নিচ্ছি।” পরে পরিবহণমন্ত্রী বলেন, “বাস-মালিকেরা রাজনৈতিক লড়াইয়ের মধ্যে নেই। তাই আপাতত ওঁরা দশ দিন অপেক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।” ভাড়াবৃদ্ধির প্রকাশ্য আশ্বাস না-দিলেও মদনবাবুর বক্তব্য, “ওঁদের অসুবিধে নিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে বলেছি। শ্বেতপত্র পেলে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে মন্ত্রিগোষ্ঠী আলোচনায় বসবে। এখনই ভাড়াবৃদ্ধির আলোচনায় না-গিয়ে কী ভাবে বাস-মিনিবাসকে বাঁচানো যায়, খরচ কী ভাবে কমানো যায়, তা নিয়ে কথা বলব।”
ট্যাক্সি সংগঠনগুলি অবশ্য এ দিনের বৈঠকে আসেনি। ক্যালকাটা ট্যাক্সি ড্রাইভার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতা বিমল ঘোষ বলেন, “ছ’টি ট্যাক্সি সংগঠন বৃহস্পতিবার থেকে বাহাত্তর ঘণ্টার ধর্মঘটে সামিল হবে।” বেঙ্গল ট্যাক্সি অ্যাসোসিয়েশনের বিমল গুহ জানিয়ে দেন, তাঁরাও ধর্মঘটে নামছেন। তবে আজ দুপুরে পরিবহণমন্ত্রী ট্যাক্সি সংগঠনগুলিকে ফের আলোচনায় ডেকেছেন। বৈঠকের পরে পরবর্তী সিদ্ধান্ত হবে।
|
দাঁড়িপাল্লা |
খাত |
দৈনিক ব্যয়* |
ডিজেল (৭০ লিটার) |
৩৫০০ |
মোবিল (দু’মাস অন্তর ১৮ লিটার) |
৫৫ |
পথ-কর (তিন মাসে ১৪৫০) |
১৬ |
বিমা (বছরে ৪৩,০০০) |
১১৭ |
কিস্তি (মাসে ২২,০০০) |
৭৩৩ |
চাকা (ভাড়া) |
৩০০ |
জরিমানা |
২০০ |
খুচরোর বাট্টা |
২৫০ |
রক্ষণাবেক্ষণ (মাসে ৫,০০০) |
১৬৬ |
হেল্পার |
১৫০ |
কন্ডাক্টর |
৬০০ |
চালক |
৬০০ |
সিন্ডিকেট |
৫০ |
বিমা-বহির্ভূত দুর্ঘটনা |
১০০ |
এক্সগ্রাসিয়া (বছরে ৮,০০০) |
২২ |
মোট |
৬,৮৫৯ |
দৈনিক আয়* যাত্রী-ভাড়া বাবদ ৫,৭০০ (বাসপিছু গড় যাত্রী ৬২৫ জন) |
* ডিজেল-মূল্য বৃদ্ধির পরে গড় হিসেব, অঙ্ক টাকায়
সূত্র: জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বাস সিন্ডিকেটস |
|
|
|
|
|
|