সিঙ্গল স্ট্রোকে বাইক স্টার্ট দিয়ে শহর দাপিয়ে বেরানো ছেলেদের দলটা এসে দাঁড়াল স্কুলের ঠিক সামনে। এক কানে দুল, অন্য কান থেকে ঝুলে আছে হেডফোনের তার পরনে বারমুডা নয়তো থ্রি কোয়াটাসর্। আর পায়ে দামি হাওয়াই চপ্পল রোজ স্কুল শুরুর আগে ও ছুটির পরেই স্কুলের সামনেটা ওদের দখলে।
ছাত্রীদের উদ্দেশ্যে কখনও তীক্ষ্ণ শিস, কখনও চটুল হিন্দি গান, কখনও বা নজর কাড়তে আরও কিছু ‘বাহাদুরি’ দেখানো ক্রমশ বেড়ে চলা এই ‘রোমিও’দের দৌরাত্ম্য রুখতে নবদ্বীপ শহরাঞ্চলে টাস্ক ফোর্স গড়ার সিদ্ধান্ত নিল জেলা পুলিশ। নবদ্বীপের সমস্ত মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের প্রধানশিক্ষকদের নিয়ে একটি বৈঠকও হয় নবদ্বীপ থানায়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন আরপিএফ ও জিআরপিএফের আধিকারিকেরাও। নবদ্বীপ জাতীয় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তারকনাথ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘স্কুল শুরুর মুখে এবং ছুটির সময়ে সমস্যাটা সব থেকে বেশি চোখে পড়ে মেয়েদের স্কুলের সামনে। অবাঞ্ছিত সাইকেল মোটরসাইকেলের ভিড়। ক্রমশ আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। সম্প্রতি আমাদের স্কুল সংলগ্ন মাঠের ঝোপঝাড় পরিস্কার করতে গিয়ে প্রচুর পরিমাণে খালি মদের বোতল পাওয়া গিয়েছে’’ প্রায় একই অভিমত প্রকাশ করেন নবদ্বীপ সারস্বত বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষিকা ছবি বিশ্বাস তিনি বলেন, ‘‘আমাদের স্কুলের ঠিক পাশেই একটি ভাঙা বাড়ি আছে সেখানে নিয়মিত জুয়ার আসর বসে স্কুলের সামনে অচেনা ছেলেদের ভিড় প্রায় রোজদিনের চেনা চিত্র।’’ নবদ্বীপ তারাসুন্দরী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষিকা চিত্রা মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমাদের স্কুলের এক দিকে নবদ্বীপ বিদ্যাসাগর কলেজ আর এক দিকে হিন্দু স্কুল ও বকুলতলা উচ্চ বিদ্যালয়। এমনিতেই সরু রাস্তা। স্কুল শুরুর সময় ছাত্রী, শিক্ষিকা, অভিভাবকদের ভিড়ে যানজট। সঙ্গে অসংখ্য সাইকেল ও বাইকের ভিড়। বাধ্য হয়ে সাড়ে দশটা থেকে এগারোটা পর্যন্ত স্কুলের দিদিমনিরা সেই ভিড় নিয়ন্ত্রণ করেন।’’ নবদ্বীপ বকুলতলা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রবি বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘চারপাশে যা দেখছি, শুনছি তাতে রীতিমত আঁতকে উঠতে হয়। স্কুলগুলোর সামনে রোজ যা চলে তা সত্যিই খুব উদ্বেগের।”
আইসি শঙ্কর কুমার রায়চৌধুরী বলেন,‘‘ পড়ুয়াদের বিশেষ করে ছাত্রীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে এবং শহরজুড়ে সার্বিক শৃঙ্খলা বজায় রাখতে আমরা একটা টাস্ক ফোর্স গড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি কারণ আমি নিজে শহরের বিভিন্ন অঞ্চল ও পার্কগুলো ঘুরে দেখে যা অভিজ্ঞতা হয়েছে তাতে দ্রুত একটা ব্যবস্থা নেওয়া খুব জরুরি এই ব্যাপারে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের সঙ্গে বৈঠকে খোলামেলা আলোচনাও করা হয়েছে সকাল ন’টা থেকে এগারোটা এবং বিকেল তিনটে থেকে পাঁচটা পর্যন্ত নবদ্বীপের বিভিন্ন স্কুল কলেজের সামনে চলবে। নজর রাখবে আরপিএফ ও জিআরপি বিধি না মেনে বাইক চালানোর ক্ষেত্রেও পুলিশ কড়া ব্যবস্থা নেবে।’’
পুলিশের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন নবদ্বীপের বিধায়ক তৃণমূলের পুন্ডরীকাক্ষ সাহা তিনি বলেন,‘‘ পুলিশ সমাজের অভিভাবক। তারা কঠোর হলেই শৃঙ্খলা বজায় রাখা সহজ হয়।’’ |