মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি। কথা বলতে পারেন না। আকারে ইঙ্গিতে কী বোঝান, তা-ও সব সময়ে বোঝা যায় না। গত পনেরো দিন ধরে তাঁর ঠিকানা পঞ্চায়েত ভবনের বারান্দার একটি কোণ।
কিন্তু চারপাশে ডেঙ্গির উৎপাত। অসহায় ওই মধ্যবয়সী লোকটি তার মধ্যে বিনা মশারিতেই থেকে যাবেন?
মূলত এই চিন্তা থেকেই এগিয়ে এসেছিলেন মানারুল ইসলাম, জসীমউদ্দিন, হাফিজুল শেখের মতো বেলডাঙার কয়েকজন বাসিন্দা। তাঁরাই ওই মধ্যবয়সী ব্যক্তির জন্য মশারির ব্যবস্থা করেছেন। তাঁর খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থাও করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, ওই ব্যক্তির বাড়ি কোথায় তার খোঁজ শুরু হয়েছে। তাঁকে তাঁর আত্মীয় স্বজনের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য নিজেরাই খরচ করে বেশ কয়েকটি জায়গায় গিয়েছেন ওই যুবকেরা। |
দিন পনেরো আগে নওদা বাসস্ট্যান্ডের প্রতীক্ষালয়ে ওই ব্যক্তিকে বসে থাকতে দেখা যায়। প্রথমে কেউ গুরুত্ব দেননি। পরে বোঝা যায় তিনি মূক। তখন এলাকার কিছু তরুণ এগিয়ে যান তাঁকে সাহায্য করতে। রবিবার তাঁরাই স্থানীয় এক মূক ও বধির যুবককে বলে ওই ব্যক্তির সঙ্গে আকার-ইঙ্গিতে ‘কথা বলে’ তাঁর বাড়ি কোথায় বোঝার চেষ্টা করতে। সেই চেষ্টায় বোঝা যায়, ওই যুবকের বাড়ি সম্ভবত জলঙ্গিতে। তাঁকে রবিবার সেখানে নিয়ে যাওয়াও হয়। তারপরে নিয়ে যাওয়া হয় ডোমকলে। কিন্তু দু’টি থানাতেই কোনও নিখোঁজ ডায়েরি হয়নি। এলাকার কোনও পরিচিতও পাওয়া যায়নি। সোমবার নওদার বিডিও মানস মণ্ডল বলেন, “আমি বিস্তারিত খোঁজ নিয়েছি। আরও খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।”
মানারুল বলেন, “নওদা বাসস্ট্যান্ডে ওই ব্যক্তি অসহায় অবস্থায় বসেছিলেন। জ্বরও ছিল। তাই আমরাই তাঁকে নিয়ে গিয়েছিলাম স্থানীয় একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে।”
তিনি বলেন, “মশা কামড়াতে পারে বলে আমরা তাঁর একটা মশারির ব্যবস্থা করেছি।” মানারুল স্থানীয় নওদা উচ্চ বিদ্যালয়ে করণিকের কাজ করেন। স্থানীয় একটি চায়ের দোকানের মালিক হাফিজুল শেখ বলেন, “ওই ব্যক্তির পকেটে একটা পাঁচশো টাকার নোট ছিল। সেটা তাঁর পকেটেই রয়েছে।” জসিমউদ্দিনের বক্তব্য, “ওই ব্যক্তিকে তাঁর আত্মীয় স্বজনের হাতে তুলে না দেওয়া পর্যন্ত শান্তি পাচ্ছি না।”
নওদা পঞ্চায়েতের প্রধান সিপিএমের গৌতম হালদার বলেন, “কিছু তরুণ যে নিজে থেকে এগিয়ে গিয়ে তাঁকে সাহায্য করছেন, এটা খুবই ভাল কথা। এই মানবিক মুখটাই আমরা দেখতে চাই।” নওদার বিধায়ক কংগ্রেসের আবু তাহের খান ওই ব্যক্তিকে তাঁর বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিলেন। তাঁকে নতুন জামাও দিয়েছেন। তিনি বলেন, “ওই ব্যক্তির পরিচয় জানতে সব রকম চেষ্টা হচ্ছে।” |