জলায় পদ্ম, হাসি ফুটেছে রঘুনাথগঞ্জের
ত কয়েক দিনের বৃষ্টি হাসি ফুটিয়েছে পদ্মচাষিদের মুখে। লাল, সাদা পদ্মগুচ্ছে ভরে উঠেছে পুকুর। গোড়ার দিকে জলের অভাবে যে পোকার আক্রমণ শুরু হয়েছিল, গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে পুকুর জলে ভরে ওঠায় সে পোকার উপদ্রবও অনেকটাই কমেছে। এর ফলে গত বার পদ্ম চাষের ক্ষতি এবারে অনেকটাই সামলে উঠে ফল আশার মুখ দেখতে পাবেন চাষিরা।
জঙ্গিপুরের রঘুনাথগঞ্জ-১ ব্লকের জামুয়ার পঞ্চায়েতের ৮টি গ্রামের অন্তত ৩৫টি পুকুরে পদ্মফুলের চাষ একটি অন্যতম প্রধান রুজি। অন্তত ৬০টি পরিবারের কাছে চৈত্র মাসের শেষ থেকে আশ্বিনের শেষ পর্যন্ত পদ্ম চাষই প্রধান ভরসা। শুধু জঙ্গিপুরের শহর বাজারেই নয়, এই সব পুকুরের পদ্মফুল যায় বহরমপুর, কৃষ্ণনগর থেকে হওড়া পর্যন্ত। গত ৩ মাস ফুলের দেখা মেলেনি সেভাবে। তাই পদ্মচাষিদের অনেকেরই মাথায় হাত পড়েছিল। কিন্তু গত দিন দশেকের বর্ষণে পুকুরে জল যত বেড়েছে, হু-হু করে বেড়েছে পদ্মের ডাঁটি। আর এখন সব পুকুরেই যে দিকে চায় শুধুই পদ্ম। খুশি চাষিরাও। মণ্ডলপুর গ্রামের বাসিন্দা কৃষ্ণ ফুলমালির প্রধান জীবিকা পদ্ম চাষ। নিজস্ব পুকুর বা জলাশয় নেই তার। গ্রামেরই অন্যের পুকুরে লিজ নিয়ে প্রতি বারের মত এভারেও চাষ করেছেন পদ্মফুলের। তাঁর কথায়, “ভরা বর্ষায় এবারে সে ভাবে বৃষ্টি হয়নি। ফলে বছরের প্রথম দিকে পদ্ম সে ভাবে মেলেনি। তাই এবারে পদ্ম নিয়ে আশঙ্কায় ছিলাম। কিন্তু গত ক’দিনের অফুরান বৃষ্টিতে বাড়-বাড়ন্ত ঘটেছে পদ্মের। গোটা পুকুর জুড়ে পদ্মের গুটি।” তাঁর কথায়, “পরে বৃষ্টি হওয়ায় এবারে পদ্মফুল হয়েছে বেশ আঁটোসাটে। এবং আকারে বড়। সংখ্যায় গত বছরের প্রায় দুই গুণ। কিন্তু উৎপাদন বেশি হওয়ায় বাজারে সেভাবে দাম মিলবে না।” এখন স্থানীয় বাজারে শতকরা পদ্মফুলের দাম ১০০ টাকা। খুচরো ২টাকা। পদ্মের উৎপাদনের হার এবারে যতটা বেড়েছে তাতে বাজারে দাম সেভাবে বাড়বে না, এমনটাই আশঙ্কা চাষিদের।
বছর বাইশের বুলটি ফুলমালির পরিবারের পদ্ম চাষই নির্ভর। বুলটির কথায়, “পদ্মের ভাল চাষ হলে প্রতি দিন পুকুর থেকে ৩০০ থেকে ৪০০টি পদ্মফুল মেলে। বিশ্বকর্মা পুজোর দিনে ভালই বিকিয়েছে। যা তাতে ভালই পদ্ম মিলবে এবারের পুজো থেকে কালীপুজো পর্যন্ত।”
সব চাষিই এবারে দুটো পয়সার মুখ দেখবে। পদ্ম বাজারে মিলবেও সস্তায়। জামুয়ার জয়দেব ফুলমালির কথায়, “এই এলাকায় পুকুরগুলিতে পদ্মচাষ হয় পরিকল্পনাহীন ভাবে। আমরা যে পদ্ম চাষ করি তা অভিজ্ঞতার জোরে। পোকার আক্রমণ হলে তাতে কীটনাশক দেওয়া যায় না, কারণ গৃহস্থের পুকুরে থাকা মাছের ক্ষতি হবে তাতে। এছাড়াও রাসায়নিক কীটনাশক ফুল চাষে ব্যবহার করা হয় না। তাবে এবারে প্রথম দিকে জলের অভাবে কিছুটা পোকা দেখা দিলেও ক্রমাগত গত ক’দিনে বৃষ্টি ও রোদের ফলে সে পোকা কমেছে। বরং ফুলের আকার বেড়েছে এবং তা হয়েছে আরও আঁটোসাটো।
তবে পদ্মচাষে খরচ বলতে সে ভাবে কিছু নেই। কিশোর ফুলমালিবলেন, “রাতে জোগানো, পুকুর থেকে ফুল তোলা, বাজারে পাঠানোএসব কাজ নিজেরাই করি বলে মজুরি লাগে না। বাড়ির মেয়েরাও তাতে সাহায্য করে থাকে। এমনকী কখনও কখনও বাজারে ফুল বিক্রির জন্য পাঠানো হয় বাড়ির মেয়েদের। ফলে পদ্মচাষ যথেষ্ট লাভজনক।”
মুর্শিদাবাদের উদ্যান পালন দফতরের সহ-অধিকর্তা শুভদীপ নাথ বলেন, “প্রথম দিকে জলের টান ছিল। পরে হঠাৎ বৃষ্টি হওয়ার কারণেই পদ্ম এতটা হাঁফালো হয়ে উঠেছে। সব পুকুরেই এবার ব্যাপক সংখ্যায় ভরাট সাইজের পদ্ম দেখা যাচ্ছে। কিন্তু পুজোর এখনও মাস খানের দেরি। সেক্ষেত্রে এই সময়ের জন্য পদ্ম কোনও হিমঘরে রাখার ব্যবস্থা নিলে ভাল হবে। আ পোকার উপদ্রব দেখা দিলে নিম তেল জাতীয় কীটনাশক ব্যবহার করলে পুকুরের মাছও বাঁচবে। রক্ষা পাবে পদ্মও।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.