পেচকির জন্মদিন বলে কথা!
নিমন্ত্রিতের তালিকাটা তাই নেহাত ছোট নয়! আত্মীয়স্বজনেরা তো ছিলেনই। তাঁদের সঙ্গেই পাত পেড়ে খেল ওরা। ‘ওরা’ অর্থাৎ তেতাল্লিশটি মার্জার। সঙ্গে গোটা কুড়ি সারমেয়। লেজ নাড়তে নাড়তে লুচি, মাংস, মিষ্টি, দই নিমেষে সাবাড়। আঙুল উঁচিয়ে নির্দেশ দিচ্ছিলেন গৃহকর্তা। পেচকির জন্মদিনে অতিথি আপ্যায়নে যেন ত্রুটি না থাকে সতর্ক নজর তাঁর।
পেচকির পরিচয়টা একটু দেওয়া যাক। পেচকি হাওড়ার ডোমজুড়ের মহিয়াড়ীর চক্রবর্তী বাড়ির অন্যতম সদস্য। পেচকি সাদা রঙের ‘নাদুস-নুদুস’ একটি বিড়াল। তার মতো আরও অনেক বিড়ালই চক্রবর্তী বাড়িতে থাকে। ওদের জন্য অমল চক্রবর্তীর বাড়ির নামটাই হয়ে গিয়েছে ‘ক্যাটস্ হাউজ’। যে কেউ একডাকে চেনেন। পেচকি, পিঙ্কু, মুনিয়া, মদন, ফুলিয়াদের ‘মিউ মিউ’ ডাকে আপ্লুত বাড়ির সকলে। তবে পেচকির কদর একটু আলাদা! কেন না, সে সকলের বড়। তাই অমন ঘটা করে জন্মদিন পালন! |
গত তিরিশ বছর ধরে রাস্তার বিড়াল পালন করা যেন নেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে অমলবাবুর। স্ত্রী-ছেলেমেয়েও যত্নআত্তিতে ফাঁক রাখেন না। ওদের মতো ভাল ‘ছেলেমেয়ে’ নাকি আর হয় না! পোষ্যদের সম্পর্কে এমনই দরাজ শংসাপত্র বাড়ির লোকেদের। স্থানীয় রানিবালা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক অমলবাবু বলেন, “ছোটবেলা থেকেই পশুপাখির প্রতি আমার টান। স্ত্রী-ছেলেমেয়েরও তাই।” তিনি জানান, গত বছর বর্ষায় এক জন একটি বিড়ালকে পাতকুয়োয় ফেলে দিয়েছিলেন। ছেলে অভিজিৎ কুয়োয় নেমে তাকে উদ্ধার করেন। ডাক্তার দেখিয়ে সুস্থ করেন। বিড়ালটি এখন বাড়ির সদস্য। মাস ছ’য়েক আগে একটি কুকুর ট্যাক্সি চাপা পড়ে আহত হয়। মেয়ে অম্বিকা শুশ্রূষা করে তাকে সারিয়ে তোলে। সেই থেকে ওই কুকুরটিরও আস্তানা এই বাড়ি।
পেচকিদের জন্য সকালে বরাদ্দ বিস্কুট। দুপুরে ভাত-মাংস এবং সুপ। রাতে আটার রুটির সঙ্গে মাংস এবং সুপ। প্রত্যেকের খাবার দেওয়া হয় আলাদা প্লেটে। তবে ওদের পাতে মাছ দেওয়ার ঝুঁকি নেন না অমলবাবুরা। কিন্তু বিড়ালকে মাছ দেওয়ায় ঝুঁকিটা কোথায়? “একবার একটা বিড়ালের গলায় কাঁটা আটকে মহা বিপত্তি বেঁধেছিল। সেই থেকেই মাছ বন্ধ। আবার যদি কাঁটা ফোটে!” মশার উপদ্রবে কোনও বিড়ালের যাতে ঘুম নষ্ট না হয়, সে জন্য রাতভর মশা তাড়ানোর ধূপ জ্বলে। ছোটখাট শরীর খারাপে অমলবাবু নিজেই হোমিওপ্যাথি ওষুধ দেন। সমস্যা একটু জটিল হলে ছোটেন পশু চিকিৎসকের কাছে। |