এক সপ্তাহ-ও কাটেনি, ফের গন্ডারের মৃত্যু জলদাপাড়ায়।
মঙ্গলবার গভীর রাতে জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের শিলতোর্সা নদীর চড় থেকে পূর্ণ বয়স্ক ওই পুরুষ গন্ডারের দেহটি উদ্ধার করেন বন কর্মীরা। আপাত ভাবে তাঁদের মনে হচ্ছে, নদীর উঁচু পাড় থেকে পা ফস্কে প্রায় ফুট দশেক নীচে পড়ে যাওয়ায় ঘাড়ে আঘাত পেয়েছিল গন্ডারটি। কোচবিহারের ডিভিশনাল ফরেস্ট অফিসার রাজেন্দ্র জাখর জানান, ওই আঘাতই গন্ডারটির মৃত্যুর কারণ। |
জলদাপাড়ার জঙ্গল থেকে উদ্ধার হওয়া গন্ডারের দেহ। —নিজস্ব চিত্র |
কিন্তু নদী-পাড়ের বিস্তীর্ণ ওই তৃণভূমিতেই দিনের বেশির ভাগ সময় কাটায় জলদাপাড়ার গন্ডারকুল। ওই চেনা বিচরণ ভূমিতে পা ফস্কে তাদের পড়ে যাওয়াটা কি খুব স্বাভাবিক? ডিএফও-র যুক্তি, “বর্ষা-অন্তে এটাই গন্ডারের মিলনকাল। এই সময়ে স্ত্রী গন্ডারের দখল নিয়ে দু’টি পূর্ণ বয়স্ক পুরুষ গন্ডারদের লড়াই প্রায় নিত্য ব্যাপার। লড়াইয়ের সময়েই পা ফস্কে সম্ভবত পড়ে গিয়েছিল সে। তাতেই মৃত্যু হয়েছে তার।”
১১ সেপ্টেম্বর, জলদাপাড়ার অন্য প্রান্তে, ক্ষতবিক্ষত যে গন্ডারটির দেহ মিলেছিল সে-ও সম্ভবত একই লড়াইয়ের শিকার। এমনই মনে করছেন বনকর্তারা। গত বছরও সঙ্গিনী-নির্বাচনের মরসুমে জলদাপাড়ায় মারা গিয়েছিল অন্তত দু’টি পূর্ণ বয়স্ক গণ্ডার। বনকর্মীরা জানান, এই সময়ে, দু’টি পুরুষ গন্ডারের লড়াই শুরু হলে তার শেষ হয় ‘মৃত্যুতে’। স্থানীয় পরিবেশপ্রেমী সংগঠন ন্যাফের অনিমেষ বসু এমনই বহু ঘটনার সাক্ষী। তিনি বলেন, “প্রবীণ গন্ডারের থেকে সঙ্গিনীকে ছিনিয়ে নিতে সদ্য যৌবনে পা রাখা গণ্ডাররা এই ধরনের লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়ে। এটাই জঙ্গলের নিয়ম। ওই গন্ডারটিরও ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছিল মনে হচ্ছে।”
ওই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বেশ কয়েক জন বনকর্মী জানান, লড়াইটা শুরু হয়েছিল মঙ্গলবার বিকেল থেকে। টহলদার ওই বনকর্মীরা জানান, কুনকি হাতির পিঠ থেকে ওই তুমুল লড়াই দেখেছেন তাঁরা। যুদ্ধ থামানোর চেষ্টাও করেছিলেন। কিন্তু কুনকিটি ভয় পেয়ে বেঁকে বসে। ততক্ষণে সূর্য অস্ত গেছে। রাতে শিলতোর্সার বুকে সার্চ লাইট জ্বেলে শুরু হয় আহত গন্ডারটির খোঁজ। শেষে নদীর পাড়ে পড়ে থাকতে দেখা যায় তাকে। |