প্লাস্টিক নয়, বুধবারের মেট্রো-বিভ্রাটের মূলে ছিল জলের পাইপের টুকরো। কোনও ভাবে সেটি বিদ্যুৎবাহী থার্ড রেলে এসে পড়ায় শর্ট সার্কিট হয়ে আগুনের ফুলকি বেরোতে থাকে। তা দেখে টানেলের মধ্যেই যাত্রীভর্তি ট্রেনটি দাঁড় করিয়ে দিতে বাধ্য হন চালক।
ঠিক কী ঘটেছিল এ দিন? মেট্রো সূত্রে খবর, দুপুর ১২টা ৫ মিনিট নাগাদ এসপ্ল্যানেড স্টেশনে ঢোকার আগে সুড়ঙ্গে থার্ড রেলে এসে পড়ে কোনও একটি যন্ত্রাংশ থেকে খুলে পড়া পাইপের টুকরো। ট্রেন এসে যাওয়ায় সেটি কোনও ভাবে থার্ড রেলের গায়ে ঠেকে যায়। আর তাতেই ঘটে বিপত্তি। আগুন দেখে চালক থামিয়ে দেন ট্রেন। যদিও মেট্রো কর্তৃপক্ষ দাবি করেছেন, থার্ড রেলে প্লাস্টিকের টুকরো এসে পড়ায় দুর্ঘটনা ঘটেছে।
গত ৩০ অগস্ট মহাত্মা গাঁধী রোড স্টেশনে থার্ড রেলে শর্ট সার্কিট হয়েই ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়েছিল। তখন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিলেন, খাবারের ফয়েল প্যাকেট পড়ে ওই বিপত্তি। আসলে সেদিনও মেট্রোরই এসি মেশিনের একটি পাইপ থেকে ফয়েলের টুকরো খুলে গিয়ে পড়েছিল থার্ড রেলে।
কিন্তু বুধবার কী ভাবে আর কখন ওই পাইপের টুকরো থার্ড রেলে পড়ল? এক কোনও সদুত্তর মেট্রোকর্তাদের কাছে পাওয়া যায়নি। কোন যন্ত্র থেকে পাইপটি খুলে পড়ল, তা-ও তাঁরা এ দিন রাত পর্যন্ত বুঝে উঠতে পারেননি। কিন্তু এটা ঠিক যে ওই পাইপটি মেট্রোরই কোনও যন্ত্রাংশ থেকে খুলে পড়েছে।
এ দিকে, বারবার এমন ঘটনা ঘটায় মেট্রোর যাত্রী সুরক্ষা নিয়ে ফের প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। রক্ষণাবেক্ষণের ত্রুটি ঢাকতে কেন মেট্রো কর্তৃপক্ষ বার বার ভুল তথ্য দিচ্ছেন, উঠেছে সেই প্রশ্নও। মেট্রোকর্তাদের একাংশ স্বীকার করেছেন, এই ধরনের ঘটনায় আতঙ্ক যে ভাবে যাত্রীদের তাড়া করে বেড়ায়, তাতে অন্য দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সুড়ঙ্গে ট্রেন আটকে গেলে যাত্রীরা মানসিক ভাবে দুর্বল হয়ে বাইরে বেরোনোর মরিয়া চেষ্টা করেন। তাতে দুর্ঘটনার আশঙ্কা আরও বেড়ে যায়। এ দিনও ঠিক সেটাই হয়েছে। রেলের প্রাক্তন কর্তা সুভাষরঞ্জন ঠাকুর বলেন, “শুধু ট্রেন চালানোটা বড় কথা নয়। যাত্রী সুরক্ষার বিষয়টির দিকেও অনেক বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।”
দীর্ঘ দিন ধরেই মেট্রোর রক্ষণাবেক্ষণের হাল কার্যত লাটে উঠেছে। ট্রেনের দরজা বন্ধ না হওয়া থেকে শুরু করে আলো-পাখা না জ্বলা, চাকায় ব্রেক শু্য আটকে আগুনের ফুলকি আর ধোঁয়া বার হওয়া ইত্যাদি তো রয়েছেই। তার সঙ্গে এসি রেকগুলির নানা সমস্যা। এ বার বিদ্যুৎবাহী থার্ড রেলেও যন্ত্রপাতির টুকরো খুলে পড়ার নতুন সমস্যা শুরু হল।
যাত্রীদের বক্তব্য, দুর্ঘটনা ঘটতেই পারে। কিন্তু কোনও ঘটনা ঘটার পরে মেট্রো কর্তৃপক্ষ অবস্থা স্বাভাবিক করতে এত সময় নিচ্ছেন, তাতেও হচ্ছে মুশকিল। এ দিনও দুর্ঘটনার পরে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হতে লেগে যায় প্রায় দেড় ঘণ্টা। কিন্তু মেট্রোকর্তাদের তাতেও কোনও হেলদোল নেই। |