রাস্তায় বাস নেই। তাই মানুষের ভরসা ছিল মেট্রো। অফিসের ব্যস্ত সময়ে শহরের সেই ‘লাইফলাইন’ও গেল বিগড়ে। যার জেরে যাত্রী-হয়রানি চরমে উঠল বুধবার।
বাস ধর্মঘটের শহরে এ দিন দুপুর বারোটা নাগাদ মেট্রোর থার্ড লাইনে আগুনের ফুলকি দেখা গেলে বিঘ্নিত হয় পরিষেবা। এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে বন্ধ থাকে ট্রেন চলাচল। সুড়ঙ্গের মধ্যে ট্রেন আটকে থাকায় অসুস্থ হয়ে পড়েন কয়েক জন যাত্রী।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, চাঁদনি চক ছেড়ে সুড়ঙ্গে ঢোকা মাত্র ট্রেনের সব আলো দপদপ করতে থাকে। পাখা বন্ধ হয়ে যায়। ওই অবস্থাতেই কিছুটা এগোয় ট্রেনটি। পরে ঘড়ঘড় আওয়াজ করে থেমে যায়। ওই অবস্থায় অনেক ক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পরে ঘোষণা করা হয়, যান্ত্রিক গোলযোগের জন্য ট্রেনটি আর যাবে না। চালকের দরজা দিয়ে সকলকে বার করে আনা হবে বলে ট্রেনেই ঘোষণা করা হয়। এমনিতেই বাস ধর্মঘট থাকার কারণে এ দিন প্রতিটি মেট্রোর কামরাতেই ঠাসা ভিড় ছিল। ফলে সুড়ঙ্গের ভিতরে অক্সিজেনের অভাবে অনেক যাত্রীই অসুস্থ হয় পড়েন।
মেট্রো সূত্রের খবর, এসপ্ল্যানেডে থার্ড লাইনে আগুনের স্ফূলিঙ্গ দেখা যায়। ঘটনাস্থলে পৌঁছয় দমকলের দু’টি ইঞ্জিন এবং কলকাতা পুলিশের অ্যাম্বুল্যান্স। থার্ড লাইনের বিদ্যুৎ-সংযোগ বন্ধ করে দমকল এবং পুলিশের কর্মীরা চালকের দরজা দিয়ে যাত্রীদের বার করে আনেন। |
এসপ্ল্যানেড স্টেশনে যখন দমকলকর্মীরা একে একে সকলকে বার করছিলেন, তখনও অনেক যাত্রীর চোখমুখে আতঙ্কের ছাপ। যেমন, হাতিবাগান এলাকার অপর্ণা চট্টোপাধ্যায়। মেয়ের সঙ্গে শোভাবাজার থেকে যতীন দাস পার্ক যাচ্ছিলেন। উচ্চ রক্তচাপের রোগী অপর্ণাদেবী দমবন্ধ ওই পরিস্থিতেতে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। অন্য এক যাত্রী বলেন, “আমাদের সামনেই আর এক জন বয়স্ক মানুষও জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন।” একই অবস্থা হয় কৃষ্ণেন্দু রায়ের। সুড়ঙ্গ থেকে বেরিয়ে এসপ্ল্যানেড স্টেশনে পাখার সামনে বসে ছিলেন তিনি। চোখ লাল হয়ে গিয়েছে। শ্বাসকষ্টের জন্য ঠিক ভাবে কথাই বলতে পারলেন না।
এ দিকে, কোনও মতে মেট্রো থেকে বেরিয়ে রাস্তা দিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতেই ফের হয়রানি হয় যাত্রীদের। বাসের জন্য দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হয় বেশির ভাগকেই। ধর্মতলায় লেনিন সরণির কাছে দেখা যায় অপেক্ষমাণ অসংখ্য যাত্রী। মিনিট পনেরো অপেক্ষার পরে একটি শিয়ালদহগামী মিনিবাস এলেও তাতে তিল ধারণের জায়গা ছিল না। তার উপরেই ২০-৩০ জন ঝাঁপিয়ে পড়েন। অধিকাংশ যাত্রী যদিও উঠতে পারলেন না ওই বাসে।
শুধু ধর্মতলা মোড়েই নয়, গোটা কলকাতায় বাসস্ট্যান্ডের ছবিটা অনেকটা একই রকম ছিল। গত দু’দিনের মতো এ দিনও সকাল থেকেই রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা ছিল কম। যে ক’টা বাস রাস্তায় নেমেছে, তাতে ওঠা আর যুদ্ধ করা কার্যত এক। শোভাবাজার মোড়ে প্রায় মিনিট কুড়ি দাঁড়িয়ে থাকা এক অফিসযাত্রী বলেন, “মেট্রোয় গোলমাল। অগত্যা বাসের জন্য দাঁড়িয়েছি। একটা মিনিবাস এল, উঠতে পারলাম না। কী ভাবে যে অফিস যাব, বুঝতে পারছি না।”
যাঁরা ট্যাক্সি করে অফিস যাওয়ার কথা ভেবেছেন, রাস্তায় হেনস্থা হতে হয়েছে তাঁদেরও। বাস না থাকলেও এ দিন চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে অফিসটাইমে যানজট হয়। বাস কম থাকলেও রাস্তায় অনেক প্রাইভেট গাড়ি দেখতে পাওয়া গিয়েছে। সেই সঙ্গে এ দিন অফিসের ব্যস্ত সময়ে ছিল একটি মিছিলও। সব মিলিয়ে ট্যাক্সি করে কাজের জায়গায় যেতে গিয়ে সকলেরই অনেক সময় লেগেছে। |