জঙ্গল ও পাহাড় ভ্রমণে মূল্য বৃদ্ধির আঁচ! এত দিন গাড়ি পিছু প্রবেশ মূল্য নেওয়া হত ৫০ থেকে ১০০ টাকা। এবার তা বেড়ে ২০০ টাকা হয়েছে। শুধু তাই নয়। পযর্টকদের মাথাপিছু দিতে হত ২০ টাকা। সেটা বেড়ে হয়েছে ৪০ টাকা। কোনও উদ্যানের প্রবেশ মূল্য নয়। গত ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে ডুয়ার্সের জয়ন্তী ও বক্সা পাহাড়ে ভ্রমণের জন্য নতুন মূল্য তালিকা কার্যকর করেছে বন দফতর। এর ফলে বিপাকে পড়েছেন পর্যটকরা। পর্যটন ব্যবসায় জড়িত বিভিন্ন সংস্থার কর্তাদের অভিযোগ, বন দফতর প্রবেশ মূল্য দ্বিগুণ করায় পর্যটকরা বক্সা ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন। জয়ন্তী টুরিস্ট গাইড ইউনিয়নের সম্পাদক শেখর ভট্টাচার্য বলেন, “বাড়তি প্রবেশ মূল্যের জন্য কেউ জয়ন্তী ও বক্সা পাহাড়ে যেতে রাজি হচ্ছে না। রাজাভাতখাওয়া চেকপোষ্ট থেকে ফিরে চলে যাচ্ছে।” ওই ঘটনায় বনকর্মীদেরও অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে। পর্যটকদের অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন কেন এ ভাবে প্রবেশ মূল্য দ্বিগুণ করা হয়েছে? বনকর্মীদের কেউ উত্তর দিতে পারছেন না। বনকর্তারাও স্পষ্ট জানাতে পারছেন না। বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের ফিল্ড ডিরেক্টর রবীন্দ্রপাল সাইনি বলেন, “প্রবেশ মূল্য বাড়ানোর নির্দেশ এসেছে। সরকারি নির্দেশ মেনে সেটা নেওয়া হচ্ছে।” ডেপুটি ফিল্ড ডিরেক্টর ভাস্কর জেভি বলেন, “বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের কোর এলাকায় পযর্টকদের প্রবেশ বন্ধ আছে। বাইরে ভ্রমণের জন্য এখন থেকে সরকারি নির্দেশ মত বাড়তি প্রবেশ মূল্য দিতে হবে।” বন দফতরে সূত্রে জানা গিয়েছে, শুধু বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের জঙ্গল নয়। প্রবেশ মূল্য বেড়েছে ডুয়ার্সের অন্য জঙ্গল এলাকাতেও। গতবছর পযর্টকরা গাড়ি পিছু যে টাকা দিয়েছেন এ বার তার দ্বিগুণ দিতে হবে। এ ভাবে প্রবেশ মূল্য বৃদ্ধির কথা শুনে অবাক হয়েছেন আলিপুরদুয়ারের কংগ্রস বিধায়ক দেবপ্রসাদ রায়। তিনি বলেন, “বিষয়টি নিয়ে কয়েকদিনের মধ্যে বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের কর্তাদের সঙ্গে কথা বলব।” পর্যটন সংস্থাগুলির অভিযোগ, ডিজেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় গাড়ি ভাড়া থেকে পযর্টনের অন্য খরচও বেড়েছে। তার উপরে যদে এ ভাবে দ্বিগুণ হারে প্রবেশ মূল্য নেওয়া হয় তা হলে কেউ ডুয়ার্সে বেড়াতে আসবে না। তাঁরা জানান, বক্সার ব্যাঘ্র প্রকল্পের জঙ্গলে ‘কার সাফারির’ অনুমতি নেই। বেহাল অবস্থায় পড়ে আছে পুখরি পাহাড়ের রাস্তা। মাত্র দুটি যায়গায় যাওয়ার অনুমতি মিলছে। তার একটি চুনিয়াঝোরা নজর মিনার অন্যটি মহকাল পাহাড়। সেখানে যেতেও যদি বাড়তি টাকা খরচ করতে হয় তবে কেন এখানে পর্যটকরা আসবেন! জয়ন্তী টুরিস্ট গাইড ইউনিয়নের সম্পাদক জানান, নতুন মূল্য তালিকা কার্যকর হওয়ার পর থেকে বক্সা এলাকায় উদ্বেজনক হারে পযর্টক সংখ্যা কমেছে। বাইরের পর্যটন সংস্থাগুলিও বাড়তি প্রবেশ মূল্যের কথা শুনে পিছিয়ে যাচ্ছে। দিনে বেড়াতে আসা লোকও জয়ন্তী ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন। এ পরিস্থিতিতে পর্যটন নির্ভর এলাকার কয়েকশো পরিবার সমস্যায় পড়েছে। তিনি বলেন, “সামনে পুজোর মরশুম। আমরা মনে করেছিলাম এ বার ভিড় বাড়বে। বন দফতরের সিদ্ধান্তের জন্য সেটা হচ্ছে না। দ্রুত ব্যবস্থা না নেওয়া হলে পুজোয় জয়ন্তী ও বক্সা পাহাড় ফাঁকা পড়ে থাকবে।” |