সারা দেশে ভোর হওয়ার বেশ কিছুটা আগেই সূর্য ওঠে গুয়াহাটিতে। সুতরাং পশ্চিম আকাশে যখন অন্ধকার, তখন পূবে, ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গেই উড়ে যেতে পারবে বিমান। দেশ জুড়ে উড়ে বেড়ানোর জন্য অনেক বেশি সময় পাবে সে। রাতেও গুয়াহাটিতে বিমান ওঠানামা করতে পারে। তাই বিমান রাতে গুয়াহাটি ফিরে বিশ্রাম নেবে। উত্তর-পূর্ব ভারতে বিমানের আঞ্চলিক ‘হাব’ তৈরি করতে তাই গুয়াহাটিকে ব্যবহার করতে চায় বিমানমন্ত্রক। মন্ত্রক সূত্রে খবর, গুয়াহাটিতে রাতে বিমান রাখার (নাইট পার্কিং) জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছে অনেক বিমানসংস্থা।
পরিকল্পনা কমিশনের টাস্ক ফোর্স এ নিয়ে ইতিমধ্যেই সমীক্ষা শুরু করেছে। ঠিক হয়েছে আধুনিক টার্মিনাল ছাড়াও রাতে বিমান রাখার জন্য প্রয়োজনীয় পার্কিং বে এবং হ্যাঙ্গার তৈরি করা হবে। টাস্ক ফোর্স জানিয়েছে, গুয়াহাটি বিমানবন্দরের আধুনিকীকরণের জন্য প্রয়োজন ৯৭০ কোটি টাকা। কাজ শুরু হবে ২০১৩ সালে। |
নিয়মিত যাত্রী সংখ্যা বাড়ছে গুয়াহাটিতে। মন্ত্রকের হিসেব অনুযায়ী, ২০১১-১২ সালে গুয়াহাটি বিমানবন্দর ব্যবহার করেছেন ২২ লক্ষ ১৫ হাজার ৯৯৯ জন যাত্রী। এখন ভুটান ও ব্যাঙ্ককের সঙ্গে গুয়াহাটির সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে। মন্ত্রক চায় ঢাকা ও কাঠমাণ্ডুর সঙ্গেও গুয়াহাটির সরাসরি বিমান যোগাযোগ গড়ে উঠুক। এই দুই রুটের যাত্রীদের কলকাতা ঘুরে যাতায়াত করতে হয়। চাহিদার কথা বিবেচনা করেই তাই এখন কলকাতা থেকে নিয়মিত গুয়াহাটিতে ১৩টি-রও বেশি উড়ান চালানো হয়। গুয়াহাটিকে আলাদা গুরুত্ব দিতেই এখানে বিমান নিরাপত্তা (সিভিল অ্যাভিয়েশন সিকিউরিটি) ব্যুরো খোলার ব্যাপারেও মন্ত্রকের অনুমতি মিলেছে।
মন্ত্রক সূত্রের খবর, গুয়াহাটির পাশাপাশি অসমের রূপসী, ত্রিপুরার আগরতলা ও কমলপুর বিমানবন্দর আধুনিকীকরণের ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছে কেন্দ্র। এর মধ্যে আগরতলাতে রাতে বিমান ওঠানামার সুবিধা রয়েছে। কলকাতা থেকে নিয়মিত প্রায় ১২টি উড়ান সেখানে যাতায়াত করে। আগরতলা থেকেও নিয়মিত বাড়ছে যাত্রী সংখ্যা। ত্রিপুরার কমলপুর বিমানবন্দর থেকেও বিমান ওঠানামা করে। তবে সেই উড়ান প্রধানত উত্তর-পূর্ব ভারতের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। সেটিকে আরও আধুনিক করে গড়ে তুলতে চায় মন্ত্রক।
টাস্ক ফোর্সের প্রস্তাব অনুযায়ী, মিজোরামের লেংপুই বিমানবন্দর ছাড়াও লুংলে-তে নতুন একটি বিমানবন্দর তৈরি হবে। রূপসী বিমানবন্দর বর্তমানে অচল। কোনও বিমান এখানে ওঠানামা করে না। বিমান সংস্থাগুলির মতে, যাত্রী বা মাল পরিবহণের ক্ষেত্রে রূপসীর কোনও কার্যকারিতা নেই। টাস্ক ফোর্সের মতে, এয়ার স্পোর্টস কেন্দ্র, ফ্লাইং ক্লাব ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে এই বিমানবন্দরকে কাজে লাগানো যেতে পারে।
তবে অন্য চিত্রও রয়েছে। একাদশ পরিকল্পনায় বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ গুয়াহাটি বিমানবন্দরের উন্নতির জন্য ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছিল। সেই কাজ এখনও শেষ হয়নি। আইজল থেকে ২৩৫ কিলোমিটার দূরে লুংলে-তে ছোট বিমানবন্দর তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল ২০১০ সালেই। তখন বলা হয়েছিল, ২০১২ সালে কাজ শেষ হবে। কিন্তু এখনও লুংলে বিমানবন্দর পরিকল্পনা স্তরেই রয়ে গিয়েছে। নতুন এই বিমানবন্দর থেকে ৯ থেকে ১৯ আসনের বিমান ওঠানামা করতে পারবে। |