রাজনৈতিক বিরোধিতা দূরে সরিয়ে দেশের স্বার্থে আর্থিক সংস্কার প্রক্রিয়াকে সমর্থন জানাতে ‘বিক্ষুব্ধ’ রাজনৈতিক দলগুলির কাছে আর্জি জানাল শিল্পমহল। তাদের বক্তব্য, কী করলে দেশের ভাল হবে, সেটাই সব সময় অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত। এবং সে জন্যই ইস্যুর ভিত্তিতে একসঙ্গে কাজ করুক রাজনৈতিক দলগুলি।
প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ দ্বিতীয় দফার সংস্কার পর্বের কথা ঘোষণার পরে প্রত্যাশিত ভাবেই তাঁকে স্বাগত জানিয়েছিল শিল্পমহল। সংস্কার নিয়ে অবশ্য কেন্দ্রের জোট সরকারের মধ্যেই জলঘোলা শুরু হয়েছে। সমর্থন তোলার কথা জানিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। সংস্কারের বিরোধিতায় আজ, বৃহস্পতিবার দেশ জোড়া বন্ধেরও ডাক দেওয়া হয়েছে।
সংস্কার নিয়ে প্রবল রাজনৈতিক বিরোধিতার মধ্যে বুধবার মুখ খুলেছে সিআইআই, ফিকি বা অ্যাসোচ্যামের মতো বণিকসভাগুলি। এ নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস বা কোনও রাজনৈতিক দলের নাম না করলেও শিল্পমহল কেন্দ্রের পাশেই দাঁড়িয়েছে। দাবি করেছে, সংস্কার পর্ব যেন ফের থমকে না যায়।
সিআইআই-এর ডিরেক্টর জেনারেল চন্দ্রজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, দেশের আর্থিক অবস্থার উন্নয়নের স্বার্থেই সংস্কার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তা বাধাপ্রাপ্ত হলে দেশে-বিদেশে ভুল বার্তা যাবে।
বস্তুত, দেশের আর্থিক বৃদ্ধিকেই মূল বিষয় হিসেবে দেখছেন ফিকি-র কর্তা আর ভি কানোরিয়া ও অ্যাসোচ্যামের কর্তা ডি এস রাওয়াত। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা না সংস্কার, কোনটি সরকারে কাছে গুরুত্বপূর্ণ,
এ প্রশ্নের জবাবে কানোরিয়ার বক্তব্য, সংস্কারের মূল উদ্দেশ্যটা কী, তা আগে খতিয়ে দেখতে হবে। তাঁর মতে, কর্মসংস্থান ও মানুষের সুবিধা কতটা বাড়ছে, সেটাই এ ক্ষেত্রে মূল বিবেচ্য। তাই যাঁরা সংস্কারের বিরোধিতা করছেন, তাঁদের বিষয়টি ভাল করে ভেবে দেখার আর্জি জানিয়েছেন তিনি। অবশ্য ডিজেলের দাম বাড়ানো কিংবা রান্নার গ্যাসে ভর্তুকি ছাঁটাইয়ের জন্য খরচের বোঝা যে বাড়বে, তা মানছেন তাঁরা। কিন্তু তাঁদের দাবি, সেটা সাময়িক। সাময়িক এই বাড়তি চাপটা নিলে আখেরে লাভ হবে দীর্ঘমেয়াদে।
কেন?
শিল্প-কর্তাদের যুক্তি, ভর্তুকির বোঝা টানতে গিয়ে দুর্বল হচ্ছে দেশের আর্থিক অবস্থা। ফলে সাময়িক সুবিধা দিতে গিয়ে ভবিষ্যৎকে বাজি রাখা হচ্ছে। তাঁদের প্রশ্ন, আর্থিক অবস্থা দুর্বল হলে কী করে দেশ এগোবে? তাঁদের দাবি, তাই এখনই তাতে কিছুটা রাশ টানলে সামাজিক উন্নয়ন আরও সহজ হবে। সুফল পাবেন সকলেই।
১৯৯১, ১৯৯৭ বা ২০০৮, যখনই ভারত সমস্যার মুখে পড়েছে, দেশের স্বার্থে কেন্দ্রীয় সরকার কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, মনে করিয়ে দিচ্ছেন ফিকি-কর্তা। এবং প্রতিটি সময়েই কেন্দ্রে ক্ষমতা ছিল জোট সরকার। সেই সূত্রেই এ বারও একই ভাবে সব রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আর্জি জানিয়েছেন ফিকি-কর্তা। |