যানজট কমাতে শহরের তিনকোনিয়া বাসস্ট্যান্ড তুলে দিতে চাইছে বর্ধমান উন্নয়ন পর্ষদ (বিডিএ)। কিন্তু স্থানীয় ব্যবসায়ীরা তাতে নারাজ।
বুধবার সকালে তিনকোনিয়া বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন জি টি রোডে মিছিল বের করা হয়। কিছুক্ষণের জন্য পথ অবরোধও হয়। পুলিশ এসে অবরোধ তোলে। মিছিলকারীদের অভিযোগ, পুলিশ বেধড়ক লাঠি চালিয়েছে। তবে পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জার দাবি, “তাড়া করতেই ওঁরা পালিয়ে গিয়েছেন। লাঠিচার্জের দরকার হয়নি।”
বর্ধমানে যানজট কমাতে শহরের দু’প্রান্তে দু’টি বাস টার্মনাস তৈরি করা হয়েছে। নবাবহাটের বাস টার্মিনাস কয়েক বছর আগেই তৈরি হয়ে গিয়েছিল। কিছু দিন আগে আলিশার বাসস্ট্যান্ডের কাজও সম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছে। বিডিএ চেয়ারম্যান তথা বর্ধমানের বিধায়ক রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “শহরে ভিতরে জি টি রোডে আর কোনও বড় বাস চলাচল করতে দেওয়া হবে না। শহরের উপকণ্ঠে আলিশা ও নবাবহাটে নতুন দু’টি বাসস্ট্যান্ড তৈরি করা হয়েছে। আলিশার বাসস্ট্যান্ডটি পরিবহণ মন্ত্রী মদন মিত্র উদ্বোধন করবেন। শহরের বুকে চলাচল করবে মিনিবাস।”
কিন্তু প্রশাসনের নির্দেশ সত্ত্বেও নবাবহাটের বাস টার্মিনাস ব্যবহার শুরু করেননি বাস মালিকেরা। তাঁদের দাবি, দু’টি বাসস্ট্যান্ডে থাকা বাসগুলিকে শহরের ভিতরে জি টি রোড দিয়েই যাতায়াত করতে দিতে হবে। এ দিন বিক্ষোভের পরে পরে বর্ধমানের পুরপ্রধান আইনুল হকের স্মারকলিপি দিয়ে তাঁরা দাবি করেন, তিনকোনিয়া বাসস্ট্যান্ডে বাস ঢুকতে দেওয়া না হলেও এই স্ট্যান্ডের সামনে থেমে যাত্রী তুলতে দেওয়ার কথা ছিল। তা যদি মানা না-ও হয়, নতুন দুই বাসস্ট্যান্ডে দোকান ইত্যাদি করে দিয়ে তাঁদের ক্ষতিপূরণ তথা পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে দিতে হবে। অন্যথায় প্রচুর মানুষ রুজি হারাবেন। |
জেলা বাসমালিক সমিতির সম্পাদক তুষার ঘোষ বলেন, “তিনকোনিয়ার বদলে আলিশা বা নবাবহাট যেতে আমাদের প্রতি দিনই অন্তত ৩০০ টাকার অতিরিক্ত তেল খরচ হবে। ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির পরেও দফায়-দফায় ভাড়া বাড়ানোর প্রস্তাব সরকার মানতে চায়নি। আমাদের লোকসানের বহর ক্রমে বাড়ছে। আমরা শুধু চেয়েছিলাম, প্রশাসন বিষয়টি মাথায় রাখুক।” পুনর্বাসনের প্রস্তাব প্রসঙ্গে জেলাশাসক ওঙ্কার সিংহ মিনা অবশ্য বলেন, “আমাদের কাছে এই ধরনের প্রস্তাব আসেনি। এলে তা বিবেচিত হবে।” রবিরঞ্জনবাবু বলেন, “আগে তো ওই দু’টি বাস টার্মিনাস ব্যবহার শুরু হোক। পুনর্বাসনের কথা পরে বিবেচনা করা যাবে।”
জেলাশাসক জানান, আসানসোল-দুর্গাপুরের দিকে বাসগুলি নবাবহাট থেকে ও কলকাতা বা আরামবাগ রুটের বাসগুলি আলিশা থেকে ছাড়বে। সেগুলি চলাচল করবে বাইপাস ধরে। কোনও মতেই দু’টি স্ট্যান্ড থেকে ছাড়া বাসগুলিকে শহর ঘুরে যাত্রী তোলার অনুমতি দেওয়া হবে না। ২০১১ সালের শেষে হওয়া সর্বদলীয় বৈঠকে এই ধরনের কোনও শর্ত দেওয়াও হয়নি। শনিবার থেকে নতুন দুই স্ট্যান্ডে বাস ঢোকানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বাসমালিকদের। রবিরঞ্জনবাবুর হুঁশিয়ারি, “অন্যথায় বাস মালিকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শহরের স্বার্থে আমরা কাউকেই ছেড়ে দেব না।” |