মদ্যপ যুবকদের সঙ্গে সংঘর্ষের জেরে মৃত্যু হল এক জনের। কাটোয়া শ্মশানঘাটের কাছে এই ঘটনায় ক্ষিপ্ত স্থানীয় বাসিন্দারা ভাঙচুর করলেন বেশ কয়েকটি মদের ঠেক। পুলিশ এক মদ বিক্রেতাকে গ্রেফতার করেছে। এসডিপিও (কাটোয়া) ধ্রুব দাস বলেন, “দু’পক্ষই মদ্যপ অবস্থায় ছিল। তাঁদের মধ্যে সংঘর্ষের জেরেই এমন ঘটেছে।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কেতুগ্রামের আনখোনার কাছে ইছাপুর গ্রামের বাসিন্দ ভাগ্যধর হাজরা (৪২) সোমবার মনসা পুজো উপলক্ষে কাটোয়ার মাধাইতলা আশ্রমের কাছে নিতাই হাজরা নামে এক আত্মীয়ের বাড়িতে এসেছিলেন। মঙ্গলবার পুজো শেষে তিনি ও তাঁর পরিজনেরা ভাগীরথীতে স্নানে যাচ্ছিলেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কাটোয়া শ্মশানের কাছে বাঁধের রাস্তা আটকে শহরের খালপাড়া এলাকার কয়েক জন যুবক মদের আসর বসিয়েছিলেন। ভাগ্যধরবাবুরা রাস্তা থেকে সরে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। কিন্তু ওই যুবকেরা তাতে রাজি না হওয়ায় দু’পক্ষের মধ্যে প্রথমে বচসা, তা থেকে হাতাহাতি শুরু হয়। বাঁশ, চ্যালাকাঠ নিয়ে সংঘর্ষ বেধে যায়। তাতে দু’পক্ষেরই কয়েক জন করে আহত হন। পুলিশ তাঁদের উদ্ধার করে কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে পাঠায়। রাতের দিকে ভাগ্যধরবাবুর অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। বুধবার ভোরে সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। |
এই খবর পৌঁছনোর পরেই স্থানীয় বাসিন্দারা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) তরুণ হালদারের সঙ্গে দেখা করেন এলাকার কয়েক জন। তাঁদের অভিযোগ, শ্মশানঘাট এলাকায় প্রচুর বেআইনি মদের ঠেক রয়েছে। শবযাত্রীরা সেখান থেকে মদ কিনে দিনদুপুরেই বাঁধের উপরে বা রাস্তায় বসে পড়েন। এ নিয়ে প্রায়ই অশান্তি বাধে। সে জন্য এলাকার লোকেরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। এলাকার বধূ পুষ্প মণ্ডল, সন্ধ্যা হাজরাদের দাবি, “ওই রাস্তা দিয়ে ভাগীরথী যাওয়ার উপায় নেই। মদ্যপদের জন্য অনেকটা রাস্তা ঘুরতে হয়।”
বুধবার দুপুরেই এলাকার যুবকেরা বেআইনি মদের ঠেক ভাঙতে থাকেন। প্রায় আট-দশটি ঠেক ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। বাসিন্দাদের ক্ষোভ, ভাগ্যধরবাবু পুজো উপলক্ষে কাটোয়ায় এসেছিলেন। কিন্তু মদ্যপদের হাতে মার খেয়ে নিহত হলেন। তাঁদের অভিযোগ, এর পরেও পুলিশের টনক নড়েনি। সেই কারণে তাঁদেরই মদের ঠেক ভাঙতে এগিয়ে আসতে হল। ঠেক ভাঙার সময়ে অবশ্য কোনও মদ বিক্রেতার দেখা মেলেনি। পরে পুলিশ গিয়ে প্রচুর বেআইনি মদ উদ্ধার করে। এক জনকে গ্রেফতারও করে। কাটোয়ার কংগ্রেস বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের মতে, “এলাকায় হেরোইন ও মদের ঠেকের সংখ্যা বেড়ে গিয়েছে। এর ফলে অসামাজিক কাজকর্মও বাড়ছে। পুলিশকে এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। তা না হলে এমন ঘটনা আরও বাড়বে।” এসডিপিও (কাটোয়া) অবশ্য পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ মানতে চাননি। |