ওষুধ-সঙ্কট শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে
জ্বরে আক্রান্ত ছোট দুই মেয়েকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে গিয়েছিলেন বাগরাকোটের বাসিন্দা শুভা দাস। পেশার পরিচারিকার কাজ করেন। চিকিৎসক বাচ্চাদের দেখে ওষুধ লিখে দেন। সেই সঙ্গে জানিয়েও দেন হাসপাতালে কোনও ওষুধই মিলবে না। তাতেই বিপাকে পড়েন শুভাদেবী। সোমবার হাসপাতালে বাচ্চাদের চিকিৎসা করাতে গেলেও ওষুধ খাওয়াতে পারেননি। শুধু শুভাদেবী নন হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে যাওয়া নরেন মণ্ডল, রিনা মণ্ডলদের অনেকেই ওষুধ না-পেয়ে হতাশ হয়েছেন। সাধারণ জ্বর, সর্দি, কাশি, পেটের অসুখের জন্য প্যারাসিটামল, অ্যান্টি-বায়োটিক, অ্যান্টাসিড জাতীয় ওষুধেরও সরবরাহ কম হাসপাতালে। অভাব বাচ্চাদের সর্দি-কাশির সিরাপও। এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে ওই সমস্যা চলছে। সোমবার রাতে কিছু ওষুধ জেলা স্টোর থেকে সংগ্রহ করা হলেও তা দিয়ে সপ্তাহখানেক সামাল দেওয়া যাবে। তার মধ্যে স্বাস্থ্য দফতর থেকে ওষুধের সরবরাহ না হলে সমস্যা বাড়বে। সমস্যার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সুপার মুকুল চন্দ্র রায়। তিনি বলেন, “সরবরাহ না-থাকায় প্যারাসিটামল, অ্যান্টিবায়োটিক জাতীয় ওষুধ হাসপাতালে ছিল না। তবে সোমবার রাতেই জেলা স্টোর থেকে প্যারাসিটামল, অ্যান্টিবায়োটিক, পেটের ব্যাথার মতো রোগের চিকিৎসার জন্য কিছু ওষুধ মিলেছে। মঙ্গলবার রোগীদের হাসরপাতাল থেকেই তা দেওয়া হচ্ছে। সপ্তাহখানেক তা দিয়ে চলবে।” হাসপাতালেরই একটি সূত্র জানিয়েছে, সরকারি ভাবে ৬০ রকমের ওষুধ হাসপাতাল থেকে নিখরচায় রোগীদের দেওয়ার হয়। তার মধ্যে অর্ধেক ওষুধেরই সরবরাহ নেই। স্যালাইনের মতো বিভিন্ন সামগ্রীও সরবরাহ না-থাকায় সমস্যা বেড়েছে। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরেও অসুবিধার কথা জানানো হয়েছে। সম্প্রতি হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের বাইরে থেকে স্যালাইন কিনে আনতে হচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠে। বিষয়টি জানতে পেরে হাসপাতালে গিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমস্যা মেটাতে আলোচনা করেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। স্থানীয়ভাবে মুখ্যস্বাস্থ্য আধিকারিকের তহবিল থেকে স্যালাইন-সহ কিছু ওষুধ কেনার ব্যবস্থাও করা হয়। কিন্তু এর মধ্যেও ওষুধ সরবরাহ না হওয়া অন্য ওষুধের অভাবও দেখা দিয়েছে। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুবীর ভৌমিক বলেন, “কিছু ওষুধ সোমবার রাতে হাসপাতালে দেওয়া হয়েছে। ওষুধের যাতে সমস্যা না হয় তা নিশ্চয়ই দেখা হচ্ছে। তবে চাহিদা মতো ওষুধ সরবরাহ না হওয়ায় কিছুটা সমস্যা রয়েছে।” স্বাস্থ্য দফতরের একটি সূত্রেই জানা গিয়েছে, জেলায় বছরে প্রায় ১৬ লক্ষ প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধের চাহিদার কথা মাস চারেক আগে জানানো হয়েছিল। তার মধ্যে মিলেছে মাত্র দেড় লক্ষ ওষুধ। নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে রাজ্য বিভিন্ন সংস্থার কাছ থেকে ওষুধ কেনে। সেগুলির একাংশ রাজ্যের বাইরে অবস্থিত। তাদের কাছ থেকে ওষুধ সরবরাহ হতে কিছুটা বেশি সময় লেগে থাকে। রাজ্যের মধ্যে থাকা ওষুধ সরবরাহকারী সংস্থাগুলিকে যে সব ওষুধ সরবরাহ করার বরাত দেওয়া হয়েছে তা যাতে দ্রুত সরবরাহ করা হয় সে ব্যাপারে স্বাস্থ্য দফতর সচেষ্ট হয়েছে। তবে কবে ওষুধ সরবরাহ হবে সে ব্যাপারে নিশ্চিত করে জেলা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কিছু জানাতে পারেননি। স্যালাইন জাতীয় সামগ্রী সরবরাহ করে রাজের বাইরের সংস্থা। তাই এ ক্ষেত্রে আরও বেশ কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে বলেই দায়ত্বে থাকা কর্তাদের ধারণা। শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, স্থানীয় ভাবে অনেক ক্ষেত্রে ওষুধ কিনে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সে কাজেও সমস্যা দেখা দিয়েছে রোগী কলাণ সমিতির তহবিলে টাকা না থাকায়। তাতে রোজই হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে এসে কোনও না কোনও ওষুধ না-পেয়ে নিরাশ হয়ে ফিরছেন বাসিন্দারা। অসুস্থ ১ বছরের মেয়ে সুস্মিতা এবং সাড়ে ৪ বছরের সুস্মিতাকে ওষুধ খাওয়াতে পারেননি শুভাদেবী। তিনি বলেন, “ওষুধ কেনার টাকা নেই। হাসপাতালেই ওষুধ পাব ভেবে চিকিৎসা করাতে এসেছিলাম। হাসপাতালে ওষুধ না মেলায় দুশ্চিন্তায় পড়েছি।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.