ফের মতবিরোধ এইও-সভাধিপতির |
অচলাবস্থার আশঙ্কা মহকুমা পরিষদে |
১৬ জন অফিসার-ইঞ্জিনিয়রের দায়িত্ব বদলের নির্দেশ নিয়ে সভাধিপতি পাসকেল মিন্জ ও অতিরিক্ত কার্যনির্বাহী আধিকারিক (এইও) সুবল রায়ের মধ্যে মতবিরোধের জেরে ফের শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদে অচলাবস্থার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। পরিষদ সূত্রের খবর, সম্প্রতি অতিরিক্ত কার্যনির্বাহী আধিকারিক এক নির্দেশ জারি করে ওই ১৬ জনকে পুরানো দায়িত্ব থেকে অন্যত্র সরিয়ে দেন। কিন্তু, তাঁকে না-জানিয়ে এইও ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, এই কারণে ওই নির্দেশ বাতিল করে দিয়েছেন সভাধিপতি। শুক্রবার সভাধিপতি নির্দেশনামা জারি করে এইও-এর সিদ্ধান্ত বাতিল করার পরে পরিষদে আলোড়ন পড়ে গিয়েছে।
সরকারি আমলা ও সভাধিপতির পরস্পরবিরোধী নির্দেশের মধ্যে কোনটি শেষ পর্যন্ত লাগু হবে তা নিয়ে চলছে জল্পনা। বিষয়টি পরিষদের কার্যনির্বাহী আধিকারিক তথা দার্জিলিঙের জেলাশাসক সৌমিত্র মোহনের কাছে পৌঁছেছে। দার্জিলিঙের জেলাশাসক বলেন, “ঘটনাটি শুনেছি। সকলের সঙ্গে আলোচনা করেই সর্বজনগ্রাহ্য সমাধানসূত্র খুঁজতে হবে।”
সভাধিপতি ও এইও-এর মধ্যে বিরোধ অবস্য নতুন কিছু নয়। দু’সপ্তাহ আগেই ‘স্বজলধারা’ প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত নিয়ে দুজনের মধ্যে বাদানুবাদ হয়। তদন্ত চলার কারণে ওই প্রকল্পের ১০ শতাংশ বকেয়া টাকা দেওয়ার ব্যাপারে আপত্তি জানান এইও। কিন্তু, সভাধিপতি ওই টাকা না-ছাড়া হলে পরের বছরের বরাদ্দ মিলবে না জানিয়ে এইও কে সতর্ক করে দেন। একই সঙ্গে সভাধিপতি এইও-কে তীব্র ভর্ৎসনা করেন বলেও অভিযোগ। তা নিয়ে বিরোধ এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে সভাধিপতির বিরুদ্ধে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ জানিয়ে জেলাশাসকের মাধ্যমে ওই পদ থেকে বদলির আর্জি জানান সুবলবাবু। তাঁর সেই আবেদন এখন রাজ্য সরকারের বিবেচনাধীন।
এমতাবস্থায়, গত ২৮ অগস্ট এইও একটি নির্দেশ জারি করে পরিষদের ৬ জন অফিসার ও ১০ জন ইঞ্জিনিয়রের দায়িত্বের পুনর্বিন্যাস করেন। পরিষদ সূত্রের খবর, যে হেতু ওই অফিসার-ইঞ্জিনিয়রদের একাংশ দীর্ঘদিন ধরে একই দায়িত্বে রয়েছেন, সে জন্য নানা মহল থেকে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। কয়েকটি ক্ষেত্রে গুরুতর অভিযোগও পৌঁছেছে বলে পরিষদের একটি সূত্রের দাবি। সে কথা মাথায় রেখেই ওই অফিসার-ইঞ্জিনিয়রদের দায়িত্ব পুনর্বন্টন করা হয়েছে বলে এইও-র দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে।
কিন্তু, ওই নির্দেশের বিষয়টি জানার পরে সভাধিপতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। যে হেতু পরিষদের সর্বোচ্চ নীর্তি নির্ধারক পদে রয়েছেন, সভাধিপতি, সে জন্য তাঁর অনুমোদন ছাড়া এমন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় কি না সেই প্রশ্ন তোলেন তিনি। এর পরেই সভাধিপতি ওই নির্দেশ বাতিল করে দেন। প্রসঙ্গত, সভাধিপতি একাধিকবার অভিযোগ করেছেন, রাজ্যে নতুন সরকার গঠনের পর থেকেই তাঁকে নানা কাজে বাধা দেওয়া হচ্ছে। এমনকী, প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্যও ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, মহকুমা পরিষদের উন্নয়নে বিঘ্ন ঘটানোর চেষ্টা চলছে। এই ঘটনা নিয়ে পরিষদের মধ্যে নানা জল্পনা। সবাধিপতি ও এইও-র মধ্যে নিত্য বিরোধ চললে উন্নয়ন কাজ চলবে কী ভাবে তা নিয়েও তিস্তর পঞ্চায়েতের নানা মহলে প্রশ্ন উঠেছে। একাধিক গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানের অভিযোগ, ইদানীং বরাদ্দ মিলতে প্রতি পদে সমস্যা হচ্ছে। সভাধিপতির বক্তব্য, “এইও-এর ভূমিকায় শিলিগুড়ির গ্রামাঞ্চলের প্রধানরাও বিরক্ত ও ক্ষুব্ধ।” যদি এইও-এর দাবি, তিনি পঞ্চায়েত বিধি মেনে, জেলা পরিষদের কার্যনির্বাহী আধিকারিক তথা জেলাশাসকের পরামর্শ মেনেই কাজ করে থাকেন। এ ক্ষেত্রে সভাধিপতিকে জানাননি কেন? এইও সুবলবাবু কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলের দাবি, “দৈনন্দিন দায়িত্ব পুনর্বিন্যাসের মতো ব্যাপারে সভাধিপতির মতামত নিতেই হবে এমন কোনও বাধ্যবাধকতা পঞ্চায়েত আইনে নেই।” |