মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়ে বাসিন্দাদের সমস্যা সমাধানের আশ্বাস |
গ্রামের পথে হাঁটলেন গৌতম দেব |
গ্রামের পথ ধরে হেঁটে যাচ্ছেন মন্ত্রী। সে খবর পৌঁছতেই কাতারে কাতারে মানুষ ছুটলেন রাস্তার দিকে। কেউ অথর্ব হয়েছেন, অথচ বৃদ্ধভাতা মিলছে না। কারও স্বামী মারা গিয়েছে বহুদিন, সংসারের দু’বেলা ভাত জোটে না। বিধবা ভাতা মিলছে না। কারও স্বামী অসুস্থ হয়ে বিছানায়, চিকিৎসার টাকা নেই। কারও বিপিএল তালিকায় নাম নেই। কোথাও জল নেই, স্কুলে পাঁচিল নেই। কেউ আবার ‘নেই’-এর তালিকা দূরে সরিয়ে রেখে গাঁদা ফুলের মালা পরালেন মন্ত্রীকে। কিছুটা দূরে যেতেই আদিবাসীরা নাচ দিয়ে বরণ করে নিলেন মন্ত্রীকে। কিছু ছাত্র মন্ত্রীর পিছু পিছু ছুটে অটোগ্রাফও নিলেন। কেনই বা নেবে না, এই প্রথম কোনও মন্ত্রী তাঁদের গ্রামের পথ ধরে হাঁটছেন। মঙ্গলবার নকশালবাড়ির ব্যাঙাইজোত থেকে ‘মানুষের কাছে চলো’ অভিযান শুরু করলেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। এ দিনই প্রায় ১৬ কিলোমিটার হাঁটলেন। শুধু হাঁটলেন নয়, মানুষের সঙ্গে কথা বললেন। গৌতমবাবু বলেন, “আমি খুব খুশি হয়েছি। যে উদ্দেশ্য নিয়ে গ্রামের পথে হাঁটব ভেবেছিলাম তা সার্থক। সাধারণ মানুষ আমার কাছে এসেছেন। তাঁদের অভাব, কষ্টের কথা জানিয়েছেন। এটা অনুভব করতে চেয়েছিলাম। মানুষের ছোট ছোট সমস্যা আমাকে সমাধান করতেই হবে। সব লিপিবদ্ধ করেছি। অনেক ছোট ছোট ছেলেমেয়েকে দেখলাম অপুষ্টিতে ভুগছে। স্বাস্থ্যশিবির করা হবে।” |
নকশালবাড়িতে স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে মন্ত্রী গৌতম দেব। ছবি: কার্তিক দাস। |
দার্জিলিং জেলা কংগ্রেসের সভাপতি (সমতল) মাটিগাড়া-নকশালাবাড়ির বিধায়ক শঙ্কর মালাকার উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, “মন্ত্রী আমার বিধানসভা এলাকার সমস্যা খুঁজে তা সমাধানে উদ্যোগী হয়েছেন, এই জন্য অভিনন্দন।” পাশাপাশি, শঙ্করবাবুর কটাক্ষ, “জেলায় উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী বহু বছর ধরে রাজনীতি করছেন। তিনি তাঁর দলের জেলা সভাপতি পদেও আছেন। সমস্ত সমস্যা তাঁর নখদর্পণে বলে আমি আশা করেছিলাম।” এদিন ১১টা নাগাদ ব্যাঙাইজোত থেকে পদযাত্রা শুরু করেন তিনি। সে সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন তৃণমূলের রাজ্যের সাধারণ সম্পাদক মহুয়া মৈত্র সহ ৫০ জন লোক। পদযাত্রা যত এগিয়েছে তা জনস্রোতে পরিণত হয়েছে। কটিয়াজোতো পৌঁছতেই স্থানীয় প্রদীপ সেন একটি সেখানে সেতুর দাবি করেন। স্টেশনপাড়ায় গীতা পাশোয়ান, শান্তি পাশোয়ানরা বিধবা ভাতা পাচ্ছেন না বলে মন্ত্রীকে অভিযোগ করেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্ত্রী সে সব সমস্যার কথা লিখে রাখার নির্দেশ দেন তাঁর দফতরের এক কর্মীকে। আশ্রমপাড়ায় ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধ আব্দুল আহমেদ বার্ধক্য ভাতা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেন। কিছুটা এগিয়েই সেখানে একটি ডিআই ফান্ড মার্কেট রয়েছে। সেটি আবর্জনা ও অনুন্নয়নের বেহাল বলে ব্যবসায়ীরা মন্ত্রীকে জানান। ওই বাজার উন্নয়নের ব্যপারে আশ্বাস দেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী। বাস স্ট্যান্ড এলাকায় গিয়ে বাসিন্দাদের অনুরোধে এক জায়গায় বসে তাঁদের কথা শোনেন মন্ত্রী। জয়া বাউলি জানান, তাঁর ৯ বছরের মেয়েটি বহু দিন ধরে অসুস্থ। ঠিকমতো কথা বলতে পারে না। সঙ্গে সঙ্গে মন্ত্রী উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেন। আজ, বুধবার মেয়েকে সেখানে নিয়ে যেতে বলেন। কিছু টাকাও তাঁর হাতে তুলে দেন। বাবুপাড়ার বাসিন্দা জ্যোৎস্না বেগম মন্ত্রীকে জানান, তাঁর স্বামী হানিফ শেখ সক্রিয় তৃণমূল কর্মী। বেশ কিছুদিন ধরে প্যারালিসিস হয়ে বিছানায় পড়ে। চিকিৎসার টাকা নেই। সেখানেই ভিড় ঠেলে মন্ত্রীর কাছে পৌঁছে যায় নন্দপ্রসাদ হাইস্কুলের অস্টম শ্রেণির ছাত্র সঞ্জয় সিংহ। তাঁর মন্ত্রীর অটোগ্রাফ চাই। তাঁকে নিরাশ করেননি মন্ত্রী। সঞ্জয় বলে, “কোনও মন্ত্রীকে আমি এত কাছ থেকে দেখেনি। অটোগ্রাফ নেব না কেন?” সেখান থেকে কিছুটা পথ হেঁটে যাওয়ার পর মন্ত্রীকে ঘিরে ধরেন নন্দপ্রসাদ বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা ও ছাত্রীরা। সেখানে পৌঁছে যান নকশালবাড়ি হিন্দি হাইস্কুলের শিক্ষক ছাত্ররা। তাঁরা মন্ত্রীকে ফুলের মালা পরিয়ে অভ্যর্থনা জানান। তাঁরা মন্ত্রীর কাছে সীমানা প্রাচীর, খেলার মাঠে দাবি করেন। এর পরেই মন্ত্রী হাসপাতাল রোড ধরে এগিয়ে চলেন তোতারামজোতের দিকে। একটি মসজিদের পক্ষ থেকে মন্ত্রীকে অভর্থ্যনা জানানো হয়। তাঁরা মসজিদ সংলগ্ন মাদ্রাসার উন্নতি, কবরস্থানে আলোর ব্যবস্থা-সহ একাধিক দাবি জানান। সেখান থেকে কালুয়াজোত, তিলারামজোত, কুমারসিংজোতে যান মন্ত্রী। বাতারিয়া নদীতে বাঁধ উঁচুর দাবি-সহ মানুষের একাধিক দাবি শোনেন। কুমারসিংজোত প্রাথমিক স্কুলের পক্ষ থেকে ছাত্ররা মন্ত্রীকে সংবর্ধনা দেন। তাঁদের মিষ্টি খাওয়ার জন্য এক হাজার টাকা দেন মন্ত্রী। কেটুগাবুরজোতে যাওয়ার পথে নয়টি বাড়িতে এখনও বিদ্যুৎ পৌঁছয়নি বলে অভিযোগ পান গৌতমবাবু। কেটুগাবুরজোতে মন্ত্রীকে ধীমাল সম্প্রদায়ের তরফে অর্ভথ্যনা জানানো হয়। সেখানে সংক্ষিপ্ত নাচের অনুষ্ঠান দেখে শিশুশিল্পীদের হাতে কিছু টাকা দেন মন্ত্রী। ধীমাল ও কোল সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা তাঁদের বিভিন্ন সমস্যার কথা জানান মন্ত্রীকে। তিনি আশ্বাস দেন, “আপনারা নিশ্চিন্তে থাকুন। মুখ্যমন্ত্রীকে আমি সব কথা জানাব। সমস্যার সমাধান হবেই।” সেখান থেকে মন্ত্রী যান মেরিভিউ চা বাগানে। সেখানেই রাতে থাকেন তিনি। |