‘চাষিদের কান্না’ বন্ধ করার জন্য ধানের অভাবী বিক্রি রুখতে কোমর বাঁধছে রাজ্য সরকার। চলতি খরিফ চাষের মরসুমে ধানের অভাবী বিক্রি বন্ধ করতে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। তাঁর এই হুঁশিয়ারির লক্ষ্য প্রধান বিরোধী দল সিপিএম। সেই সঙ্গে সরকারের অন্যতম শরিক দল কংগ্রেসের দিকেও আঙুল তুলছেন খাদ্যমন্ত্রী। তাঁর অভিযোগ, ধানের অভাবী বিক্রির ব্যাপারে কৃষকদের উস্কানি দিচ্ছে সিপিএম। আর তাদের সঙ্গে তাল মেলাচ্ছে কংগ্রেস। এই অবস্থায় চাষিদের উদ্দেশে মন্ত্রীর বার্তা, কেউ অভাবী বিক্রিতে ইন্ধন জোগালে থানায় তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ করুন।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে ইতিমধ্যেই জেলায় জেলায় প্রশাসনকে এ ব্যাপারে সজাগ করে দিয়েছে খাদ্য দফতর। যে-ভাবেই হোক, ধানের অভাবী বিক্রি ঠেকাতে হবে বলে প্রত্যেক জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তার জন্য সব রকম ব্যবস্থা নিতে বলেছেন খাদ্যমন্ত্রী। গত বছরেও অনেক চাষি জলের দরে ধান বেচতে বাধ্য হয়েছিলেন বলে অভিযোগ। এর ফলে অনেক চাষি আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছিলেন বলেও সরব হয় বিরোধী শিবির। খাদ্যমন্ত্রী বলেন, “গত বছর চাষিদের কান্না শোনার পরেই ঠিক করেছি, ওটা (ধানের অভাবী বিক্রি) বন্ধ করতে হবে।”
তা হলে চাষিদের অভাবের মোকাবিলা করা হবে কী ভাবে? খাদ্যমন্ত্রী জানান, সহায়ক মূল্যে চাষিদের কাছ থেকে ধান কেনার বিশেষ ব্যবস্থা থাকবে। আগামী ১ অক্টোবর রাজ্যে ২০১২-’১৩ আর্থিক বছরের খরিফ ধান কেনা শুরু করার কথা। এ বার সাধারণ চালের সহায়ক মূল্য ঠিক হয়েছে কুইন্টাল-প্রতি ১২৫০ টাকা। জ্যোতিপ্রিয়বাবু জানান, চাষিদের কাছ থেকে নগদে ধান কেনা হবে না। চেকের মাধ্যমে দাম মেটানো হবে। সেই লক্ষ্যে ইতিমধ্যেই সারা রাজ্যে কৃষকদের ‘জিরো ব্যালান্স’-এ ব্যাঙ্কের পাশবই দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। কোনও চাষি যদি ব্যাঙ্কে যেতে না-পারেন, সরকারই তাঁর অ্যাকাউন্ট খুলে দেবে। মন্ত্রী জানান, ব্যাঙ্ককর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে ঠিক হয়েছে, কোনও চাষি তাঁর দু’টি ছবি এবং যে-কোনও একটি সচিত্র পরিচয়পত্র ব্লক অফিসে পাঠিয়ে দিলেই খাদ্য দফতর তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলার ব্যবস্থা করবে এবং পাশবই পাঠিয়ে দেবে বাড়িতে। রাজ্যে ছ’শতাংশ চাষির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলা বাকি বলে জানান খাদ্যমন্ত্রী। ধান কেনার জন্য এ বার ৪৪টি মহকুমায় কৃষি বিপণন দফতরের গুদামে স্থায়ী শিবিরের আয়োজন করবে খাদ্য দফতর। এ ছাড়াও সরাসরি চাষিদের কাছ থেকে ধান কিনতে সারা রাজ্যে ৯০০০ শিবির খোলা হবে। গত বছর এই ধরনের ৬৯০০ শিবিরের ব্যবস্থা হয়েছিল।
খাদ্যমন্ত্রীর আশ্বাস, কোনও চাষি দেরিতে ধান কেনার শিবিরে পৌঁছলেও তাঁদের ভুগতে হবে না। সেই ধান তাঁরা সরকারি শিবিরেও রেখে যেতে পারবেন। ধান পাহারা দেবেন সরকারি কর্মীরা। পরের দিন প্রথমেই সেই ধান বিক্রির ব্যবস্থা হবে সংশ্লিষ্ট শিবিরে। কিন্তু সহায়ক মূল্যে ধান বিক্রির এই সরকারি উদ্যোগে বিধায়কদের কাছে এখনও প্রত্যাশিত সাড়া মিলছে না বলে মন্ত্রীর অভিযোগ। তিনি বলেন, “সব বিধায়ককেই বলা হয়েছে, তাঁদের এলাকায় ধান কেনার জন্য কোথায় ক’টি শিবির করা দরকার, সেটা যেন জানিয়ে দেন। কিন্তু এ-পর্যন্ত মাত্র ৬৯ জন বিধায়ক তা জানিয়েছেন।” চাষিদের সহায়তার ক্ষেত্রে বিধায়কদের একাংশের এই নিস্পৃহতায় রাজ্যেরই ক্ষতি বলে মন্তব্য করেন খাদ্যমন্ত্রী। |