বাঁধা গত ভেঙে
নতুন ভাষা চায় যুব সিপিএম

কিউবায় বৃষ্টি হলে ময়দানে ছাতা খুলে দাঁড়ান কমরেডরা! সিপিএম বলতে কি তা-ই?
চালু এই রসিকতায় ধরা আছে যে পরিচয়, সেই ফ্রেম এ বার ভেঙে বেরোতে চাইছে সিপিএমের যুবরা।
রাজনৈতিক পরিস্থিতির ধাক্কায় সিপিএমের একের পর এক গণসংগঠনের সদস্যসংখ্যা নিম্নমুখী। ঠেকায় পড়ে সিপিএম বুঝছে, তরুণ প্রজন্মকে আকর্ষণের জন্য আন্দোলনের ধরন, স্লোগানের ভাষায় পরিবর্তন দরকার। দরকার বাঁধা গত ছেড়ে বেরোনো।
এই ক’দিন আগেই সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী মিছিলের নামে যারা কলকাতা অচল করে দিয়েছিল, তাদেরই যুব সংগঠন ডিওয়াইএফআইয়ের সর্বভারতীয় সম্মেলনে অনুভূত হচ্ছে অন্য রকম তাগিদ! বেঙ্গালুরুতে মঙ্গলবার শুরু-হওয়া যুব সংগঠনের নবম সর্বভারতীয় সম্মেলনের খসড়া রাজনৈতিক-সাংগঠনিক প্রতিবেদন মেনে নিচ্ছে যে পদ্ধতিতে তারা আন্দোলন করে, যে ভাষায় নেতারা বক্তৃতা করেন, তাতে যুব প্রজন্মকে আকর্ষণ করা নিতান্তই কঠিন। বিষয়বস্তুতে এবং পরিবেশনের ভঙ্গিতে অতএব পরিবর্তন চাই!
‘সাম্রাজ্যবাদের কালো হাত ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও’-এর জমানা যে অতীত, অবশেষে কি সেই বোধোদয় হচ্ছে সিপিএমের? এক কথায় উত্তরটা সম্ভবত ‘না’-ই। কারণ, বিজেপি-র কাছে যেমন ‘হিন্দুত্ব’, সিপিএমের কাছে তেমনই ‘সাম্রাজ্যবাদ’। দু’দলের হৃদয়ের খুব কাছাকাছি বিষয় দু’টো। তার মধ্যেই সিপিএম চাইছে নতুন এক মোড়ক বার করে আনতে। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্যের কথায়, “সাম্রাজ্যবাদের বিরোধিতা ছেড়ে দিতে হবে, এমন কথা আসছে কোথা থেকে? আমরা বলছি, বাঁধা গতের আন্দোলন থেকে বেরোতে হবে। আন্দোলন-সংগ্রামের ধারা পাল্টাতে হবে। সব জনগোষ্ঠীর জীবন-যন্ত্রণা থেকে তুলে আনতে হবে আন্দোলন। তাতে আরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছে দলের ভিত্তিও প্রসারিত হবে।”
যুব সিপিএমের প্রতিবেদনে কিন্তু এই ‘বাঁধা বুলি’ নেই। সেখানে ‘সফল প্রচারাভিযানের গুরুত্বপূর্ণ দিক’ শীর্ষক এক পরিচ্ছদ রাখা হয়েছে। যেখানে পরিষ্কারই বলা হয়েছে: ‘আমাদের প্রচারে সেই ভাষাই ব্যবহার করা উচিত, যার সঙ্গে তরুণ-তরুণীরা সড়গড়। কঠিন রাজনৈতিক পরিভাষার ব্যবহার এড়িয়ে চলাই উচিত। সঠিক ভাবে যুব সংগঠন করতে গেলে কোনও রাজনৈতিক দলের প্রচারের ধরন ও ভাষা অনুকরণ করা উচিত নয়’। সর্বশেষ জনগণনা অনুযায়ী যে দেশের মোট জনসংখ্যার ৯২%-রই বয়স ৫৯ বছরের নীচে, সেখানে আন্দোলনের এই কাঠিন্যই সিপিএমকে বৃহত্তর যুব সমাজের কাছে পৌঁছতে দেয়নি বলে মেনে নেওয়া হয়েছে প্রতিবেদনে। পরামর্শ দেওয়া হয়েছে: ‘চিরাচরিত পদ্ধতিগুলির পাশাপাশি প্রচারের নতুন প্রকরণ নিয়েও আমাদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাতে হবে।... প্রতিটি যুবকের কাছে পৌঁছতে এ পথের কোনও শর্ট-কাট নেই’!
সিপিএমের একাংশ বলছে, যুগের হাওয়া বুঝে গোটা পার্টিই পাল্টানোর চেষ্টা শুরু করেছে। নইলে ‘রায়গঞ্জে বেল, মাজদিয়ায় জেল’-এর মতো সহজ-পাচ্য স্লোগান আসত না! কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের একাংশ মহারাষ্ট্রের উদাহরণ দিচ্ছেন। যে রাজ্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত পলিটব্যুরো সদস্য সীতারাম ইয়েচুরি ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে নানা শহরে রাজ্য কমিটির বৈঠক করার পরীক্ষামূলক পথ নিয়েছেন। যাতে একসঙ্গে নানা জায়গায় ঘুরতে ঘুরতে পারস্পরিক বাঁধন পোক্ত হয়। নিজের বক্তৃতায় আজকাল হামেশাই নানা সরস গল্প (জোক্স), পুরানের কাহিনি উল্লেখ করেন ইয়েচুরি। মার্কিন আগ্রাসন, পুঁজিবাদের কৌশলের বৃত্তান্ত শুনতে শুনতে কর্মী-সমর্থকদের যাতে ঘুম না পেয়ে যায়, তার জন্য ইয়েচুরি এই দাওয়াই কাজে লাগাচ্ছেন। মহারাষ্ট্রেই অল্পসংখ্যক সর্বক্ষণের কর্মীদের নিয়ে নির্দিষ্ট সময় অন্তর বৈঠকে বসে তাঁদের সুবিধা-অসুবিধার কথা জানতে চাওয়া হচ্ছে। যাতে তাঁরা ভরপুর উৎসাহে মানুষের কাছাকাছি ‘কাজ’টা করতে পারেন।
যুব সিপিএম মনে করছে, নিজেদের আরও ‘আকর্ষণীয়’ করে তোলাই বেঁচে থাকার পথ। যে জন্য সোস্যাল নেটওয়ার্ক-সহ প্রচারমাধ্যমের আরও যুগোপযোগী ব্যবহারের উপরে তারা জোর দিচ্ছে। যে যুবদের জন্য কর্মসূচি, তাদের আর্থ-সামাজিক কাঠামো খতিয়ে দেখে কাজে নামার কথা বলা হচ্ছে। বেঙ্গালুরুর রিপোর্ট জোর দিচ্ছে ‘বহুমুখী কর্মকাণ্ডে’র উপরেও। যার মধ্যে ক্ষেত্রবিশেষে সাংস্কৃতিক কর্মসূচি, এমনকী খেলাধুলোর কথাও আসছে!
শেষমেশ কোথাও কী দেখা যাচ্ছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছায়া?



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.