অবশেষে অবসান অপেক্ষার। সকাল থেকেই চাইছিলাম, আজ যেন চেন্নাইয়ে বৃষ্টি না হয়। ভাগ্য ভাল, সেটা হয়নি। আর সে জন্যই ভারতীয় ক্রিকেটের সবসেরা প্রত্যাবর্তনটা দেখতে পেলাম।
সবসেরা প্রত্যাবর্তন বলছি এই কারণেই যে, এর আগে কাউকে ক্যানসারকে হারিয়ে এ ভাবে মাঠে ফিরে আসতে দেখিনি। আর শুধু ফেরা! ন’মাস পর একটা ছেলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরে ২৬ বলে ৩৪ করছে। দু’খানা বিশাল ছক্কা মারছে। এই ব্যাটিং দেখে কেউ বলবে, ওই ন’মাসের বেশির ভাগ সময়টাই ওর কেটেছে আমেরিকার হাসপাতালে?
ধোনি যখন টসে জিতে ফিল্ডিং নিল, বুঝলাম ব্যাট হাতে যুবরাজের মাঠে ফেরা দেখার জন্য আর একটু বেশিই অপেক্ষা করতে হবে। তবে সেই অপেক্ষার পুরস্কারও পেলাম। ভেত্তোরিকে মারা ছয়টাতে সেই ‘ভিন্টেজ’ যুবির ছাপ। তার আগে ও একটা বাউন্ডারিও মেরেছিল। পরে ওরামকেও একটা ছয় মারল। একেবারে যুবরাজোচিত ঢঙে। যুবি ব্যাট হাতে নামার আগে ভাবছিলাম ও কি আগের মতো পেটাতে পারবে? ওর মহাপ্রত্যাবর্তনের ইনিংস দেখেই আমি নিশ্চিত, যুবরাজ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জন্য পুরো তৈরি। টাইমিং ঠিক আছে। রিফ্লেক্স অটুট। শুধু রানিং বিটুইন দ্য উইকেটস-এ একটু মন্থর লাগল। সেটাও মনে হয় কয়েকটা ম্যাচ খেললে ঠিক হয়ে যাবে। আশা করছি, সামনেই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আবার যুবরাজকে দেখব ভারতীয় দলের পারফরম্যান্সকে শৃঙ্গে নিয়ে যেতে। ঠিক যে ভাবে গত বছর বিশ্বকাপটা ও দিয়েছিল আমাদের।
চণ্ডীগড়ে থাকার সময় থেকে যুবরাজের বাবা যোগরাজ সিংহকে চিনতাম। যোগরাজ কিন্তু ছেলের মতো এতো সাহসী ছিল না। ও নেটে অসাধারণ ছিল। কিন্তু ম্যাচে নয়। আর যুবরাজ মাঠে বাঘের বাচ্চার মতো খেলে। একেই আমরা পঞ্জাবিতে বলি শের পুত্তর। সেই শের পুত্তরকেই চেন্নাইয়ের মাঠে দেখলাম। হয়তো ওর শরীরী ভাষায় এখনও সেই পুরনো জোশটা ফেরেনি। কিন্তু ব্যাটিংয়ের জোশটা আগের মতোই রয়েছে। সত্যিই স্বপ্নের প্রত্যাবর্তন!
ব্যাটিংয়ের আগে অবশ্য দেখতে চাইছিলাম যুবরাজ কী রকম ফিল্ডিং করে। ধোনি যুবরাজকে খুব বুদ্ধি করে দাঁড় করিয়েছিল। ফলে খুব বেশি বলের পিছনে ধাওয়া করতে হল না। হাতে গোনা কয়েকবার ওর কাছে বল পৌঁছাল। তার মধ্যেই একটা ওই উঁচুতে উঠে যাওয়া ক্যাচ। সব মিলিয়ে ফিল্ডিংয়েও ওকে বেশ আত্মবিশ্বাসীই দেখাল।
প্রথম ছ’ওভারের ‘ফিল্ড রেস্ট্রিকশন’ উঠে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সাত নম্বর ওভারে যুবরাজকে ধোনি নিয়ে এসেছিল ওর বাঁ-হাতি স্পিনের জন্য। প্রথম ওভারে মাত্র চার রান দিল। তবে দু’নম্বর ওভারটা ছিল বেশ নাটকীয়। ম্যাকালাম ওকে নির্মম ভাবে গ্যালারিতে ফেলল। তার পরই সোজা বোলারের পাশ দিয়ে জোরালো শট। যুবরাজ বাঁ হাত বাড়ালেও ধরতে পারেনি। উল্টে চোট পেল। আমাকে অনেকে জিজ্ঞাসা করছিলেন, রিফ্লেক্স কমে যাওয়ার জন্যই ক্যাচটা মিস করল যুবি? আমার উত্তর, একেবারেই না। যে রকম জোরে ম্যাকালাম বলটা মেরেছিল ততে ওই কঠিন সুযোগ যে কেউই মিস করত। বরং যুবরাজের রিফ্লেক্স ঠিক ছিল বলেই অত জোরে মারা শটেও হাত পৌঁছেছিল ওর।
শুধু একটা চিন্তাই মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে পরপর ম্যাচ খেলতে হবে। সেই ধকলটা যুবরাজ কত তাড়াতাড়ি কাটিয়ে উঠতে পারবে? তবে মনে হয়, সেটাও ও পারবে। প্রত্যাবর্তনেই যে যুবরাজ এ রকম দুর্দান্ত খেলবে সেটাই বা ক’জন ভেবেছিল? সত্যিই ‘যুবি ক্যান’!
|