কচি মুখগুলোয় খুশি উপছে পড়ছিল। ‘পুলিশ কাকু’র হাত থেকে বইগুলো নিয়ে উল্টেপাল্টে দেখছিল ছোট-ছোট হাত। ‘হাঁদাভোদা’, ‘বাঁটুল দি গ্রেট’, ‘গুপি গাইন-বাঘা বাইন’ আরও কত কি! এরা সকলেই যৌনকর্মীর সন্তান। শেওড়াফুলি গড়বাগানের স্কুলপড়ুয়া এই ছেলেমেয়েদের জন্য একটি পাঠাগার তৈরি হল হুগলি জেলা পুলিশের উদ্যোগে। পাঠ্যবই, গল্পের বই ছাড়াও সচেতনতামূলক নানা বই থাকবে এখানে।
মঙ্গলবার বিকেলে গড়বাগানের দুর্বার মহিলা সমন্বয় সমিতির অফিসে পাঠাগারটির উদ্বোধন করেন পুলিশ সুপার তন্ময় রায়চৌধুরী। কলেবরে ছোট হলেও দুর্বারের কর্মকর্তা এবং যৌনকর্মীরা বেজায় খুশি। তাঁদের আশা, এই ‘প্রান্তিক গোষ্ঠী’র ছেলেমেয়েদের শিক্ষাপ্রসারে সহায়ক হবে এই পাঠাগার। পাঠাগারটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘কিশলয়’। দুর্বার মহিলা সমন্বয় সমিতির লোকজনই সেটি চালাবে। |
দুর্বারের কর্তারা জানান, জেলা পুলিশের তরফে বইয়ের র্যাক দেওয়া হয়েছে ওই পাঠাগারে। ইতিমধ্যেই কয়েকশো বই দেওয়া হয়েছে। পুলিশ সুপার বলেন, “পুলিশকর্মীরা ব্যক্তিগত উদ্যোগে বই জোগাড় করে দিয়েছেন। আরও বই আমরা দেব। ওরা পড়ুক। শিখুক। জানুক।” পুলিশ সুপারের কথায়, “পিছিয়ে পড়া এই গোষ্ঠীর ছেলেমেয়েরা আর পাঁচ জনের মতো বেড়ে উঠুক, সমাজে মাথা উঁচু করে দাঁড়াক, এটাই চাই। সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখেই পাঠাগার তৈরির বিষয়টি মাথায় আসে। ওরা নিশ্চয়ই পড়াশোনা করে বড় হবে।” নাতিদীর্ঘ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (শিল্পাঞ্চল) অমিতাভ বর্মা, শ্রীরামপুরের এসডিপিও রাজনারায়ণ মুখোপাধ্যায়, আইসি তথাগত পাণ্ডে।
শেওড়াফুলি স্টেশন লাগোয়া এই যৌনপল্লিতে কয়েকশো যৌনকর্মী যুক্ত। এক সময় নানা সমস্যায় জর্জরিত ছিলেন যৌনকর্মীরা। পুলিশের একাংশের অত্যাচার, দুষ্কৃতীদের আনাগোনায় তটস্থ থাকতে হত। ছেলেমেয়েদের শিক্ষার বালাই ছিল না বললেই চলে। সমাজের একটা বড় অংশ যৌনকর্মীদের তো বটেই, তাঁদের ছেলেমেয়েদেরও দেখত ‘বাঁকা চোখে’। গত কয়েক বছর ধরে দুর্বারের হাত ধরে একটু একটু করে বদলাচ্ছে পরিস্থিতিটা। এই মূহূর্তে এই পল্লির অন্তত ৬০ জন ছেলেমেয়ে লেখাপড়া করে। প্রথম থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত এই ছাত্রছাত্রীদের দুর্বার অফিসে ‘কোচিং’ও দেওয়া হচ্ছে। শিক্ষা সংক্রান্ত বিষয়গুলিতেও নজরদারির অভাব নেই দুর্বারের। সংগঠনের তরফে শেওড়াফুলি কেন্দ্রে ছেলেমেয়েদের শিক্ষা প্রকল্পের কাউন্সিলর সায়নী দে জানালেন, ‘কোচিং ক্লাসে’র পাশাপাশি নিয়মিত নাচ-গানের চর্চা করে বাচ্চারা। যোগাসন শেখানো হয়। চলছে ফুটবল প্রশিক্ষণও। |