সম্পাদকীয় ২...
পরিবর্তনের আশা
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ভিসা সংক্রান্ত বিধি সরল করার সিদ্ধান্তটি আপাতদৃষ্টিতে অকিঞ্চিৎকর। কিন্তু এই বিষয়টিতেই ঐকমত্য অর্জিত হইতে যখন দীর্ঘ কাল অতিবাহিত হয়, তখন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করা কঠিন হয় না। পূর্বের বৈঠকে দুই দেশের বিদেশমন্ত্রী এই বিষয়ে চুক্তিবদ্ধ হইতে পারেন নাই। তাঁহাদের ঘাড়ে অতীতের বোঝা ছিল। এই দফায় ভারতীয় বিদেশমন্ত্রী এস এম কৃষ্ণ এবং পাক বিদেশমন্ত্রী হিনা রব্বানি খার সেই বোঝা নামাইয়া বৈঠকে বসিয়াছিলেন। উভয় পক্ষই সিদ্ধান্ত করে, বিরোধের বিষয়গুলি উত্থাপনই করা হইবে না, উভয়ের অভিন্ন স্বার্থবাহী বিষয়গুলি লইয়াই আলোচনা কেন্দ্রীভূত থাকিবে। হাতে-নাতে তাহার ফলই ভিসা-বিধি সরলীকরণের চুক্তি।
এই চুক্তির ফলে লাভবান হইবে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য। ভিসা বিধির উদারীকরণের ফলে অতঃপর দুই দেশের ব্যবসায়ী-শিল্পপতি, লগ্নিকারীরা বছরে অন্তত পরস্পরের পাঁচটি শহরে অবাধে যাতায়াত করিতে পারিবেন। তাঁহাদের ঘন-ঘন পুলিশে রিপোর্ট করিতে হইবে না। দুই দেশের পর্যটক-দলই আরও সহজে পরস্পরের দেশে যাইতে পারিবেন। সর্বোপরি সীমান্তের নিয়ন্ত্রণ-রেখাও উন্মুক্ত করিয়া দেওয়া হইবে। পাকিস্তান গত বছর ভারতকে ব্যবসাবাণিজ্যের ক্ষেত্রে ‘সর্বাধিক সুবিধাপ্রাপ্ত রাষ্ট্র’-এর মর্যাদা দিবার অভিপ্রায়ের কথা ঘোষণা করার পর হইতেই দুই দেশ দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য অবাধ করিতে নানা ব্যবস্থা গ্রহণ করিতেছে। ভিসা-বিধির উদারীকরণ তাহারই অঙ্গ। ইহাতে রাষ্ট্রীয় ও সরকারি লেনদেনের বাহিরেও দুই দেশের জনসাধারণের মধ্যে পারস্পরিক যাতায়াত ও আদানপ্রদানের সুযোগ বৃদ্ধির ফলে পরস্পরের প্রতি বিরূপতা এবং বিদ্বেষও লাঘব হইতে পারে। আর এখানেই বাণিজ্যিক চৌহদ্দির বাহিরেও চুক্তিটির প্রাসঙ্গিকতা ও গুরুত্ব।
পাকিস্তান হইতে যত বেশি সংখ্যক ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, লগ্নিকারী, সাধারণ পর্যটক ও বিশিষ্ট নাগরিকরা ভারতে আসিবেন, ভারতবাসীর উষ্ণ আতিথ্য গ্রহণ করিবেন, ততই ভারত সম্পর্কে তাঁহাদের ধারণা স্পষ্ট হইবে। একই কথা পাকিস্তানে পর্যটন ও বিনিয়োগে যাওয়া ভারতীয়দের সম্পর্কেও প্রযোজ্য। এই যাতায়াত, আদানপ্রদান ও বিনিময় যত বেশি হইবে, দুই দেশেরই উগ্রজাতীয়তাবাদী ও কট্টর-সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীগুলির প্রভাব জনসমাজে হ্রাস পাইবে। প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারির নেতৃত্বে পিপল্স পার্টির সরকার মৌলবাদীদের প্রভাব হইতে পাক সমাজকে মুক্ত করার যে প্রচেষ্টা চালাইতেছে, আইএসআই ও সামরিক আমলাতন্ত্রের ভারতবিদ্বেষী প্রচার হইতে জনসাধারণকে দূরে সরাইবার যে প্রচ্ছন্ন প্রয়াস দেখা যাইতেছে, তাহাতেও সহায়ক হইবে এই চুক্তি। বাণিজ্য অবাধ হইলে যে উভয় দেশেরই লাভ, দুর্ভাগ্যবশত অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বাধ্যতায় সেই সত্যটি প্রায়শ ঘুলাইয়া যায়। ভারতের বিদেশ নীতিতে এক কালে অর্থনীতিকে অনেক কম গুরুত্ব হইত। দ্বাররুদ্ধ অর্থনীতির যুগে তাহাই স্বাভাবিক ছিল। উদার নীতির কল্যাণে সেই দূরত্ব কমিয়াছে। আর্থিক লেনদেন ও সহযোগিতা কূটনীতিকে অনেক বেশি প্রভাবিত করিতেছে। পাকিস্তানের সহিত সম্পর্কের ক্ষেত্রেও তাহার অন্যথা হওয়া উচিত নহে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.