‘মিকাপ থোকলো তুমলাগানু আথৌবাসা
ইয়োথখ্রাগানি নরমদম মিয়ানচানা’।
মণিপুরে অনুপ্রবেশ-বিরোধী যৌথ মঞ্চের সভাপতি সাপামটা যদুমণির লেখা গানের অর্থ হল,
“ভূমিপুত্ররা জেগে ওঠো
বহিরাগতরা তোমার জমি গ্রাস করতে আসছে।”
আপাতত, গোটা উত্তর-পূর্ব এই সুরেই তাল মিলিয়েছে। অসম সংঘর্ষের রেশ টেনে, রাজ্যে-রাজ্যে ইনার লাইন পারমিট চালুর দাবিতে শুরু হয়েছে আন্দোলন। কিন্তু, ৪ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মুল্লাপল্লি রামচন্দ্রন সাফ জানিয়ে দেন, ১৮৭৩ সালের, বেঙ্গল ইস্টার্ন ফ্রন্টিয়ার রেগুলেশন অনুযায়ী অরুণাচল, মিজোরাম, নাগাল্যান্ডের মতো ইনার লাইন পারমিটের ব্যবস্থা মণিপুরে চালু করা সম্ভব নয়। ফলে, আপাতত, মেঘালয় ও মণিপুরে জটিলতা চরমে। ৫ সেপ্টেম্বর, মণিপুরের সাতটি প্রধান জঙ্গি গোষ্ঠীর হুমকি নোটিস জারি করে জানিয়ে দিয়েছে, সব বহিরাগতকে, ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে রাজ্য ছাড়তে হবে।
নিম্ন অসমে ও বড়োভূমিতে হালের সংঘর্ষ এই প্রথমবার উত্তর-পূর্বের ছ’টি রাজ্যকে বিদেশি অনুপ্রবেশকারী বহিষ্কারের দাবিতে এক সুতোয় বেঁধেছে। অরুণাচল, নাগাল্যান্ড, মিজোরামে যাওয়ার জন্য ইনার লাইন পারমিটের বেড়া থাকলেও মণিপুর ও মেঘালয়ে সেই দেওয়ালটুকুও নেই। অসম সংঘর্ষের প্রেক্ষাপটে, মণিপুর ও মেঘালয়ে ইনার লাইন চালুর দাবি তাই চরমে। পরিস্থিতি এমনই, দুই রাজ্যের সরকারও বিরোধিতা করার জায়গায় নেই। কিন্তু, কেন্দ্র সাফ জানিয়ে দিয়েছে, নতুন করে ইনার লাইন চালু করার সম্ভাবনা নেই। এই অবস্থায়, কংগ্রেস শাসিত দুই রাজ্য সরকার ঘরে-বাইরে বিপদের মুখে। আশঙ্কা, অনুপ্রেবশকারী হঠানোর কোপ ভিনরাজ্যের ‘বহিরাগত’দের উপরে পড়তে চলেছে।
২০১১ সালের সমীক্ষা অনুযায়ী মণিপুরের জনসংখ্যা ২২,৯৩,৮৯৬। এর মধ্যে বহিরাগতর সংখ্যাই ৭ লক্ষ ৪ হাজার। এই পরিস্থিতিতে, প্রধান বিরোধী দল তৃণমূল কংগ্রেস-সহ বেশ কটি সংগঠন একযোগে, আইএলপি চালু করার জন্য আন্দোলনে নামে। বিশিষ্ট নাট্যকর্মী কে বি শর্মা ও গায়ক টাপতারা অনশন করছেন, গান বাঁধছেন। ইনার লাইন পারমিট চালু করার স্বপক্ষে, মন্ত্রীসভা একমত হয়ে কেন্দ্রের কাছে আবেদন পাঠায়। কিন্তু, কেন্দ্র জুলাই মাসে ও সেপ্টেম্বরে আইএলপি চালু করার সম্ভাবনা নাকচ করে দেয়। পরের দিনই, রাজ্যের জঙ্গি সংগঠনগুলির যৌথ মঞ্চ হুমকি দেয়, সব অনুপ্রবেশকারী ও বহিরাগতকে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে রাজ্য ছেড়ে চলে যেতে হবে। বাড়িওয়ালাদেরও বহিরাগতদের বাড়ি ভাড়া দিতে নিষেধ করা হয়েছে। জঙ্গিদের দাবি, মণিপুরের জনসংখ্যার ৪৬ শতাংশ, নাগাল্যান্ডের এক তৃতীয়াংশ ও মেঘালয়ের ১৪ শতাংশ মানুষ বহিরাগত। এমনটা চলতে দেওয়া যাবে না। রাজ্য সরকার, সব ‘প্রকৃত ভারতীয়’ নাগরিকের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিলেও, গত দুই বছরে, জঙ্গিদের হাতে অর্ধশতাধিক হিন্দীভাষীর মৃত্যু সকলকে আতঙ্কে রেখেছে। কেন্দ্র ইনার লাইনের দাবি নাকচ করে দেওয়ায়, রাজ্য সরকারের হাতে আপাতত জঙ্গিদের জবাব দেওয়ার কোনও অস্ত্রই নেই। তবে, সরকার তেড়েফুঁড়ে রাজ্যজুড়ে বিদেশি চিহ্নিতকরণ ও বহিষ্কার করা শুরু করেছে।
মেঘালয়েও ইনার লাইন পারমিট চালু করার জন্য বেশ কিছু সংগঠন আন্দোলনে নেমেছে। শিলং-এ দফায় দফায় চলছে অবস্থান বিক্ষোভ। মুখ্যমন্ত্রী মুকুল সাংমাও অনুপ্রবেশের সমস্যা মেনে নিয়েছেন। |