পঞ্চায়েত ভোটের আগে দলের সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধি করতে প্রদেশ কংগ্রেসকে ‘আন্দোলনমুখী’ হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে হাইকম্যান্ড। বস্তুত, লোকসভা ভোটের কথা মাথায় রেখেই কংগ্রেস হাইকম্যান্ড পশ্চিমবঙ্গে সাংগঠনিক শক্তি বাড়াতে দলের রাজ্য নেতৃত্বকে ‘জোরদার আন্দোলন’ করার জন্য সবুজ সঙ্কেত দিতে চলেছে। সে দিকে লক্ষ্য রেখে প্রদেশ কংগ্রেসে সাংগঠনিক রদবদলের সম্ভাবনাও রয়েছে।
পঞ্চায়েত ভোটের আগেই মমতা-সরকারের নানা ‘দুর্নীতি’ ও ‘জনস্বার্থে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্পের রূপায়ণে ব্যর্থতা’ নিয়ে প্রদেশ নেতৃত্ব ‘আগ্রাসী প্রচারে’ নামুক চায় হাইকম্যান্ড। কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতার কথায়, “রাজ্য কংগ্রেস নেতৃত্ব মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের বিরুদ্ধে যে আক্রমণাত্মক নন, তা নয়। কিন্তু এই মুহূর্তে তা কার্যত সাংবাদিক বৈঠক করা বা সংবাদমাধ্যমে প্রতিক্রিয়া দেওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। এতে সাংগঠনিক শক্তি বাড়ানো সম্ভব নয়। বরং পঞ্চায়েত ভোটের আগে যা জরুরি তা হল, গ্রামোন্নয়নের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের অর্থ খরচ করতে না পারা, রাজ্যে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ও প্রশাসনিক ব্যর্থতার বিষয়গুলি নিয়ে রাস্তায় নেমে আন্দোলন করা।”
বস্তুত, আজ, বুধবার কলকাতার নজরুল মঞ্চে যুব কংগ্রেসের প্রথম পঞ্চায়েতিরাজ সম্মেলন থেকেই আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করার ইঙ্গিত দিয়েছেন সংগঠনের নেতৃত্ব। সম্মেলনের জন্য যে রাজনৈতিক প্রস্তাবের খসড়া-পুস্তিকা তৈরি হয়েছে, তাতে ‘পঞ্চায়েতি ব্যবস্থার বিকেন্দ্রিকরণের নামে আমলাশাহীকরণে’র সমালোচনা করা হয়েছে। মমতা-সরকার পঞ্চায়েত ব্যবস্থা নজরদারির দায়িত্ব নির্বাচিত প্রতিনিধিদের বদলে বিডিও এবং এসডিও-দের হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তের বিরোধিতাও করবে যুব কংগ্রেস। বাম আমলের ধারা মেনেই নতুন সরকারের আমলেও যে রাজ্য সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে পঞ্চায়েত চালানোর চেষ্টা চলছে, তাকে কটাক্ষ করা হয়েছে পুস্তিকায়। যুব কংগ্রেসের রাজ্য সভানেত্রী মৌসম বেনজির নূরও জানিয়েছেন, জোটে থাকার বাধ্যবাধকতায় না থেকে কেন্দ্রীয় সরকারের ‘জনকল্যাণমূলক প্রকল্প’গুলি সামনে রেখে মানুষের কাছে পৌঁছতে হবে।
সম্মেলনে পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত এআইসিসি-র সাধারণ সম্পাদক শাকিল আহমেদের থাকার কথা। কংগ্রেস সূত্রে বলা হচ্ছে, সম্মেলনে দিল্লির বার্তা এটাই হবে যে, পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূলের সঙ্গে জোট যখন হচ্ছে না, তখন কংগ্রেসের প্রধান লক্ষ্য হবে যত বেশি সম্ভব আসন জিতে আসা। লোকসভা ভোটের আগে আসন বন্টনের ক্ষেত্রে সেটাই নির্ণায়ক ভূমিকা নেবে।
জাতীয় স্তরে তৃণমূলের বিরুদ্ধে অবশ্য কোনও নেতিবাচক মন্তব্য এখনই করবেন না কংগ্রেস কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। বরং রাজ্যকে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার প্রশ্নে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম রাজ্য সরকারের সঙ্গে যে রকম আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন তা চলবে। কিন্তু একই সঙ্গে কংগ্রেস নেতৃত্ব বুঝতে পারছেন, জমি বিল, খুচরো ব্যবসায় প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নি, পেনশন বা বিমা বিলের মতো বিষয়ে তৃণমূল কেন্দ্রকে খুব বেশি সাহায্য করবে না। বরং সুযোগ পেলেই কংগ্রেসকে চাপে রাখতে চাইবে। বিশেষ করে রাজ্যস্তরে কংগ্রেসকে আরও কোণঠাসা করার কোনও সুযোগই তৃণমূল ছাড়বে না।
লোকসভা ভোটে তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে জোটে থাকবে কিনা তা অনিশ্চিত। কংগ্রেসের এক কেন্দ্রীয় নেতার কথায়,“কেরলের ধাঁচে পশ্চিমবঙ্গে দলের সংগঠন গঠন করা দরকার।” প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি হিসাবে প্রদীপ ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ না থাকলেও, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের অনেকের মতে, “অপেক্ষাকৃত তরুণ কোনও নেতাকে প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি করা হোক। যাতে গোটা রাজ্য ঘুরে তিনি সংগঠনকে শক্তিশালী করে তুলতে পারেন। ঠিক যেভাবে কেরলে রমেশ চেন্নিথালাকে প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি করা হয়েছিল।” কংগ্রেসের অভ্যন্তরীণ দলাদলির মধ্যে না গিয়ে চেন্নিথালা ‘আক্রমণাত্মক প্রচারে’র মধ্যে দিয়ে ‘ইতিবাচক ফল’ এনে দিয়েছিলেন। সেদিক থেকে বহরমপুরের সাংসদ অধীর চৌধুরীর নাম অগ্রাধিকারের তালিকায় রয়েছে। তবে প্রদীপবাবুকে প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি পদ থেকে সরানো হলে, তাঁকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় মন্ত্রী করা হতে পারে। কংগ্রেসের অন্য অংশের মত হল, পঞ্চায়েত ভোটের আগে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি পরিবর্তন না করাই ভালো। বরং পশ্চিমবঙ্গের কংগ্রেস নেতাদের মধ্যে থেকে দু’জনকে কেন্দ্রে মন্ত্রী করা হোক। সে ক্ষেত্রে অধীর ও দীপা দাশমুন্সির নাম শোনা যাচ্ছে। অবশ্য এআইসিসি-র অন্দরের খবর, সূত্র যাই হোক শেষ পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গ থেকে একজনকেই মন্ত্রী করা হবে। |