ফের জটিলতা তৈরি হল ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কাজ নিয়ে। বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিটের অধিগৃহীত ন’টি বাড়ির ভাড়াটেদের কাছ থেকে নেওয়া ঘর ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট।
বৃহস্পতিবার বিচারপতি জ্যোতির্ময় ভট্টাচার্য এই রায় দিয়ে বলেন, অবিলম্বে ওই ভাড়াটেদের ঘর ফিরিয়ে দিতে হবে। হাইকোর্টের বক্তব্য, ১৮৮৪ সালের জমি অধিগ্রহণ আইন অনুযায়ী এই উচ্ছেদ করা হয়নি। ফলে বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিটে আপাতত নির্মীয়মাণ মেট্রো প্রকল্পের কাজ চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয় বলেই জানা গিয়েছে।
এই ন’টি বাড়ির ভাড়াটেরা ২০১০ সালে কলকাতা হাইকোর্টে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করেন। কেন্দ্রীয় সরকারও হলফনামা দিয়ে নিজেদের বক্তব্য জানায়। পাল্টা বক্তব্যে আবেদনকারীরা জানান, বাড়ির মালিকদের ক্ষেত্রে জমি অধিগ্রহণ আইন মেনে ব্যবস্থা নেওয়া হলেও, ভাড়াটেদের ক্ষেত্রে তা হয়নি। গত ২৪ জানুয়ারি রাজ্য সরকার ওই বাড়িগুলি অধিগ্রহণ করে। যার অর্থ, ভাড়াটেদের কাগজে-কলমে চলে যেতে বলা।
২০০৯ সালে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর জন্য জমি অধিগ্রহণ করা নিয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়। স্থির হয়, সল্টলেক সেক্টর ফাইভ থেকে শুরু হয়ে মেট্রো মাটির উপর দিয়ে এসে ফুলবাগানে মাটির নীচে ঢুকবে। এর পরে শিয়ালদহ থেকে বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিট ধরে মহাকরণ হয়ে গঙ্গার নীচ দিয়ে হাওড়া পৌঁছবে। ফুলবাগান থেকে হাওড়া পর্যন্ত যেহেতু মেট্রো যাবে মাটির তলা দিয়ে, তাই উপরে কোনও বাড়ি ভাঙার প্রয়োজন নেই। শুধু স্টেশন তৈরির জন্য কোথাও কোথাও কিছু বাড়ি অধিগ্রহণ করতে হবে।
বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিটের উপরে সেন্ট্রাল স্টেশনের সঙ্গে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর স্টেশন যুক্ত করার জন্য ভাঙতে হবে কয়েকটি বাড়ি। সমস্যা তা নিয়েই। ‘সেন্ট্রাল ক্যালকাটা সিটিজেন্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’ হাইকোর্টে জানায়, রাজ্য সরকার স্থির করেছিল, ওই ন’টি বাড়ির ভাড়াটেদের ১ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। কিন্তু হাইকোর্ট এ দিন জানায়, এই ক্ষতিপূরণ প্রস্তাব জমি অধিগ্রহণ আইন অনুযায়ী হয়নি। ওই বাড়িগুলিতে এই ভাড়াটেদের অনেকের দোকানও আছে। অর্থাৎ, তাদের জীবিকাও ওই জায়গার উপরেই নির্ভরশীল। ফলে জমি অধিগ্রহণ ছাড়াও উপার্জন হারানোর বিষয়টিও এর সঙ্গে যুক্ত বলে জানায় হাইকোর্ট। বিচারপতি জানিয়েছেন, অবিলম্বে ভাড়াটেদের যে জায়গা থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে, তা ফিরিয়ে দিতে হবে। যে বাড়িগুলিতে এই রায় প্রযোজ্য হবে সেগুলি হল: ৩৮, ৩৯(২), ৪০(পি), ৪১(পি), ৪২, ৪২(৫), ৪৫, ৪৫(১) ও ৪৩(২) বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিট।
ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো করিডর প্রকল্পের এম ডি সুব্রত গুপ্ত জানান, হাইকোর্টের রায় তাঁরা জেনেছেন। পরিবহণ দফতরের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। |