বকুনির পরেই অঘটন
স্কুলের পোশাকেই বহুতল থেকে পড়ে মৃত্যু দুই কিশোরীর
সাউথ সিটির পরে পঞ্চসায়র। ফের বহুতলের ছাদ থেকে নীচে পড়ে অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটল দক্ষিণ কলকাতায়। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পূর্ব যাদবপুর থানার পঞ্চসায়র এলাকায় একটি অভিজাত বহুতলের ছাদ থেকে পড়ে নবম শ্রেণির দুই ছাত্রীর মৃত্যু হয়। গত ৩০ অগস্ট রাতে সাউথ সিটির ছাদ থেকে পড়ে মারা যান দুই মেয়ে এবং বৃদ্ধা মা। সেই রহস্য পুরোপুরি ভেদ হয়নি এখনও। এ দিন দুই স্কুলছাত্রীর অস্বাভাবিক মৃত্যুর কারণ নিয়েও গভীর রাত পর্যন্ত ধোঁয়াশা কাটেনি।
পুলিশ জানায়, পঞ্চসায়রে মৃত দুই কিশোরীর নাম সবিবাচন্দন মদন ও নেহা পঞ্চওয়ানি। দু’জনেই বিডি মেমোরিয়াল স্কুলে পড়ত। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের অনুমান, আবাসনের একটি ১৮তলা টাওয়ারের ছাদ থেকে দু’জনে একসঙ্গে ঝাঁপ দেয়। সবিবা ওই আবাসনেরই বাসিন্দা। তার বাবা আমদানি-রফতানির ব্যবসা করেন। নেহার বাড়ি বাঁশদ্রোণী এলাকার ব্রহ্মপুরের সাউথ এন্ড পার্ক এলাকায়। পোশাক তৈরির ব্যবসা আছে তার বাবার।
এখানেই পড়ে ছিল দুই ছাত্রীর দেহ। ইনসেটে, পঞ্চসায়র এলাকার ওই বহুতল। ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য
পুলিশি সূত্রের খবর, এ দিন সন্ধ্যা পৌনে ৬টা নাগাদ সবিবাদের বহুতলের পিছন দিকের পার্কিং লটের দিকে বেসমেন্টের উপরে ভারী কিছু পড়ার শব্দ শুনে ফণিভূষণ প্রধান নামে আবাসনের এক নিরাপত্তারক্ষী ছুটে যান। তিনি বলেন, “ধুপ করে কিছু পড়ার শব্দ পেয়ে ছুটে যাই। দেখি, স্কুলের পোশাক পরা দু’টি মেয়ে দু’দিকে পড়ে আছে।” এক জন চিত হয়ে পড়ে ছিল, অন্য জনের নাক থেকে রক্ত বেরোচ্ছিল বলে নিরাপত্তারক্ষীরা পুলিশকে জানান। দেহ দু’টির পাশে পড়ে ছিল এক পাটি জুতো, একটি কানের দুল আর ক্লিপ। দুই কিশোরীকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরে চিকিৎসকেরা দু’জনকেই মৃত বলে ঘোষণা করেন। চিকিৎসকেরা পুলিশকে জানিয়েছেন, উপর থেকে নীচে পড়ে সবিবার মাথা থেঁতলে যায়, ঘাড়ও ভেঙে গিয়েছিল। নেহার মাথা ও নাক থেকে রক্ত বেরোচ্ছিল।
ওই আবাসনে একটি টাওয়ারের ১০তলায় ৯০৭ নম্বর ফ্ল্যাটটি সবিবাদের। এ দিনের ঘটনার পরেই অসুস্থ হয়ে পড়েন তার বাবা অতুলচন্দন মদন। তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। পুলিশ জানায়, সিসিটিভি-র ফুটেজ অনুযায়ী বিকেল ৫টা ৩৫ মিনিটে ওই দুই কিশোরী আবাসনে ঢোকে। সবিবার বাবা অতুলবাবু দুই কিশোরীকে নিয়ে যেতে নীচে নেমেছিলেন। নিরাপত্তারক্ষীরা জানান, সেখানেই দু’জনকে বকাঝকা করতে শুরু করেন অতুলবাবু। পুলিশ জানায়, ঘরে ঢোকার পরে মা শিবানীদেবীর সঙ্গে ঝগড়াঝাঁটি হয়েছিল সবিবার। রক্ষীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জেনেছে, দুই কিশোরীকে নিয়ে অতুলবাবু ১০তলার ফ্ল্যাটে যাওয়ার কিছু পরেই তিনি নিরাপত্তারক্ষীদের ফোন করে জানান, দু’টি মেয়েই ফের ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে গিয়েছে। তারা যাতে আবাসনের বাইরে যেতে না-পারে, রক্ষীদের সেটা দেখতে বলেন তিনি। ওই দুই কিশোরী তত ক্ষণে ফ্ল্যাটের দরজা বাইরে থেকে বন্ধ করে দিয়েছে। তার কিছু পরেই দু’জনের নীচে পড়ার ঘটনা ঘটে।
নিজের মেয়ে সবিবাকে বকাঝকা করলেও অতুলবাবু কেন নেহাকে বকবেন, পুলিশের কাছে সেটা স্পষ্ট হয়নি। ডিসি (সাউথ সুবার্বান) সুজয় চন্দ বলেন, “দুই কিশোরীর পরিবারের সঙ্গেই কথা বলে জট খোলার চেষ্টা হবে। সব দিকই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” পুলিশ রাতেই আবাসনের ওই টাওয়ারের ছাদে গিয়ে তদন্ত চালায়। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের ধারণা, দুই কিশোরী আত্মহত্যা করেছে।
রাত ৮টা নাগাদ নেহার পরিবারকে খবর দেয় পুলিশ। তার কাকা প্রদীপ পঞ্চওয়ানি জানান, স্কুল থেকেই টিউটরের কাছে চলে যেত নেহা। সেখান থেকে বাড়ি ফিরতে ফিরতে রাত ৮টা হয়ে যেত। তাই এ দিন বাড়ির কারও কোনও চিন্তা হয়নি। পুলিশের কাছ থেকে খবর পেয়ে তাঁরা ছোটেন হাসপাতালে। নেহার মা কবিতাদেবী বলেন, “সবিবাকে চিনতাম না। ও কখনও আমাদের বাড়িতে আসেনি। মেয়ের কাছে মোবাইল থাকত না। তাই ওর সঙ্গে যোগাযোগ হয়নি।”
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.