গণধর্ষণের পরে মোবাইল লুঠ করাটাই কাল হয়ে গেল। দিন ঘুরতে না-ঘুরতে সেই মোবাইলের সূত্র ধরেই দশ জনকে ধরে ফেলল পুলিশ। আরও পাঁচ জনকে খোঁজা হচ্ছে।
রবিবার রাতে দুর্গাপুরের যে এলাকায় তরুণীকে গণধর্ষণ করা হয়, সেই পিয়ালা কালীবাড়ি ও শ্মশানের আশপাশে দুষ্কৃতীদের আনাগোনার কথা পুলিশেরও জানা। কিন্তু সোমবার রাতভর অভিযান চালিয়ে যাদের ধরা হয়েছে, তাদের মধ্যে মাত্র এক জনের নাম আগে পুলিশের খাতায় উঠেছিল। আট জন একটি ছাপাখানার ঠিকাকর্মী। বাকি এক জন দশম শ্রেণিতে পড়া এক কিশোর।
মঙ্গলবার কলকাতায় রাজ্য পুলিশের ডিজি নপরাজিত মুখোপাধ্যায় বলেন, “ধর্ষণের ঘটনায় ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ চটজলদি ব্যবস্থা নিয়েছে।” ধৃতদের সকলেরই বয়স ১৮ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে। আসানসোল-দুর্গাপুরের পুলিশ কমিশনার অজয় নন্দের দাবি, ৫ জন সরাসরি ধর্ষণে যুক্ত থাকার কথা কবুল করেছে। বাকিরা পরোক্ষ ভাবে জড়িত। দুর্গাপুর আদালতে তোলা হলে বিচারক তাদের ১৪ দিন জেল হাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। পরে অভিযোগকারিণীকে দিয়ে এদের শনাক্ত করানো (টিআই প্যারেড) হবে। |
ধৃতদের দুর্গাপুর আদালতে তোলা হচ্ছে। মঙ্গলবার। —নিজস্ব চিত্র |
যে তরুণীকে ধর্ষণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ, তাঁর বাড়ি দুর্গাপুরেরই বিধাননগরে। আসানসোলের একটি ডায়গনস্টিক সেন্টারের অংশীদার তিনি। মাস দুয়েক আগে বিয়ে হয়েছে। রবিবার রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ কর্মস্থল থেকে গাড়িতে ফিরে তিনি পিয়ালা কালীবাড়ির কাছে নামেন। ২ নম্বর জাতীয় সড়কে মোটরবাইক নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন তাঁর স্বামী। বাড়ি ফেরার আগে রাস্তার পাশে গাছের আড়ালে প্রাকৃতিক কাজ সারতে গেলে কয়েক জন তাঁকে টেনে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ। আরও কয়েক জন মারধর করে তাঁর স্বামীকে আটকে রাখে। দু’জনেরই মোবাইল কেড়ে নেওয়া হয়। পরে একটি এটিএম কাউন্টারে গিয়ে নিরাপত্তারক্ষীর মোবাইল থেকে তাঁরা পুলিশে খবর দেন।
সে রাতে পুলিশ কারও হদিস পায়নি। কিন্তু ছিনতাই হওয়া মোবাইল দু’টি চালু ছিল। সংশ্লিষ্ট মোবাইল সংস্থার থেকে ‘টাওয়ার লোকেশন’ জেনে নেয় পুলিশ। দেখা যায়, ফোন দু’টি পিয়ালা গ্রামেই রয়েছে। খোঁজখবর নিয়ে সোমবার সন্ধ্যায় রাজেশ কোড়া নামে এক যুবককে আটক করা হয়। পুলিশের দাবি, তার বিরুদ্ধে আগে লোহাচুরির অভিযোগ ছিল। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বাকিদের কথা জানা যায়। এর মধ্যে আট জন সিটি সেন্টারে যে ছাপাখানায় ঠিকাকর্মীর কাজ করে, রাত ২টো নাগাদ সেখান থেকে বেরোনোর সময়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। হিন্দি, বাংলা মিলিয়ে পাঁচটি দৈনিক সংবাদপত্র ও একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা সেখানে ছাপা হয়।
ওই ছাপাখানার ম্যানেজার ঈশ্বর মণ্ডল জানান, ওই ঠিকাকর্মীরা পত্রিকা গোনা, বাঁধাই ও গাড়িতে তোলার কাজ করেন। বিভিন্ন সংবাদপত্রের তরফে ঠিকাদারকে বরাত দেওয়া হয়। তিনি লোক জোগাড় করে কাজ করান। ছাপাখানা বা পত্রিকার সঙ্গে এদের সরাসরি যোগাযোগ নেই। |
রাজ্যে শ্লীলতাহানি বাড়ছে, এই অভিযোগে মানব-শৃঙ্খল গড়ে প্রতিবাদ বামফ্রন্টের।
মঙ্গলবার যাদবপুর থানার সামনে রাজীব বসুর তোলা ছবি। |
দশম শ্রেণির যে পড়ুয়াকে ধরা হয়েছে, তার বাড়ি হুগলির হালদারদিঘি গ্রামে। পড়াশোনার জন্য দিদিমার কাছে থাকে। দিদিমা সম্বরী কোড়ার দাবি, “ভোর সাড়ে ৫টা নাগাদ পুলিশ ওকে ঘুম থেকে তুলে নিয়ে যায়।” ছাপাখানার ঠিকাকর্মীদের বাড়ির লোকেদের দাবি, কাগজ ছাপা শুরু হয় রাত ১২টার পরে। কাজ শেষ করে বাড়ি ফিরতে-ফিরতে রাত ২টো পেরিয়ে যায়। সে ক্ষেত্রে, কী করে তারা ওই সময়ে ঘটনাস্থলে থাকল তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
অজয় নন্দ অবশ্য দাবি করেন, “তদন্তে নিশ্চিত হয়েই সবাইকে ধরা হয়েছে। বাকিদেরও দ্রুত ধরা হবে।” তাঁর ব্যাখ্যা, ছাপাখানার ওই কর্মীরা সম্ভবত সময়ের আগেই বেরিয়ে এসেছিল। স্থানীয় ডিভিসি মোড়ে নৈশ ফুটবল দেখে ফিরছিল কয়েক জন। পরে একজোট হয়ে তারা দুষ্কর্ম করে। পুলিশ জানায়, রাজেশ কোড়া ছাড়া ছাপাখানার এক কর্মীকেও দিন পনেরো আগে সিটি সেন্টার বাসস্ট্যান্ড থেকে আটক করা হয়েছিল। মদ্যপ অবস্থায় মহিলাদের উদ্দেশে অশালীন মন্তব্যের অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে। পরে ছেড়ে দেওয়া হয়। সরকারি আইনজীবী কল্যাণকুমার বন্ধু জানান, ধৃতদের বিরুদ্ধে গণধর্ষণ ও চুরির অভিযোগ আনা হয়েছে। ধৃতদের হয়ে কোনও আইনজীবী দাঁড়াননি। অভিযোগকারিণী এবং তাঁর স্বামী জানান, পুলিশের তৎপরতায় তাঁরা খুশি। |