দেখো দেখো, একেবারে তোমার মতো দেখতে হয়েছে! চিৎকার করে উঠল এমিলি। ডেলিভারি রুম থেকে সদ্যোজাত মেয়েকে নিয়ে ছুটল স্বামী মাইকের কাছে। বাবার সঙ্গে মেয়ের পরিচয় করিয়ে দিতে হবে তো।
মেয়ের দিক থেকে চোখ ফেরাতে পারছিলেন না সিন্ডি রুথজেল। নাতনির জন্ম দিয়ে যে এত সুখ পাওনা ছিল, বোধ হয় কল্পনাও করতে পারেননি ৫৩ বছরের প্রৌঢ়া!
হ্যা। নাতনিরই জন্ম দিলেন শিকাগো শহরের বাসিন্দা সিন্ডি। মেয়ে এমিলির জন্য তাঁর জন্মদিনের উপহার।
সালটা ২০১০। হঠাৎই চিকিৎসকেরা জানালেন এমিলির ক্যানসার হয়েছে। জরায়ুমুখ ক্যানসার। তাঁকে বাঁচাতে হলে একমাত্র উপায় অস্ত্রোপচার। কিন্তু কী করে সম্ভব? গর্ভে যে সন্তান। অস্ত্রোপচার করা মানেই তো সন্তানের অবধারিত মৃত্যু। শুধু তা-ই নয়, আর কোনও দিন মা হতে পারবেন না এমিলি। তাঁকে বাঁচাতে বাদ দেওয়া হল জরায়ু। বেঁচে গেল এমিলি।
|
এমিলি জর্ডন (বাঁ দিকে) ও তাঁর অন্তঃসত্ত্বা মা। ১৯ অগস্টের ছবি। |
কিন্তু তাঁর মা হওয়ার স্বপ্ন... না সেটা শেষ হয়নি। কী ভাবে? এগিয়ে এলেন সিন্ডি। কী ভাবে মেয়েকে এই দুর্বিসহ মানসিক যন্ত্রণার হাত থেকে বাঁচাবেন, দিনরাত সেটাই ভাবছিলেন। হঠাৎ একটা খবর নজরে পড়ে সিন্ডির। ৩৪ বছর আগেকার ঘটনা। ব্রিটেনের লুইস ব্রাউন প্রথম টেস্ট টিউব বেবি। খবরটা পড়ার পর থেকেই কেমন যেন অস্থির লাগছিল সিন্ডির, আরও জানতে হবে। যদি গর্ভদাত্রী মা হওয়া যায়? কিন্তু পঞ্চাশ পেরিয়ে আর তা কি সম্ভব? হাজারো প্রশ্ন ভিড় করে সিন্ডির মাথায়। তিনি জানতে পারেন, মেনোপজের পরেও অন্যের দেওয়া ডিম্বাণুতে মা হওয়া যায়। ২০০৭-এ ৫১ বছর বয়সী এক ব্রাজিলীয় মহিলা মা হয়েছিলেন। পঞ্চাশ কেন, ষাটের কোঠাতেও মা হয়েছেন এমন নজিরও রয়েছে।
এর পর আর পিছন ফিরে তাকাননি সিন্ডি। দ্রুত যোগাযোগ করেন ডাক্তারদের সঙ্গে। নিজের ইচ্ছের কথা জানান। পাশও করে যান শারীরিক পরীক্ষায়। চিকিৎসকেরা বলেন, তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ। তাঁর সন্তান বহন করায় কোনও অসুবিধা নেই। মেয়ে-জামাইয়ের কাছে সরাসরি প্রশ্ন করেন, “যদি আমি তোমাদের সন্তানের গর্ভদাত্রী মা হই?”
মাইক বলেন, “প্রথমে সিন্ডির কথায় একেবারেই গুরুত্ব দিইনি। মনে হয়েছিল, এমন আবার হতে পারে নাকি! অসম্ভব।” কিন্তু ডাক্তারদের সম্মতি মেলায় শেষমেশ সিন্ডির কথাই থাকে। |
ছ’দিন বয়সী এলে সিনথিয়া জর্ডন। |
শুরু হয় প্রস্তুতি। মানসিক ও শারীরিক। মাইকের শুক্রাণু ও এমিলির ডিম্বাণু থেকে পরীক্ষাগারে ‘জন্ম’ হয় ভ্রূণের। পরে সেই ভ্রূণ প্রতিস্থাপন করা হয় সিন্ডির গর্ভে।
এ দিন সিন্ডি বলছিলেন, “সবাই আমাকে দেখে জিজ্ঞাসা করত, তুমি আবার মা হতে চলেছ?” সিন্ডি তাদের সবাইকে গল্প করতেন। তাঁর গল্প, এমিলির গল্প। বললেন, “মাঝে মাঝে ভয় করত। তখন এমিলি আর ওর দাদার কথা ভাবতাম। ওদের জন্মের কথা।”
৩১ অগস্ট। এমিলির মেয়ে সিন্থিয়ার জন্মদিন। সদ্যোজাত সন্তানকে কোলে নিয়ে এমিলি বলেন, “যে দিন ক্যানসার ধরা পড়েছিল, মনে হয়েছিল জীবনটা ছারখার হয়ে গেল। কেন এমন হল? আজ মনে হয়, জীবনটা বোধ হয় এর থেকে বেশি সুন্দর হতে পারত না।’’ |
ইলিনয়ের নাপেরভিলে এপি-র ছবি। |