সেরেও সারছে না, ফিরছে উপসর্গ
শরীর নিংড়ে নিচ্ছে ডেঙ্গির নয়া অবতার
পসর্গে নানা জটিলতা ছিল প্রথম থেকেই। এ বার দেখা যাচ্ছে, শরীর থেকে তা যাওয়ারই নাম করছে না। উল্টে একেবারে দুর্বল করে দিচ্ছে রোগীর শরীরকে। এর ফলে রোগীর সুস্থ হয়ে উঠতে যেমন দেরি হচ্ছে, তেমনই অনেক ক্ষেত্রে ফিরে আসছে ডেঙ্গির পুরনো উপসর্গও। অর্থাৎ, রোগটা সেরেও সারছে না।
এ বার অগস্টের গোড়া থেকে ডেঙ্গি সংক্রমণে কিছু অস্বাভাবিকতা লক্ষ করেছিলেন চিকিৎসক এবং পরজীবী বিশেষজ্ঞরা। ডেঙ্গির সাধারণ উপসর্গ বলতে যা বোঝায়, সেগুলি দেখা যায়নি অনেক আক্রান্তের মধ্যেই। তাই উপসর্গভিত্তিক রোগ নির্ণয়ে সমস্যা হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই গোড়ায় ঠিক মতো চিকিৎসাই শুরু করা যায়নি।
সমস্যা এ বার অন্য জায়গায়। ডেঙ্গি রোগীদের চিকিৎসা করছেন যে চিকিৎসকেরা, তাঁদের একাংশের বক্তব্য, রোগীর পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠতে অনেক বেশি সময় লাগছে। সাধারণত হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যেই রোগীরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারেন। কিন্তু এ বার দেখা যাচ্ছে, পনেরো দিন পরেও মাথা তুলে দাঁড়াতে কষ্ট হচ্ছে। শরীরে শ্বেত কণিকার সংখ্যা অস্বাভাবিক কম থাকছে। কারও কারও ক্ষেত্রে রক্তাল্পতা বা অ্যানিমিয়াও হয়ে যাচ্ছে। শরীরের ভিতরে ঢুকে ভাইরাসের হামলার ধরন-ধারণ বদলে যাওয়াতেই এই সমস্যা হচ্ছে বলে পরজীবী বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
উত্তর নেই
ভাইরাস কি শরীরে তাদের ঠাঁই বদল করেছে
শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরির প্রক্রিয়া কি বাধা পাচ্ছে
ভাইরাস কি অস্থিমজ্জাকে সরাসরি প্রভাবিত করছে
লিভারে স্থায়ী কোনও ক্ষতি হচ্ছে কি না
খাদ্যনালীতে কোনও ক্ষত হচ্ছে কি না
ভাইরাস কি নিজের চরিত্র বদলে ফেলেছে
স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিনের প্রাক্তন অধিকর্তা এবং পরজীবী বিশেষজ্ঞ অমিতাভ নন্দী জানান, এ বার ডেঙ্গি ভাইরাস শরীরে অনেক বেশি দিন থাকছে। কারও কারও ক্ষেত্রে আবার দিন পনেরো-কুড়ি পরে ফিরছে রোগটা। ডেঙ্গির জীবাণু শরীরে যে সব কোষকে আক্রমণ করে, এ বার তারও কিছু পরিবর্তন ঘটেছে বলে মনে করেন অমিতাভবাবু। তাঁর ব্যাখ্যা, “মনে হচ্ছে, শরীরের মধ্যে নতুন নতুন গ্রাহক কোষ খুঁজে নিয়েছে ডেঙ্গি ভাইরাস। যেমন লিভার, খাদ্যনালী। অস্থিমজ্জাকেও সে নিশানা হিসেবে বেছেছে বলে মনে হচ্ছে। তাই লিভার যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তেমনই অস্থিমজ্জা থেকে যথেষ্ট শ্বেত কণিকা, লোহিত কণিকা ও অণুচক্রিকা (প্লেটলেট) তৈরি হতে পারছে না। এতে বহু ক্ষেত্রে রক্তাল্পতা বা অ্যানিমিয়া হচ্ছে, কারও কারও ক্ষেত্রে শ্বেত কণিকার সংখ্যা যে পরিমাণে বাড়া উচিত, তা বাড়ছে না। কারও কারও ক্ষেত্রে অণুচক্রিকার উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। সব মিলিয়ে রোগীর স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় কাজ ব্যাহত হচ্ছে। তিনি সহজে সুস্থ হতে পারছেন না।”
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর কলেরা অ্যান্ড এন্টেরিক ডিজিজেস-এর অধিকর্তা ভাইরোলজিস্ট শেখর চক্রবর্তী বলেন, “বিভিন্ন চিকিৎসকের থেকে এ বার ডেঙ্গির উপসর্গ এবং তার প্রতিক্রিয়ার যে চিত্র পাচ্ছি, তাতে ভাইরাসের স্বভাব পরিবর্তন নিয়ে প্রশ্ন উঠে যাচ্ছে। যে সব ডেঙ্গি ভাইরাস এত দিন কলকাতা এবং সংলগ্ন এলাকায় হানা দিয়েছে, এ বারেরটা তার থেকে কতটা আলাদা তা গবেষণাতেই ধরা পড়বে।”
যে ভাবে ভাইরাসটি বহু দিন আক্রান্তের শরীরে সক্রিয় থাকছে, তাতে অ্যান্টিবডি তৈরিতে সমস্যা হচ্ছে কি না, সেই প্রশ্নও উঠছে। প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরবিদ্যা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক দেবাশিস সেন বলেন, “শরীরে অপরিচিত কিছু ঢুকলে শ্বেত কণিকাগুলি তার সঙ্গে লড়াই করে। কিন্তু দীর্ঘদিন শ্বেত কণিকা কম থাকলে শরীর কোনও রোগজীবাণুর সঙ্গেই যথাযথ লড়াই করতে পারে না। যে কোনও রোগ সহজে শরীরকে কাবু করে। তাই ডেঙ্গির পরে যাঁদের শ্বেত কণিকার পরিমাণ অত্যধিক কমে যায়, তাঁদের অন্য সংক্রমণের ভয় থাকে। তাই ওই সব রোগীর ক্ষেত্রে বাড়তি সতর্কতা প্রয়োজন।” বিশেষজ্ঞরা আরও জানাচ্ছেন, অস্থিমজ্জা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হলে শ্বেত কণিকার পাশাপাশি লোহিত কণিকা উৎপাদনেও ঘাটতি তৈরি হয়। রোগী অ্যানিমিয়ায় আক্রান্ত হন।
এ বারে ডেঙ্গি সংক্রমণে লিভার এবং খাদ্যনালীরও কিছু পরিবর্তন প্রথম থেকেই চিকিৎসকদের ধন্দে ফেলেছিল। যে ভাবে ডেঙ্গি রোগীদের হেপাটাইটিস আর ডায়েরিয়া হয়েছে, তাতে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন দিল্লির গঙ্গারাম হাসপাতাল থেকে আসা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সৌরেন পাঁজাও। পরজীবী বিশেষজ্ঞ অমিতাভ নন্দী বলেন, “লিভারের কোন কোন জায়গায় ডেঙ্গি ভাইরাস আঘাত হেনেছে, তা খুঁজে বের করতে হবে। সেই ক্ষতিটা স্থায়ী না অস্থায়ী, সেটাই দেখার বিষয়।” একই ভাবে খাদ্যনালীর কতটা ক্ষতি হয়েছে, সেটাও বিবেচ্য বিষয় বলে তিনি জানান। এ বারে ডেঙ্গি রোগীদের কারও কারও অন্যতম উপসর্গ পাতলা পায়খানা বা তীব্র কোষ্ঠকাঠিন্য। ডেঙ্গি ভাইরাস খাদ্যনালী থেকে অতিরিক্ত জল টেনে নেওয়াতেই কোষ্ঠকাঠিন্য হচ্ছে বলে শারীরবিজ্ঞানীদের মত। কিন্তু ডায়েরিয়া কেন হচ্ছে, তার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা এখনও মিলছে না।
এ ক্ষেত্রে দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠতে চিকিৎসকদের দাওয়াই, কোনও মশলাদার খাবার চলবে না। শরীরকে পুরোপুরি বিশ্রাম দিতে হবে। একবারে না পারলে বার বার খেতে হবে এবং প্রতি দিন রক্তে শ্বেত কণিকা এবং অণুচক্রিকার পরিমাণ মেপে যেতে হবে।
এ বারের ডেঙ্গির আরও যে বৈশিষ্ট চিকিৎসকদের ভাবাচ্ছে তা হল, একই রোগীর ক্ষেত্রে পনেরো-কুড়ি দিন পরে ফের উপসর্গ ফিরে আসা। ডেঙ্গির জীবাণু শরীরে ঢুকলে, তাকে প্রতিরোধ করতে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। তার ফলে দ্বিতীয় বার ডেঙ্গিবাহী কোনও মশা কামড়ালে রোগ হওয়ার সম্ভাবনা কম। চিকিৎসকেরা মনে করছেন, এ ক্ষেত্রে ডেঙ্গির জীবাণু শরীরে অনেক দিন পর্যন্ত থেকে যাচ্ছে এবং শরীরে অ্যান্টিবডিও যথাযথ ভাবে তৈরি হতে পারছে না। তাই শরীরে থাকা পুরনো ভাইরাসই ফের সক্রিয় হয়ে উঠছে। তার ফলেই এই বিপত্তি বলে মনে করছেন পরজীবী বিশেষজ্ঞরা।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.