সকাল থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছিল অপেক্ষার পালা। তাঁর নিজের শহর চণ্ডীগড়ে যখন উৎসবের মেজাজ, তখন বিশাখাপত্তনম স্টেডিয়ামে দুপুর থেকেই লোকে ভিড় জমাতে শুরু করে দিয়েছিলেন। গ্যালারিতে ঝুলছিল বিশাল ব্যানার: ‘গুডবাই ক্যানসার, ওয়েলকাম ব্যাক সিক্সার’।
কিন্তু বৃষ্টি এসে সব পণ্ড করে দিয়ে গেল। ক্যানসারকে জয় করে ফিরে আসা যুবরাজের ক্রিকেট মাঠে প্রত্যাবর্তন পিছিয়ে গেল আরও কয়েকটা দিনের জন্য। এ দিন রাত সওয়া আটটা নাগাদ আম্পায়াররা ভারত-নিউজিল্যান্ডের প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচ বাতিল ঘোষণা করেন। এর পরও যুবরাজ মাঠে নেমেছিলেন। তাঁকে দেওয়া স্মারক গ্রহণ করতে।
দিন দু’য়েক আগে বিশাখাপত্তনমে নামার পর থেকে টুইট করে গিয়েছিলেন যুবরাজ। আকুল প্রার্থনা ছিল, বৃষ্টি যেন না হয়। যুবরাজের এই প্রার্থনায় অবশ্য উপরওয়ালা সাড়া দেননি। |
ম্যাচ বন্ধ থাকার ফাঁকেই টিভি-তে রবি শাস্ত্রীর সঙ্গে কথা বলছিলেন যুবরাজ। “একটা সময় ভাবিইনি আবার মাঠে ফিরতে পারব। দেশের হয়ে খেলতে পারব। কিন্তু বলে না ওষুধের চেয়ে প্রার্থনা বড় হয়। আমার হয়ে প্রচুর মানুষ প্রার্থনা করেছেন। আমার পাশে দাঁড়িয়েছেন।”
বাইরে তখন টানা বৃষ্টি। সে দিকে তাকিয়ে যুবরাজ বলছিলেন, “দুর্ভাগ্য, এখানে বৃষ্টির জন্য খেলাটা হল না। মাঠে নামার জন্য আমি আর অপেক্ষা করতে পারছি না।” শাস্ত্রী মনে করিয়ে দিলেন, কেউ কেউ বলছিলেন, তোমার প্রত্যাবর্তন কি একটু তাড়াতাড়ি হয়ে গেল? তুমি ঠিক কতটা ফিট? যুবরাজের জবাব, “আমার শরীর ট্রেনিংয়ে খুব ভাল সাড়া দিয়েছে। এনসিএ-তে প্রচুর পরিশ্রম করেছি। আমার বিশ্বাস, ভাল কিছু করতে পারব। ছন্দটা ফিরে পেতে হয়তো কয়েকটা ম্যাচ লাগতে পারে।” যুবরাজ জানাচ্ছিলেন, এনসিএ-তে তিন মাস ট্রেনিং করেছেন। এমনকী গোটা দু’য়েক প্রস্তুতি ম্যাচও খেলেছেন। সব মিলিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরতে তৈরি তিনি।
তৈরি ছিল দর্শককুলও। সব টিকিট শেষ। মা শবনম চলে এসেছিলেন মাঠে। স্টেডিয়ামের চারদিক ব্যানারে ছেয়ে গিয়েছিল। কোথাও লেখা: ‘যুবি, আবার আমরা তোমার থেকে ছ’বলে ছ’টা ছয় চাই।’ কেউ নিয়ে এসেছেন ‘সিক্সারের রাজা আবার ফিরে এসেছে’ লেখা ব্যানার। এমনকী যুবরাজের সঙ্গে একই প্রার্থনা করতে দেখা যায় গ্যালারিকেও: ‘ঈশ্বর, দয়া করে বৃষ্টি থামিয়ে দাও। আমরা যুবরাজকে আবার দেখতে চাই’।
ঈশ্বর সাড়া দেননি এ দিন। খেলা যে হবে না, তা মাঠের অবস্থা দেখে আগেই ভাগেই বুঝে গিয়েছিলেন যুবরাজরা। পুরনো স্মৃতি ঘাঁটতে ঘাঁটতে যুবরাজ বলছিলেন, “আমি যখন যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসা করাচ্ছিলাম, তখন ভারত খেলছিল অস্ট্রেলিয়ায়। কয়েকটা ম্যাচ হেরেছিল। খুব খারাপ লাগছিল খেলতে পারছিলাম না বলে। এমনকী ইউ টিউবে আমার কয়েকটা ইনিংসও দেখছিলাম ওই সময়। এক দিন হঠাৎ অনিল কুম্বলে আমার কেবিনে ঢুকে ল্যাপটপ বন্ধ করে দিয়ে বলে, এ সব থামাও। এ বার নিজের স্বাস্থ্যের উপর নজর দাও।”
তা-ই দিয়েছিলেন যুবরাজ। প্রত্যাবর্তনের দরজাতেও এসে দাঁড়িয়েছিলেন। বিশাখাপত্তনমে তা আর হল না। এ বার ভারত-নিউজিল্যান্ড দু’দল যাচ্ছে চেন্নাই। মঙ্গলবার দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি খেলতে।
কিন্তু সেখানেও যে থেকে যাচ্ছে বৃষ্টির চোখ রাঙানি। |