মার্কিন তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা আইবিএম -এর ব্যবসায়িক মানচিত্রে নতুন ভাবে জায়গা করে নিচ্ছে কলকাতা।
ছ’টি নতুন বাজার দখলের লড়াইয়ে কলকাতাকেই ‘হাব’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে আইবিএম । এর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের বাজার। রয়েছে ঝাড়খন্ড, বিহার, ওড়িশা, ছত্তিশগড় ও উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির বাজারও। মূলত অ্যানালিটিক্স বা তথ্য বিশ্লেষণ, শিক্ষা ও উৎপাদন শিল্পের দিকে নজর রেখেই এই ‘হাব’-এর পরিকল্পনা করেছে সাড়ে ১০ হাজার কোটি ডলারের বেশি আয় করা এই বহুজাতিক।
এই পরিকল্পনার মূল ভিত্তি এ রাজ্যের চিরাচরিত পুঁজি মানবসম্পদ। বিশেষত, তথ্য বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে দক্ষ মানবসম্পদকেই পাখির চোখ করে এগোচ্ছে আইবিএম। মন্দার চোখ রাঙানি উপেক্ষা করেও বিশ্ব বাজারে যে শিল্পের বৃদ্ধির হার ১১ শতাংশের উপর। সেই কারণেই কলকাতায় ‘হাব’ গড়ে পূর্বাঞ্চল ও প্রতিবেশী দেশে ব্যবসায়িক সম্ভাবনার সদ্ব্যবহার করতে চায় তারা।
আইবিএম-এর আন্তর্জাতিক ব্যবসায়িক মডেলের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই পশ্চিমবঙ্গকে একটি ‘হাব’ হিসেবে তৈরির এই পরিকল্পনা। অন্যতম কর্তা ঋতুপর্ণ মুখোপাধ্যায় জানান, নয়া ব্যবসায়িক কৌশল অনুযায়ী বিশ্ব-বাজারকে দু’ভাগে ভাগ করা হয়েছে। একটি ‘গ্রোথ মাকের্ট’, অর্থাৎ যে সব বাজার থেকে বেশি ব্যবসা আসে কিন্তু বৃদ্ধির হার একটা পর্যায়ের পর আর তেমন বাড়ছে না। যেমন আমেরিকা ও পশ্চিম ইওরোপ। অন্য দিকে রয়েছে ‘জিওগ্রাফিকাল এক্সপানশন মার্কেট’। এর মধ্যে রয়েছে ব্রাজিল, ভারত, রাশিয়া, চিন, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো সম্ভাবনাময় বাজার। এই বাজার থেকে আপাতত মোট ব্যবসার ৪০% আসে। তবে পরে এই বাজারগুলিই ছাড়িয়ে যেতে পারে পশ্চিমী দুনিয়ার ‘গ্রোথ মার্কেট’কে। |
ঠিক এই ছকেই ভারতের বাজারকেও দু’ভাগে ভেঙেছে আইবিএম। ঋতুপর্ণবাবু জানান দিল্লি, মুম্বই ও বেঙ্গালুরু এখানে ‘গ্রোথ মার্কেট’ হিসেবে চিহ্নিত। আর দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্তরের বাজারগুলি ‘জিওগ্রাফিকাল এক্সপানশন মার্কেট’-এর তালিকাভুক্ত। ঝাড়খন্ড, বিহার, ওড়িশা, ছত্তিশগড় ও উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলি এই দ্বিতীয় তালিকায় রয়েছে। আর এই বাজার দখলের দায়িত্বেই রয়েছে কলকাতা কেন্দ্র। সঙ্গে বাংলাদেশ, ভুটান ও নেপালের সম্ভাবনাময় বাজারের চাহিদাও মেটাবে কলকাতার হাব।
রাজ্যের তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের জন্য বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মতো নতুন বাজার তৈরির সম্ভাবনা আগেই জানিয়েছিল তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলির সংগঠন ন্যাসকম। এই তিন দেশ নিজেদের ‘ই-গভর্নেন্স’ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পশ্চিমবঙ্গের তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলির সাহায্য চায়। গত বছরের গোড়ায় তিন প্রতিবেশী দেশের বণিকসভার প্রতিনিধিদল কলকাতা ঘুরেও গিয়েছেন। বৈঠক করেছেন ন্যাসকমের সঙ্গে।
কলকাতা কেন্দ্রকে স্বয়ংসম্পূর্ণ ‘হাব’ হিসেবে তৈরি করতে ঢেলে সাজছে সংস্থা। তাদের দাবি, এখানে কর্মী সংখ্যাও বাড়বে। তবে কতটা, তা নিয়ে এখনই মুখ খুলতে নারাজ সংস্থা কর্তৃপক্ষ। সংশ্লিষ্ট সূত্রে খবর, কলকাতায় সব মিলিয়ে আইবিএমের কর্মী সংখ্যা এখন প্রায় ৬ হাজার। |