নজরদারির দায়িত্ব মন্টেককে
একশো দিনের কাজে ক্ষুব্ধ মনমোহন
যে একশো দিনের কাজের সাফল্যে ভর করে ২০০৯ সালে জিতেছিল কংগ্রেস, এখন সেই প্রকল্পে নজরদারির গলদ ও দুর্নীতির কথা মেনে নিলেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ স্বয়ং। আজ তিনি স্পষ্ট জানিয়েছেন, এখন যে প্রকল্প শেষ হলে এবং সার্বিক ভাবে বছর শেষে কাজের মূল্যায়ন হয়, তা এই দুর্নীতি এবং অপচয় আটকাতে যথেষ্ট নয়। তাই কাজ চলাকালীনই মূল্যায়ন তথা নজরদারির ব্যবস্থা করতে যোজনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান মন্টেক সিংহ অহলুওয়ালিয়াকে দায়িত্ব দিয়েছেন মনমোহন। যাতে প্রকল্পের কোথায় কী ফাঁকফোকর আর ঘাটতি রয়েছে, তা খুঁজে বের করে ব্যবস্থা নেওয়া যায়।
বস্তুত, একশো দিনের কাজে যে দুর্নীতি হচ্ছে, সেটা আজই প্রথম মেনে নিলেন সরকারের শীর্ষ নেতৃত্ব। গত বারের ঘোড়া যে এ বার ঠিকমতো ছুটছে না, তার মধ্যে বেশ কিছু খামতি রয়েছে, আজ কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়নমন্ত্রী জয়রাম রমেশকে পাশে নিয়ে এই সংক্রান্ত একটি সমীক্ষা রিপোর্ট প্রকাশ করতে গিয়ে সেটা স্পষ্ট করে দেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, “সংখ্যাতত্ত্বের দিক দিয়ে দেখতে গেলে এমএনরেগা বলার মতো প্রকল্প। কিন্তু সংখ্যাতত্ত্ব সব সত্যটুকু বলে না।” এর পরে তিনি বলেন, “প্রকল্প চলাকালীন যে মূল্যায়নের কাজ হয়, তার অবস্থা খুব একটা ভাল নয়। জয়রামের কাছে এই কথা শুনে তো আমি অবাক হয়ে গিয়েছি। এ ক্ষেত্রে কোথায় ফাঁকফোকর রয়েছে, তা দেখার জন্য আমি মন্টেককে অনুরোধ করব।” বিভিন্ন রাজ্যে যে এই প্রকল্পে দুর্নীতি হচ্ছে, তারও উল্লেখ করেন তিনি। জানান, যাঁরা এই প্রকল্পে কাজ করছেন, তাঁদের টাকা পেতে দেরি হচ্ছে। এই সমস্যার দ্রুত সমাধান হওয়া উচিত। বস্তুত, একশো দিনের কাজ প্রকল্পের মূল পৃষ্ঠপোষক কেন্দ্রীয় সরকার হলেও এর সাফল্য অনেকখানি নির্ভর করে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের উপরে। কাজের অর্থও স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমেই কর্মীদের হাতে পৌঁছয়। কোন রাজ্যে এই প্রকল্পের কাজ কেমন চলছে, কেন্দ্র ও রাজ্য দু’পক্ষ মিলেই তার মূল্যায়ন করে। সেই মূল্যায়ন হয় প্রকল্প শেষ হলে। আবার সামগ্রিক ভাবে প্রকল্পের বার্ষিক মূল্যায়নও হয়। মনমোহন চাইছেন, এই দুই যৌথ মূল্যায়নের পাশাপাশি প্রকল্প চলাকালীনও কাজের মূল্যায়ন হোক। তা হলে কোথায় টাকা নয়ছয় হচ্ছে, কোথায় গ্রামের লোকেরা কাজ করেও সঠিক সময়ে ভাতা পাচ্ছেন না, তা বোঝা যাবে।
এই মুহূর্তে রাজকোষের যা অবস্থা, তাতে একশো দিনের কাজের মতো সামাজিক প্রকল্পগুলি ইউপিএ সরকারের কাছে বোঝা হয়ে উঠেছে। আয় বাড়াতে বা ভর্তুকি কমাতে কোনও সংস্কারমূলক পদক্ষেপই ঠিকমতো করতে পারছেন না মনমোহন। ফলে সাধ ও সাধ্যের মধ্যে ফারাক ক্রমেই বাড়ছে। প্রণব মুখোপাধ্যায় রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী হওয়ার পরে ‘আর্থিক সংস্কারের মুখ’ মনমোহন সিংহ অর্থ মন্ত্রকের দায়িত্ব নিয়েছেন। সরকারের একটা বড় অংশ এর মধ্যে বলতে শুরু করেছে, একশো দিনের কাজ ও খাদ্য সুরক্ষা আইনের মতো কর্মসূচি আর্থিক সংস্কারের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ইতিমধ্যেই এই প্রকল্পে ১ লক্ষ ১০ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে। তবে সরকারের এই অংশটি যা-ই বলুক, কংগ্রেসের অধিকাংশ নেতাই যুক্তি দিচ্ছেন, লোকসভা ভোটের সময় দশ বছরের সরকার-বিরোধী হাওয়াকে মোকাবিলা করতে এই সব সামাজিক প্রকল্পই সাহায্য করবে। সনিয়া গাঁধীর নেতৃত্বাধীন জাতীয় উপদেষ্টা পরিষদ (এনএসি)-র সদস্য অরুণা রায়-রাও চাইছেন, এগুলি আরও বড় আকারে রূপায়িত হোক। ইউপিএ সরকারের পক্ষেও সনিয়ার পরিকল্পিত সামাজিক প্রকল্প একেবারে গুটিয়ে ফেলা সম্ভব নয়। তাই প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ টাকা নয়ছয়ের পরিমাণ যাতে কমানো যায়, যাতে আরও বেশি করে গ্রামের মানুষের কাছে পৌঁছনো যায়, এখন সেই কাজেই নামলেন মনমোহন।
একশো দিনের কাজে দুর্নীতির কথা অস্বীকার করেননি পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ও। এই দুর্নীতি দমনে কেন্দ্রের অধীনে বিশেষ অডিটের যে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, তাকে স্বাগত জানিয়েছেন সুব্রতবাবু। তবে একই সঙ্গে তিনি দাবি করেছেন, তাঁর সময়ে এই প্রকল্পের কাজে অগ্রগতি হয়েছে।
কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক এ দিন যে সমীক্ষা প্রকাশ করেছে, তাতে বলা হয়েছে, একশো দিনের কাজের অনেক ভাল দিক থাকলেও অর্থ নয়ছয় নিয়ে জনমানসে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। তবে মনমোহন আজ বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, সাম্প্রতিক কালে একশো দিনের কাজের মতো আর কোনও জনকল্যাণ মূলক প্রকল্প তৈরি হয়নি। এর ফলে গ্রামের মানুষের আয় বেড়েছে।

এই সংক্রান্ত খবর...
কেন্দ্রের অধীনে অডিট চান পঞ্চায়েতমন্ত্রী


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.