লড়তে নারাজ গোপাল, সমর্থন চেয়ে তৃণমূল নেত্রীকে ফের ফোন প্রধানমন্ত্রীর
আনসারিই প্রার্থী, সময় নেওয়ার কৌশল মমতার
তৃণমূলের প্রস্তাব খারিজ করে উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে হামিদ আনসারিকেই প্রার্থী হিসেবে বেছে নিলেন ইউপিএ-র চেয়ারপার্সন সনিয়া গাঁধী।
আজ বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে ইউপিএ-র বৈঠকে তৃণমূলের তরফে গোপালকৃষ্ণ গাঁধী এবং কৃষ্ণা বসুর নাম প্রস্তাব করেন রেলমন্ত্রী মুকুল রায়। বলেন, এঁরা দু’জনেই যোগ্য ব্যক্তি। এঁদের নামও ভেবে দেখা হোক। কিন্তু সেই প্রস্তাব খারিজ হয়ে যায়। তার আগে আনসারির পক্ষে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমর্থন চেয়ে তাঁকে ফের ফোন করেন মনমোহন সিংহ। তৃণমূল নেত্রী প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, এ ব্যাপারে তৃণমূল এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি। দু’তিন দিনের মধ্যেই তাঁরা নিজেদের অবস্থান জানিয়ে দেবেন।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে তৃণমূলের অবস্থান কী হবে, সেটাও এখনও স্পষ্ট করেননি মমতা। আজকের ঘটনার পরে দিল্লির রাজনীতির কারবারীদের নয়া কৌতূহল: উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে তিনি কী করবেন। নিজের প্রার্থী দাঁড় করাবেন, নাকি আনসারিকেই সমর্থন করবেন? মমতা মূলত যাঁকে প্রার্থী করতে চাইছিলেন, সেই গোপালকৃষ্ণ গাঁধী অবশ্য আনসারির নাম ঘোষণার পরেই বিবৃতি দিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করার কথা জানিয়ে দিয়েছেন। ঠিক রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ক্ষেত্রে যেমন জানিয়েছিলেন এ পি জে আব্দুল কালাম। তাঁর নাম বিবেচনা করে ইউপিএ-র বৈঠকে জানানোর জন্য মমতাকে ধন্যবাদ দিয়ে গোপাল বলেছেন, ভোটে লড়তে তাঁর ‘মন মানছে না’। এই অবস্থায় মমতা কৃষ্ণা বসুকে প্রার্থী করেন কিনা, সেটা দেখার।
উপরাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী মনোনয়নের জন্য ইউপিএ-র বৈঠকে মুকুল রায়,
টি আর বালু, মনমোহন সিংহ এবং সনিয়া গাঁধী। শনিবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: পিটিআই
উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে তৃণমূলের প্রস্তাব করা দু’টো নামই খারিজ হয়ে যাওয়ায় কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের সংঘাতের নতুন ক্ষেত্র তৈরি হল সন্দেহ নেই। তবে আজ ইউপিএ-র বৈঠকে অন্তত কোনও তিক্ততা দেখা যায়নি। প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন থেকেই মমতাকে ফোন করে ইউপিএ-র সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেন মুকুল। তবে বৈঠকে তিনি প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেননি, বা বৈঠক ছেড়ে বেরিয়েও যাননি। উল্টে বৈঠকের শেষে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম দাবি করেছেন, কংগ্রেস সভানেত্রী আনসারির নাম ঘোষণা করার সময় অন্য সকলের মতো মুকুলও স্বাগত জানান।
তৃণমূল সূত্রের বক্তব্য, মমতা আসলে আজ সব রকম সম্ভাবনাই খোলা রাখতে চেয়েছেন। অর্থাৎ নিজের প্রার্থী দাঁড় করানো, আনসারিকে ভোট দেওয়া এবং ভোটদানে বিরত থাকা এই তিন বিকল্পের মধ্যে একটি বেছে নেওয়ার আগে তিনি কিছুটা সময় নিয়ে রাখলেন।
বামেরা আনসারিকে ভোট দিলে মমতার পক্ষে তাঁকে সমর্থন করা কঠিন। কিন্তু আজ আনসারির জন্য সমর্থন চেয়ে সিপিএম সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাটকে প্রধানমন্ত্রীর দ্বিতীয় দফা ফোনের পরে (আনসারির নাম প্রাথমিক ভাবে ঠিক করার পরেই কারাটকে ফোন করেছিলেন মনমোহন) সিপিএম তাঁকেই সমর্থন করবে বলে জানিয়ে দিয়েছেন দলের পলিটব্যুরোর সদস্য সীতারাম ইয়েচুরি। অন্য তিন বাম দল কী করবে, তা ঠিক হবে সোমবার তাদের বৈঠকের পরে। আবার নিজের প্রার্থী দাঁড় করালে তিনি বিজেপি তথা এনডিএ এবং আঞ্চলিক দলগুলির সমর্থন পাবেন কিনা, তা-ও যাচাই করে নিতে চান মমতা। এই দুই পথের কোনওটাই গ্রহণযোগ্য না হলে ভোটদানে বিরত থাকার পথ তাঁর সামনে খোলা থাকছে বলে জানাচ্ছে তৃণমূলের ওই সূত্র।
উপরাষ্ট্রপতি পদে ইউপিএ তাঁকে দ্বিতীয় বার মনোনয়ন দেওয়ায় বন্ধু হামিদ আনসারিকে অভিনন্দন। আমার নাম নিয়ে চিন্তাভাবনা করে তাঁর ইউপিএ-র সঙ্গীদের জানানোর জন্য পশ্চিমবঙ্গের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীকেও ধন্যবাদ। আমায় অনেকে প্রশ্ন করেছেন, উপরাষ্ট্রপতি পদে লড়ব কি না। তাঁদের কাছে আমার উত্তর: ধন্যবাদ। কিন্তু না। লড়ব না। আমার মন মানছে না।
গোপালকৃষ্ণ গাঁধী
কংগ্রেস অবশ্য এখনও আশা করছে যে, মমতা শেষ পর্যন্ত তাদের প্রার্থীকে সমর্থন করবেন। কংগ্রেস নেতৃত্বের বক্তব্য, প্রণব বা আনসারির ভোটে জেতার ক্ষেত্রে সমস্যা হবে বলে তাঁরা মমতার সমর্থন চাইছেন, এমন নয়। কিন্তু শরিক হয়েও মমতা ইউপিএ-র প্রার্থীকে সমর্থন না করলে তা ‘দুঃখজনক ঘটনা’ হয়ে থাকবে।
আনসারিকে সমর্থনের বিষয়ে তৃণমূলের দু’টি কারণে আপত্তি ছিল। প্রথম কারণ, লোকপাল বিলে বিতর্কের সময় রাজ্যসভার চেয়ারম্যান হিসেবে আনসারির ভূমিকা। আজ সনিয়া অবশ্য আনসারির নাম ঘোষণার সময় বলেছেন, “তিনি গরিমা ও কৃতিত্বের সঙ্গে রাজ্যসভা পরিচালনা করেছেন।” মমতার আপত্তির দ্বিতীয় কারণ হল, গত উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে আনসারি বামেদের প্রার্থী ছিলেন।
আনসারিকে নিয়ে আর যাঁর আপত্তি থাকার সম্ভাবনা ছিল, সেই মুলায়ম সিংহ যাদবও তাঁর মনোনয়নকে স্বাগত জানিয়েছেন বলে আজ দাবি করেছেন চিদম্বরম। রাষ্ট্রপতি পদে সনিয়া প্রস্তাবিত দুই প্রার্থীর মধ্যে প্রণবকে নিয়ে যেমন আপত্তি তুলেছিলেন মমতা, তেমনই আনসারিকে মানতে চাননি মুলায়ম। উপরাষ্ট্রপতি পদে তাঁরা আনসারিকেই সমর্থন করবেন জানিয়ে সমাজবাদী পার্টির নেতা রামগোপাল যাদবের অবশ্য দাবি, “আনসারির নাম রাষ্ট্রপতি পদের জন্য আলোচনাই হয়নি।” আনসারিকে সমর্থনের কথা ঘোষণা করেছে বহুজন সমাজ পার্টিও।
আনসারি ফের উপরাষ্ট্রপতি পদে বসলে সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণের পরে তিনিই হবেন দ্বিতীয় ব্যক্তি, যিনি দু’বার উপরাষ্ট্রপতি হবেন। আজ তাঁর নাম ঘোষণা হওয়ার পরে কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের এই প্রাক্তন ছাত্র বলেন, “আমাকে যে সম্মান দেওয়া হচ্ছে, তা গ্রহণ করছি। প্রধানমন্ত্রী, ইউপিএ সভানেত্রী ও অন্যান্য দলের নেতারা আমাকে সমর্থন করেছেন। দ্বিতীয় বার এই দায়িত্ব দেওয়ার জন্য আমি ওঁদের কাছে কৃতজ্ঞ।”
তবে শুধু মুকুলের পাল্টা নাম প্রস্তাব নয়, আজ ইউপিএ-র বৈঠকে ঐক্যের সুর খানিকটা কাটে এনসিপি-র অনুপস্থিতিতেও। শরদ পওয়ার আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচির জন্য তিনি আজ থাকতে পারবেন না। তাঁর বদলে প্রফুল্ল পটেলকে বৈঠকে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু প্রফুল্লও আসেননি।
এনসিপি-র তরফে সরকারি ভাবে বলা হয়েছে, বাড়িতে একটি অনুষ্ঠান থাকায় প্রফুল্ল আসতে পারেননি। কিন্তু দলীয় সূত্রের বক্তব্য, মন্ত্রিসভার শেষ বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর পাশে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের শূন্যস্থানে যে ভাবে এ কে অ্যান্টনিকে বসানো হয়েছে, তাতে পওয়ার ক্ষুব্ধ। কারণ এর অর্থ হল, অ্যান্টনিকেই মন্ত্রিসভায় দু’নম্বর ব্যক্তির মর্যাদা দিচ্ছেন মনমোহন। অথচ পওয়ার অ্যান্টনির থেকে অনেক বেশি অভিজ্ঞ। এতে যে এনসিপি খুশি নয়, সেই বার্তা দিতেই প্রফুল্লর কাছে আজকের বৈঠকে না যাওয়ার ‘নির্দেশ’ যায়।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.