‘আমার মুখ ঢাকার দরকার নেই’, অপরাধীদের শাস্তি চান নিগৃহীতা
জ্জায় মুখ ঢাকতে চাইছেন না তিনি। বরং চাইছেন, গণমাধ্যমের সামনে দাঁড়িয়ে গোটা ঘটনার প্রতিবাদ করতে। এখন তাঁর একটাই আর্জি, অপরাধীদের শাস্তি হোক। সে জন্য প্রকাশ্যে আসতেও দ্বিধা নেই তাঁর। গুয়াহাটিতে নিগৃহীতা তরুণী আজ স্পষ্ট ভাবেই তাঁর এই মনোভাবের কথা জানিয়ে দিয়েছেন।
ঘটনার পাঁচ দিন পরে নড়ে বসেছে রাজ্য প্রশাসনও। আগেই এই ঘটনায় অভিযুক্ত ১১ জনের মধ্যে চার জনকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। বাকিদের গ্রেফতারের জন্য পুলিশকে ৪৮ ঘণ্টার সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ। এ দিন এক সন্দেহভাজনকে বিজনি থেকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেন স্থানীয়রা। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত সাংবাদিকও রাতে জানিয়েছেন, ‘নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থে’ চাকরিতে ইস্তফা দিচ্ছেন তিনি।
গত সোমবার সন্ধ্যায় ক্যামেরার সামনে আধ ঘণ্টা ধরে ২৫-৩০ জনের হাতে নিগৃহীতা হওয়ার পরেও মনের জোর হারাননি ওই তরুণী। এ দিন দিল্লি থেকে আসা কেন্দ্রীয় মহিলা কমিশন এবং রাজ্য মহিলা কমিশনের সদস্যরা একযোগে তাঁর সঙ্গে দেখা করলে ওই তরুণী স্পষ্ট জানিয়ে দেন, নিজের নাম তিনি গোপন রাখতে চান না!
জাতীয় মহিলা কমিশনের প্রতিনিধি অলকা লাম্বার সঙ্গে নিগৃহীতা তরুণী। ছবি: উজ্জ্বল দেব
তাঁর ‘ব্যতিক্রমী’ আবেদনে সাড়া দিয়ে সন্ধ্যায় কমিশন সাংবাদিক বৈঠক করে তরুণীর নাম আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা করে দেয়। কমিশনের প্রতিনিধিরা জানান, মানসিক ও শারীরিক ধকল কাটিয়ে উঠেই সকলের সামনে দাঁড়াবেন বলে জানিয়েছেন ওই তরুণী। তিনি নিজেও এ দিন বলেছেন, “আমার যা হওয়ার হয়েছে। এখন আমি চাই, ওই শয়তানগুলো ধরা পড়ুক। আমার মুখ ঢাকার আর প্রয়োজন নেই। বরং, যারা ঘটনার পরে মুখ লুকিয়েছে, তাদের মুখোশ খুলে দিতে চাই।”
মহিলা কমিশনের সদস্যরা পুলিশ-প্রশাসনের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ। তাঁরা জানান, ঘটনার দিন মেয়েটিকে ওই পরিস্থিতি থেকে রক্ষা করা তো দূর, তাঁর চিকিৎসা করানো বা তাঁকে ভরসা দেওয়ার ব্যাপারেও প্রশাসন পুরোপুরি ব্যর্থ।
কমিশন সূত্রে খবর, শৈশবেই বাবা-মায়ের সঙ্গ হারিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ওই তরুণী। এখন এক বান্ধবীর সঙ্গে তাঁর বাড়িতে থাকেন। ঘটনার দিন, ৯ জুলাই, দুই বান্ধবীকে সঙ্গে নিয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা নাগাদ একটি পানশালায় যান তিনি। এক ঘণ্টা পরে তাঁরা বাইরে আসেন। সে সময় নীচে একটি মদের দোকানের সামনে দাঁড়ানো কিছু ছেলে তাঁদের ছবি তুলতে গেলে তাঁরা প্রতিবাদ জানান। তখনই আশপাশ থেকে বেশ কয়েক জন তাঁদের ঘিরে ধরে। তাঁর দুই বান্ধবী পালাতে পারলেও আটকে পড়েন ওই তরুণী। রাত ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত গুয়াহাটির খ্রিস্টান বস্তি এলাকায় জি এস রোডে কয়েক হাজার পথচারী, সংবাদমাধ্যমের সামনে তাঁকে নিগ্রহ করা হয়। কমিশনের প্রতিনিধি অলকা লাম্বা জানান, মেয়েটিকে মারধরের পাশাপাশি তাঁর সারা গায়ে সিগারেটের ছেঁকাও দেওয়া হয়েছে।
পুলিশের জালে
বিকাশ হাফিজুদ্দিন ধনরাজ পুস্পান্দ্রা
মহিলা কমিশনের প্রতিনিধিরা এ দিন ওই পানশালার ম্যানেজার এবং আশপাশের দোকানদারদের সঙ্গেও কথা বলেন। তাঁরা জানান, মেয়েটি নিজের বয়স জানিয়েছে ২০ বছর। সুপ্রিম কোর্টের নিয়ম, ২১ বছরের কমবয়সীদের পানশালায় ঢুকতে দেওয়া বা মদ পরিবেশন করা বেআইনি। পানশালাটি নিয়ম ভাঙায় আজই সেটিকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
গোটা ঘটনার পিছনে সংবাদমাধ্যমের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। সমাজকর্মী অখিল গগৈ এ দিন অভিযোগ করেন, স্থানীয় বৈদ্যুতিন মাধ্যমের যে সাংবাদিক ঘটনাস্থলে ছিলেন, তিনিই ঘটনার মূল পাণ্ডা। ঘটনার সময়কার ভিডিও ফুটেজ নিয়েই গুয়াহাটি প্রেস ক্লাবে আসেন অখিল। ওই ভিডিও ফুটেজই ওই সাংবাদিকের অপরাধের ‘প্রমাণ’ বলে অভিযোগ করে তিনি সিডিটি রাজ্য পুলিশের ডিজি-র হাতে তুলে দিয়েছেন। ডিজি পরে বলেন, “সিডি পেয়েছি। প্রাথমিক প্রমাণ হিসেবে এটিকে অবশ্যই পর্যাপ্ত গুরুত্ব দেওয়া হবে। সিডির ছবি, শব্দ পরীক্ষার পরে আইন মেনে ব্যবস্থা নেব।” মহিলা কমিশনও সংবাদমাধ্যমের সমালোচনা করেছে। অলকাও বলেন, “মেয়েটি জানিয়েছে, ৪৫ মিনিট ধরে টিভি ক্যামেরার আলো তার মুখে পড়েছিল! ওরা অতক্ষণ ধরে ছবি না তুলে মেয়েটিকে বাঁচানোর চেষ্টাও তো করতে পারত।”
কমিশনের প্রতিনিধিরা এ দিন রাতে ওই তরুণী এবং তাঁর বান্ধবীকে নিজেদের কাছেই রাখছেন। কাল মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করবেন তাঁরা। অনিতার কথায়, “মেয়েটির শারীরিক ও মানসিক চিকিৎসার আশু প্রয়োজন। পুলিশ কোনওটাই করেনি। ওঁকে অর্থসাহায্য করার কথাও বিবেচনা করা হচ্ছে।”
ওই তরুণীর সমস্যা অবশ্য এখনই মিটছে না। যে বান্ধবীর পরিবারের সঙ্গে তিনি থাকেন, তাঁরা গোটা ঘটনায় বিপাকে পড়েছে। ঘটনার পরে বান্ধবীর মা-কে থানায় নিজের মা হিসেবেই পরিচয় দিয়েছিলেন ওই তরুণী। সেই মহিলা আজ বলেন, “এত পুলিশ, সাংবাদিক বাড়িতে আসছে। নোংরা কথা রটছে। বাড়িওয়ালা আমাদের বাড়ি খালি করতে বলেছেন।” একই সঙ্গে তাঁর আক্ষেপ, “ও আমায় মা বলেই ডাকে। কিন্তু ওর জন্য এই ভাবে নাজেহাল হব, কখনও ভাবিনি।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.