প্রণব মুখোপাধ্যায়ের মতোই পথ ‘নিষ্কণ্টক’ হচ্ছে না হামিদ আনসারির। আনসারিকে চ্যালেঞ্জ জানাতে তারা যে তৈরি, ইউপিএ প্রার্থীর নাম ঘোষণার পরেই সে কথা জানিয়ে দিল বিজেপি।
উপরাষ্ট্রপতি পদে তৃণমূল প্রার্থী দেবে এমন নিশ্চয়তা গভীর রাত পর্যন্ত নেই। এই পরিস্থিতিতে আজ উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে বৈঠকে বসেন বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব। বৈঠকের পরে দলের মুখপাত্র অনন্ত কুমার সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা উপরাষ্ট্রপতি ভোটে লড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য ১৬ তারিখ এনডিএ-র বৈঠক ডাকা হয়েছে।”
মুখে এ কথা বললেও আজকের আলোচনায় প্রার্থী হিসেবে প্রাথমিক ভাবে যশোবন্ত সিংহের নামই ঠিক হয়েছে বলে বিজেপি সূত্রের খবর। সূত্রটি জানাচ্ছে, যশোবন্ত ছাড়াও নাজমা হেপতুল্লা এবং এনডিএ-র আহ্বায়ক শরদ যাদবের নাম নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়। তবে একই সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কী করেন, সে দিকেও নজর রাখছেন বিজেপি নেতৃত্ব। মমতা যদি শেষ পর্যন্ত প্রার্থী দেন, তা হলে বিজেপি তাঁকেই সমর্থন করবে বলে দলীয় সূত্রের মত। আজ আনসারির জন্য সমর্থন চেয়ে বিজেপি তথা এনডিএ-র শীর্ষ নেতাদের ফোন করেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। লালকৃষ্ণ আডবাণী, সুষমা স্বরাজ ছাড়া জেডিইউ নেতা শরদ যাদবের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
কিন্তু এক বিজেপি নেতার কথায়, “আনসারিকে সমর্থন করা আমাদের পক্ষে অসম্ভব। বিরোধী দলের চরিত্র বজায় রাখতে গেলে জেতা-হারা মাথায় না রেখে আমাদের প্রার্থী দিতে হবে। না হলে তো দল কংগ্রেসের ‘বি-টিমে’ পরিণত হবে।”
প্রাথমিক ভাবে যশোবন্তের নাম ঠিক করলেও বিজেপি নেতৃত্বের একাংশ এখনও আন্তরিক ভাবে চাইছেন উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে নিজেদের প্রার্থী দিক তৃণমূল। দলের বক্তব্য, মমতা কৃষ্ণা বসুকে রাজি করিয়ে ভোটে লড়ুন। সে ক্ষেত্রে মমতার প্রার্থীকে সমর্থন জানাবে এনডিএ। এই ‘চাওয়ার’ একটা কারণ যেমন ইউপিএ-তে ভাঙন ধরানো, তেমনই অন্য কারণ হল, দলীয় কোন্দল এড়ানো। পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি-র একমাত্র সাংসদকে উপরাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী করতে আপত্তি রয়েছে দলের একাংশের। সুতরাং মমতা প্রার্থী দিলে তাঁকে সমর্থন করাই বিজেপি-র পক্ষে সব চেয়ে সুবিধাজনক। তবে সব রকম পরিস্থিতির জন্যই প্রস্তুত থাকতে চাইছে তারা। |
উপরাষ্ট্রপতি পদে ইউপিএ প্রার্থী হিসেবে নাম ঘোষণার পর সাংবাদিক বৈঠকে হামিদ আনসারি।
সঙ্গে সংসদীয় বিষয়ক মন্ত্রী পবন কুমার বনশল। শনিবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: পিটিআই |
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের মতো উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়েও যাতে এনডিএ-তে ভাঙন না ধরে, সে জন্যও সচেষ্ট বিজেপি। আনসারিকে সমর্থনে রাজি থাকা নীতীশ কুমারকে বোঝানোর পালা ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে। বিজেপি নেতা অরুণ জেটলি নিয়মিত ভাবে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। নীতীশ ছাড়াও এডিএমকে-র জয়ললিতা বা বিজেডি-র নবীন পট্টনায়কের মতো অ-কংগ্রেসি নেতাদের সঙ্গেও এক প্রস্ত আলোচনা সেরে রেখেছেন সুষমা স্বরাজ। কিন্তু বিজেপি-র এই চেষ্টা আদৌও সফল হবে কি না তা নিয়েও যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। বিজেপি যেমন তৎপর, তেমনই রাষ্ট্রপতি-উপরাষ্ট্রপতি ভোটে মমতাকে পাশে পেতে সক্রিয় রয়েছে কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব। গত কয়েক দিনে দফায় দফায় মমতার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব। আজ তৃণমূল নেতা তথা রেলমন্ত্রী মুকুল রায়ও সাংবাদিক সম্মেলনে একাধিক বার কংগ্রেসকে বার্তা দিয়ে জানিয়েছেন, তারা এখনও ইউপিএ-র শরিক। এমনকী ঘনিষ্ঠ মহলে তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশ স্বীকার করেছেন, এমন কোনও পদক্ষেপ করা উচিত নয় যাতে বিজেপি ফায়দা লুটে নিয়ে যায়। তা ছাড়া বিজেপির সমর্থনে নির্বাচনে লড়ার বিষয়েও আপত্তি রয়েছে দলের একাংশের। সে ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গে দলের সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্কে চিড় ধরার আশঙ্কা রয়েছে। যা দেখে বিজেপি-র একাংশ মনে করছে, শেষ পর্যন্ত হয়তো উপরাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী দেওয়া থেকে বিরত থাকবেন তৃণমূল নেতৃত্ব। |