|
|
|
|
কেঁচো খুঁড়তে কেউটে |
রোগীরা গিয়ে জানলেন ইএনটি বন্ধ শম্ভুনাথে |
সোমা মুখোপাধ্যায় • কলকাতা |
চিকিৎসকের অভাবে কার্যত উঠে গিয়েছে আস্ত একটা বিভাগই। গ্রামগঞ্জের কোনও হাসপাতাল নয়, খাস কলকাতার শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালের ঘটনা। তুলনায় ছোট হাসপাতালগুলিকে মেডিক্যাল কলেজের সঙ্গে জুড়ে দিয়ে যেখানে স্বাস্থ্য পরিকাঠামোকে প্রসারিত করার কথা বলছে স্বাস্থ্য দফতর, সেখানে ঠিক তার বিপরীত এই ছবি স্বাস্থ্যকর্তাদের সদিচ্ছা নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।
খেলতে খেলতে গলায় পেনের খাপ আটকে গিয়েছিল ছ’বছরের হোসেনুর রহমানের। যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকা শিশুটিকে নিয়ে বাড়ির কাছেই শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে যান বাবা-মা। কারণ, শৈশব থেকে টনসিলের সমস্যায় ভুগতে থাকা শিশুটির চিকিৎসা ওই হাসপাতালেই করাতেন তাঁরা। কিন্তু গিয়ে শুনলেন, যে বিভাগে তাঁরা চিকিৎসা করাতেন, সেই ইএনটি বিভাগটি চার মাস হল বন্ধ।
একই অভিজ্ঞতা অবনীশ কুমারের। গলায় ব্যথা নিয়ে শম্ভুনাথের ইএনটি বিভাগে দেখাতে এসেছিলেন তিনি। বিভাগ বন্ধ শুনে ভেবেছিলেন, বিশেষ কোনও কারণে সেই দিন হয়তো কাজ হচ্ছে না। দু’দিন পরে ফের গিয়ে শুনলেন, বিভাগ আপাতত চালু হওয়ারও কোনও সম্ভাবনাই নেই। কারণ, গোটা হাসপাতালে কোনও ইএনটি চিকিৎসকই নেই।
হাসপাতাল সূত্রের খবর, ইএনটি বিভাগে ছিলেন সাকুল্যে এক জন চিকিৎসক। সপ্তাহে চার দিন আউটডোর, দু’দিন অস্ত্রোপচার, ইন্ডোর বিভাগ সবই সামলাতে হত তাঁকে। কোনও কারণে তিনি অসুস্থ হলে বা ছুটি নিলে কাজকর্ম লাটে উঠত। গত ফেব্রুয়ারিতে ‘সবেধন নীলমণি’ সেই চিকিৎসক অবসর নেওয়ায় কার্যত বিভাগে তালা পড়ে গিয়েছে।
হাসপাতালের সুপার সৌমাভ দত্ত বলেন, “স্বাস্থ্য ভবনে বিষয়টি জানিয়েছি। ওঁরা বলেছেন, চিকিৎসক নিয়োগের ব্যবস্থা করবেন।” কিন্তু সেটা কবে হবে, তা কেউ জানে না। শম্ভুনাথের ইমার্জেন্সি বিভাগের চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, বহু ইমার্জেন্সি ইএনটি রোগী তাঁদের কাছে আসছেন। বাধ্য হয়েই তাঁদের এসএসকেএমে ‘রেফার’ করতে হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ এসএসকেএমের ইএনটি চিকিৎসকেরাও। তাঁদের বক্তব্য: একেই তাঁদের হাসপাতালে বিপুল ভিড়, তার উপরে অন্যান্য মেডিক্যাল কলেজও সেখানে রোগী ‘রেফার’ করে। এর পরে আশপাশের হাসপাতালে এই বিভাগ বন্ধ হয়ে গেলে সেই চাপও যদি তাঁদের উপরে এসে পড়ে, তা হলে তাঁদের পক্ষে যথাযথ পরিষেবা দেওয়াই দুঃসাধ্য হয়ে পড়বে।
শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতাল সূত্রের খবর, ইমার্জেন্সি ও ডায়ালিসিস বিভাগের দুই চিকিৎসক একই সঙ্গে অবসর নেওয়ায় সেই দুই বিভাগেও সমস্যা হচ্ছিল। ওই দুই ক্ষেত্রেই সংশ্লিষ্ট চিকিৎসককে পরবর্তী এক বছরের জন্য ফের নিয়োগ করা হয়েছে। যত দিন না অন্য চিকিৎসক আসছেন, তত দিন ইএনটি চিকিৎসক দেবাশিস মুখোপাধ্যায়কে রাখা হল না কেন? দেবাশিসবাবু বলেন, “আমি দু’বার আবেদন করেছিলাম। দ্বিতীয় বার স্বাস্থ্য-অধিকর্তা নিজে আমার নাম সুপারিশ করেন। তবু কিছু হয়নি।”
কেন হয়নি? স্বাস্থ্য-অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী বলেন, “এ বিষয়ে ডেপুটি ডিরেক্টর (হাসপাতাল প্রশাসন) বলতে পারবেন।” ডেপুটি ডিরেক্টর (হাসপাতাল প্রশাসন) অসিত মণ্ডলকে প্রশ্ন করা হলে তাঁর উত্তর, “আমরা চেষ্টা করছি। প্রক্রিয়াগত কারণে কিছু দেরি হচ্ছে।” রোগীদের ভোগান্তি কত দিন চলবে, তার সুনির্দিষ্ট উত্তর অবশ্য কারও কাছেই পাওয়া যায়নি। |
|
|
|
|
|