দার্জিলিং পাহাড়ের প্রায় সাড়ে তিন বছরের বকেয়া প্রায় ৮ কোটি টাকা টেলিফোন বিল মুকুবের আবেদন খতিয়ে দেখছে কেন্দ্রীয় সরকার। গত মে মাস থেকে দুই দফায় গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে বকেয়া বিল মকুব করে দেওয়ার আবেদন জানায়। মূলত কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদাম্বরমকে ওই বিষয়টি দেখার জন্য বারবার আবেদন করে মোর্চার শীর্ষ নেতারা। বিএসএনএল সূত্রের খবর, সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের যোগাযোগ এবং তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রকের অধীনে থাকা টেলিকমিউনিকেশন দফতর ভারত সঞ্চার নিগমের (বিএসএনএল) কাছে এই ব্যাপারে ‘স্টেটাস রিপোর্ট’ চেয়ে পাঠায়। ওই রিপোর্ট মন্ত্রকের কাছে বিএসএনএলের তরফে পাঠানো হয়েছে। মোর্চার কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার সচিব তথা বিধায়ক হরকাবাহাদুর ছেত্রী বলেন, “গত মে মাসে আমরা দিল্লি সফরের সময় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বিল মকুবের বিষয়টি দেখার জন্য অনুরোধ করেছিলাম। তিনি তখন বিষয়টি দেখবেন বলেছিলেন। পরবর্তীতে আরেক দফায় কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা হয়। ওই সাড়ে তিন বছরের সময়ের পর থেকে পাহাড়ে সবাই স্বাভাবিক নিয়মেই বিল দিচ্ছেন বলে জানি।” প্রচার সচিব জানান, সরকারি কর, বিল না দেওয়াটা আমাদের আন্দোলনের কর্মসূচির মধ্যে ছিল। পাহাড়ের চুক্তির সময়ই সরকারকে বিষয়টি দেখতে বলা হয়েছিল। বিএসএনএলের শিলিগুড়ি টেলিকম ডিস্ট্রিক্টের (এসটিডি) আওতায় পাহাড়ের তিনটি মহকুমা এবং শিলিগুড়ি মহকুমা রয়েছে। বর্তমানে ল্যান্ড লাইনের গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার। এরমধ্যে ২০ হাজারের মত পাহাড়ে গ্রাহক রয়েছে। এসটিডি-র ভারপ্রাপ্ত জেনারেল ম্যানেজার অরুময় ডাকুয়া শুধু বলেন, “কেন্দ্রীয় সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকে রিপোর্ট পাঠিয়ে দেওয় হয়েছে। সরকার তথা উচ্চ পর্যায় থেকে যা নির্দেশ দেওয়া হবে আমরা তাই পালন করব। এর থেকে বেশি কিছু বলতে পারব না।” বিএসএনএল সূত্রের খবর, ২০১১ সালের ১৮ জুলাই শিলিগুড়ির উপকন্ঠে পিনটেল ভিলেজে কেন্দ্র, রাজ্য এবং মোর্চার মধ্যে পাহাড় নিয়ে ত্রিপাক্ষিক জিটিএ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। পরবর্তীতে ২ সেপ্টেম্বর রাজ্য বিধানসভায় জিটিএ বিলটি পাশ হয়ে যায়। ২০০৮ সালের মার্চ থেকে চুক্তির সমকাল অবধি প্রায় সাড়ে তিন বছরে ১০ কোটি টাকা বকেয়া ছিল। পরবর্তীতে নানা ধরণের ছাড়, ‘লেট ফাইন’ মুকুব করে প্রায় ২ কোটি টাকা আদায় হয়েছে। তার পরেও বর্তমানে ওই সময়ের প্রায় ৮ কোটি টাকা বকেয়া পড়ে রয়েছে। এরমধ্যে বেসরকারি ক্ষেত্র ছাড়াও কিছু সরকারি দফতরের টেলিফোনের বিলও রয়েছে। সংস্থার কয়েকজন আধিকারিক জানান, মোবাইলের গ্রাহকদের ক্ষেত্রে বকেয়া বিল নিয়ে সমস্যা হয়নি। বিল না মেটানো হলেই শিলিগুড়ি থেকে লাইন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পরে গ্রাহকেরা শিলিগুড়ি এসে টাকা জমা দিয়ে লাইন চালু করেছেন। কিন্তু ল্যান্ড লাইনের ক্ষেত্রে স্থানীয় এক্সচেঞ্জ থেকে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে গেলেই গোলমাল হয়েছে। অনেক আধিকারিক দীর্ঘদিন কিছুই করতে পারেননি। এমনকী, ওই বকেয়া বিল আদায় করতে গিয়ে সংস্থার পাহাড়ের আধিকারিকদের হেনস্থার মুখেও পড়তে হয়েছে বলে নানা সময়ে অভিযোগ ওঠে। দার্জিলিং, কালিম্পং এবং কার্শিয়াঙে স্থানীয় স্তরে মোর্চা নেতাদের সঙ্গে কথা বলেও সমস্যা মেটানো যায়নি। পরবর্তীতে একবার দার্জিলিঙের সিংমারিতে মোর্চা সভাপতি বিমল গুরুঙ্গের সঙ্গেও সংস্থার উচ্চ পদস্থ আধিকারিকেরা বৈঠক করে বিল মিটিয়ে দেওয়ার আবেদন করেন। মোর্চা নেতৃত্বও সেই সময় তাঁদের আন্দোলন এবং বাধ্যবাধকতার কথা বিএসএনএলের আধিকারিকদের জানিয়ে দেন। |