রাজা বন্দ্যোপাধ্যায় • জলপাইগুড়ি |
মাঠে চিকিৎসা ব্যবস্থা এবং অ্যাম্বুল্যান্স না থাকলে রেফারিরা খেলা পরিচালনা করবেন না বলে জানানোয় মাঝপথেই সাময়িক ভাবে বন্ধ করে দিতে হল জেলার সুপার ডিভিশন ফুটবল লিগ। বুধবার জলপাইগুড়ি জেলা ক্রীড়া সংস্থার তরফে সংশ্লিষ্ট ক্লাবগুলিকে চিঠি দিয়ে তা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। গত ৬ জুলাই থেকে জলপাইগুড়ি জেলা ক্রীড়া সংস্থার উদ্যোগে সুপার লিগের খেলা শুরু হয়েছে। মাঠে অ্যাম্বুল্যান্স রাখার ব্যবস্থা করা গেলেও সঙ্গতি না থাকায় ওই দু’দিন চিকিৎসক রাখা সম্ভব হয়নি বলে জেলা ক্রীড়া সংস্থার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। খেলার সময় জখম হয়ে গত রবিবার জেলার তরুণ ফুটবলার মহেশ থাপার মৃত্যুর পর মাঠে চিকিৎসা পরিষেবা এবং অ্যাম্বুল্যান্স না-থাকালে খেলা পরিচালনা করবেন না বলে সিদ্ধান্ত নেয় রেফারিদের সংস্থা। এই পরিস্থিতিতে ওই ব্যবস্থা করতে আর্থিক সহায়তার জন্য জেলা ক্রীড়া সংস্থার তরফে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীর গৌতম দেবের কাছেও চিঠি পাঠানো হয়েছে। জলপাইগুড়ি জেলা ক্রীড়া সংস্থার সচিব অঞ্জন সেনগুপ্ত বলেন, “খেলার মাঠে নিয়মিত চিকিৎসক এবং অ্যাম্বুল্যান্স রাখার মতো আর্থিক সঙ্গতি আমাদের নেই। অথচ সেটাও জরুরি। জেলার তরুণ ফুটবলার মহেশের মৃত্যুতে সেটা আরও বেশি করে আমরা অনুভব করছি। ওই পরিকাঠামো না থাকলে রেফারি সংস্থার জেলা সদর শাখার কর্মকর্তারাও ম্যাচ পরিচালনা করবেন না বলে জানিয়েছেন। তাই সেই ব্যবস্থা করে খেলা চালু করার জন্য আপাতত সুপার ডিভিশন লিগের ম্যাচ বন্ধ রাখা হল।” তিনি জানান, স্থানীয়ভাবে চিকিৎসক এবং অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যাবস্থা করে ১৬ জুলাই থেকে ফের লিগের খেলা চালুর কথা ভাবা হয়েছে। খেলা চলাকালীন মাঠে একটি অ্যাম্বুল্যান্স এবং চিকিৎসকের ব্যবস্থা করতে সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, জলপাইগুড়ি ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশন এবং বেসরকারি নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দিয়ে আবেদনও জানানো হয়েছে। তবে জেলার নানা জায়গায় বিভিন্ন ক্লাবের উদ্যোগে যে সমস্ত ফুটবল প্রতিযোগিতা হয় সেগুলি যাতে বন্ধ না হয়ে পড়ে সে জন্য জেলা ক্রীড়া সংস্থার কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে জেলা রেফারি সংস্থা। জেলার রেফারি সংগঠনের সম্পাদক বাবলু বসু বলেন, “জেলার ১৩ টি ব্লকে প্রতি বছর অসংখ্য ফুটবল প্রতিযোগিতা হয়। মাঠে চিকিৎসক এবং অ্যাম্বুল্যান্স রাখতে না পারার জন্য যাতে ওই খেলাগুলি বন্ধ হয়ে না পড়ে সেটাও দেখতে হবে। না হলে জেলায় ফুটবল ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ ব্যাপারে জেলা ক্রীড়া সংস্থার সঙ্গে আলোচনা করে একটা রাস্তা বার করতে চাই।” জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালে জখম মহেশকে নিয়ে গেলে তখনই সুষ্ঠু চিকিৎসা ব্যবস্থা না করে উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করে দেওয়া হয়েছিল বলে তাঁর বাবা চন্দ্রবাহাদুরবাবু লোকেরা অভিযোগ তুলেছেন। সেই পরিপ্রেক্ষিতেই জেলা ক্রীড়া সংস্থার তরফে জেলা স্বাস্থ্য দফতরকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে কোনও জখম খেলোয়াড়কে হাসপাতালে নিয়ে গেলে যেন তৎক্ষণাৎ সুষ্ঠু চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালের সুপার ব্রজেশ্বর মজুমদার বলেন, “অভিযোগের বিষয়টি তিনি খতিয়ে দেখবেন।” জেলা ক্রীড়া সংস্থার তরফে অঞ্জনবাবু বলেন, “আমরা চাই কোনও খেলোয়াড়কে হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁর চিকিৎসা না করে রেফার করা চলবে না।” অন্য দিকে মহেশের স্মৃতি রক্ষার জন্যে তাঁর পাড়ার পরশমণিনগর কালচারাল ক্লাব ও পাঠাগারের পক্ষ থেকে একটি ফুটবল প্রতিযোগিতা চালুর কথা ঘোষণা করা হয়। পরশমণিনগর কালচারাল ক্লাব এবং পাঠাগারের কর্মকর্তা চন্দন ভুজে বলেন, “মহেশের স্মৃতি রক্ষায় আমরা ওই ফুটবল প্রতিযোগিতা করব।” |