নিজস্ব সংবাদদাতা • জলপাইগুড়ি |
গত চার বছরে যা হয়নি, তাই হয়েছে গত এক সপ্তাহে. মুখ্যমন্ত্রীর জলপাইগুড়ি সফর চূড়ান্ত হওয়ার পরেই যুদ্ধকালীন তৎপরতায় আর্ট গ্যালারির সংস্কারের কাজ শুরু হয়। ফলে চার বছর ধরে আর্ট গ্যালারির যে ছবি ছিল তার সঙ্গে মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকের দিনের ছবির বিস্তর ফারাক। মুখ্যমন্ত্রীর সফরে জলপাইগুড়ির প্রাপ্তির তালিকায় রয়েছে, নব কলেবরে আর্ট গ্যালারি. এমনটাই মনে করছে জলপাইগুড়ির সংস্কৃতিপ্রেমীদের একটা অংশ। বিবর্ণ হয়ে যাওয়া আর্ট গ্যালারির ভেতর এবং বাইরে দুই দেওয়ালেই পড়েছে রঙের প্রলেপ। সন্ধ্যে হলেই ভবনের সামনে সারি দিয়ে বসানো নতুন ত্রিফলা বাতিস্তম্ভ থেকে ছড়ানো নরম সাদা আলো ছড়িয়ে পড়ছে গোটা চত্বরে। ভবনের সামনেই দেওয়ালের বিশাল ফাটল উধাও। নতুন রঙ করা দেওয়ালে বিচ্ছুরিত হচ্ছে অত্যাধুনিক মেটাল বাতির উজ্জল আলো। দীর্ঘদিন ধরে অকেজো হয়ে থাকা মঞ্চের আলোও বদলানো হয়েছে। ছেঁড়া কাপের্ট উধাও। |
নতুন সবুজ কাপের্টে মুড়ে দেওয়া হয়েছে ভবনের মেঝে। অকেজো শীততাপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা মেরামত করা হয়েছে, মঞ্চ এবং সাজঘরকেও ঠান্ডা রাখতে নতুন চারটি শীততাপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র বসানো হয়েছে। সাজঘরের ভাঙা জানালা সরিয়ে বসেছে নতুন জানালা। সাজঘর এবং সাধারণ শৌচাগারের ভাঙা বেসিন ও অকেজো কল সরিয়ে ফেলা হয়েছে। শৌচাগারের মেঝেতে নতুন টাইলস বসানো হয়েছে। আর্ট গ্যালারির দেওয়ার ফুড়ে ওঠা গাছের শেকড় কাটা হয়েছে। দর্শকদের বসার চেয়ারের মরচে ধরা লোহার হাতলে পালিশ করা হয়েছে। মঞ্চের পর্দা ও শব্দ সংযোজন ব্যবস্থার সংযোজন হয়েছে। ভবনের সামনের বাগানের পরিচর্যা হয়েছে। বসেছে নতুন ত্রিফলা আলো। এক কথায় আর্ট গ্যালারি এখন ঝকঝকে তকতকে। জলপাইগুড়ি জেলার সংস্কৃতি পরিমন্ডলের অন্যতম গর্বের কলাকেন্দ্র ২০০৫ সালে উদ্বোধনের দু-তিন বছরের মধ্যেই বেহাল হয়ে পড়ে। রক্ষনাবেক্ষণের অভাবে প্রায় কয়েক লক্ষ টাকা মূল্যের আলো ও শব্দের যন্ত্র লোপাট হয়ে যায়। প্রেক্ষাগৃহের অবস্থা এমনই অবনতি হয় যে কলকাতার নাট্য জগতের ও চলচিত্র জগতের এক বিখ্যাত আলোকশিল্পী খোদ তদানিন্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে এই বিষয়ে উদ্যোগী হওয়ার নির্দেশও দেন। তাতে কাজ হয়নি। সম্প্রতি এসজেডিএ তরফে আর্ট গ্যালারির আমূল সংস্কার করা হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের সফর চূড়ান্ত হওয়ায় সেই কাজ দ্রুতগতিতে সেরে ফেলা হয়েছে। প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা খরচ করে এসজেডিএ ভবনের মেরামতির কাজ করেছে। এসজেডিএর জলপাইগুড়ির সদস্য তথা তৃণমূলের জেলা সভাপতি চন্দন ভৌমিক বলেন, “রাজ্যের পূর্বতন বাম সরকারের আমলে এই আর্ট গ্যালারি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হচ্ছিল। বর্তমান সরকার আসার পরে এসজেডিএ আর্ট গ্যালারির সংস্কারের বিষয়ে উদ্যোগী হয়। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীও নিজে উদ্যোগী হন। তিনি নিজেও কাজের পরিদর্শন করেছেন। মুখ্যমন্ত্রীর সফর স্থির হওয়ায় সেই কাজ দ্রুততার সঙ্গে করা হয়েছে।” আর্ট গ্যালারির সংস্কার হওয়ায় খুশি বামপন্থী সংস্কৃতিক কর্মীরাও। গণতান্ত্রিক লেখক শিল্পী সঙ্ঘের জোনাল সম্পাদক গৌতম গুহরায় বলেন, “আধুনিক যন্ত্র, এমনকী দামী পর্দাও লোপাট হয়ে গিয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠক থাকায় আর্ট গ্যালারির সংস্কার হয়ে ভালোই হয়েছে। যেভাবেই হোক, ভবনটি ভালো হলেই আমরা খুশি।” |