রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে সমর্থনের জন্য কে কাকে প্রথম ফোন করবেন, এই নিয়ে প্রবল টানাপোড়েন বাংলার দুই রাজনীতিকের মধ্যে। সেই সময়েই ‘বরফ গলানো’র লক্ষ্যে রাজ্য বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফোন করলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়।
রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী প্রণববাবু নিজেই সক্রিয় হয়েছেন স্পিকারের কাছে ‘দুঃখপ্রকাশ’ করতে। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রচারে সোমবার বিধানসভায় গিয়েছিলেন প্রণববাবু। তাঁর সঙ্গে বৈঠক ছিল বাম ও কংগ্রেস বিধায়কদের। শুধু স্পিকার ছাড়া তৃণমূলের কোনও বিধায়কই সেই দিনই বিধানসভার ধারেকাছে ছিলেন না। দফতরে থাকা সত্ত্বেও তাঁর সঙ্গে দেখা না-করায় প্রণববাবুর ‘সৌজন্য বোধ’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন স্পিকার। রাষ্ট্রপতি হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে থাকা প্রণববাবু বিষয়টি জানতে পেরে নিজেই উদ্যোগী হন ‘তিক্ততা’ মুছতে। সেই জন্যই বুধবার সকালে তিনি ফোন করেন স্পিকারকে।
প্রণববাবুর কথায়, “সে দিন স্পিকার যে বিধানসভায় আছেন, তা কেউ বলেননি। জানলে নিশ্চয়ই ওঁর সঙ্গে দেখা করতাম। দেখা না-করার কোনও প্রশ্নই ছিল না।” স্পিকার যে বিধানসভায় ছিলেন, সেই খবর তাঁকে না-জানানোর জন্য ঘনিষ্ঠ মহলে প্রণববাবু ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন। তাঁর বক্তব্য, “আমি তো আনন্দবাজার পড়ে জানলাম, স্পিকার ওই দিন বিধানসভায় ছিলেন!” এর পরেই ‘ভুল বোঝাবুঝি’র অবসান ঘটাতে প্রণববাবু নিজেই সক্রিয় হয়েছেন। ফোন করেছেন স্পিকারকে।
প্রণববাবুর ফোন পেয়ে ‘সন্তুষ্ট’ স্পিকারও। তাঁর প্রতিক্রিয়া, “সোমবার প্রণববাবুর প্রচারের জন্য সমস্ত ব্যবস্থা রাখায় উনি আমাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। আমি যে বিধানসভায় ছিলাম, তা উনি জানতেন না বলে আমাকে বলেছেন। বললেন, জানলে উনি দেখা করতেন।” প্রণববাবুর এ হেন ‘শিষ্টাচার’ই যে প্রত্যাশিত, তা উল্লেখ করেই স্পিকার এ দিনও বলেছেন, “বিধানসভার স্পিকারের পদটি রাজনীতির ঊর্ধ্বে। ফলে, প্রণববাবুর মতো কেউ বিধানসভায় কোনও কর্মসূচিতে এলে স্পিকারের সঙ্গে দেখা করে থাকেন।” দু’দিন আগের ঘটনা নিয়ে এ দিন কিছুটা হাল্কা চালে স্পিকারের মন্তব্য, “বেটার লেট দ্যান নেভার!”
রাষ্ট্রপতি-পদে প্রণববাবুর প্রার্থী হওয়া ঘিরে কংগ্রেস-তৃণমূলে সংঘাত চরমে উঠেছে। রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে তাঁদের অবস্থান এখনও ঘোষণা করেননি তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এমনকী, উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়েও কংগ্রেসের সঙ্গে মমতা ‘সংঘাতে’ই যেতে চান। সেই পরিস্থিতিতে রাজ্য বিধানসভার স্পিকারকে (যিনি তৃণমূলের এক জন বিধায়কও বটে) প্রণববাবুর ফোন ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলেই জোট শিবিরের নেতাদের একাংশের অভিমত।
প্রণববাবু অবশ্য বলেছেন, “রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী হয়ে এবং মন্ত্রিত্বে ইস্তফা দেওয়ার পরে আমি রাজনীতির কোনও কথা বলব না। রাষ্ট্রপতি পদটি রাজনীতি ও দলের ঊর্ধ্বে।” সোমবার প্রণববাবু দেখা না-করে চলে যাওয়ার পরে তাঁর ‘সৌজন্যবোধ’ নিয়ে প্রশ্ন তুলে স্পিকারও বলেছিলেন, “স্পিকার পদটা যে রাজনীতির ঊর্ধ্বে, এটা বোধহয় উনি গুলিয়ে ফেলেছেন! উনি রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী। রাষ্ট্রপতি-পদ যেমন কোনও দলের নয়, স্পিকারও তা-ই।” এই প্রেক্ষিতে প্রণববাবুর এই তৎপরতা ‘তিক্ততা’র আবহে ‘সৌজন্যের প্রলেপ’ হিসাবেও দেখছেন রাজনৈতিক শিবিরের একাংশ। |