থমকে বহু তদন্ত
কর্মী নেই, যন্ত্রও নেই, রাজ্যে ঠুঁটো ফিঙ্গারপ্রিন্ট ব্যুরো
পুলিশ বলছে: তদন্ত শেষ হবে কী করে? ফিঙ্গারপ্রিন্ট ব্যুরোতেই তো নমুনা পড়ে থাকে মাসের পর মাস!
ব্যুরো বলছে: লোক নেই, গাড়ি নেই, যন্ত্র নেই। তাড়াতাড়ি রিপোর্ট দেব কী করে?
আর এই টানাপোড়েনে বিভিন্ন থানার বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তদন্ত থমকে রয়েছে মাঝপথে। যেমন বীরভূম জেলা পুলিশের এক কর্তা জানাচ্ছেন, “বোলপুরের একটা চুরির মামলায় ধৃতের আঙুলের ছাপের নমুনা ফিঙ্গারপ্রিন্ট ব্যুরোয় গিয়েছে দশ মাস হয়ে গেল। এখনও রিপোর্ট মেলেনি।” একই অভিযোগ কাকদ্বীপ মহকুমা পুলিশের। সাত মাস আগের খুন-ডাকাতি সমেত চার-পাঁচটা মামলায় আঙুলের ছাপ সংক্রান্ত রিপোর্ট তারা রাজ্য ফিঙ্গারপ্রিন্ট ব্যুরো থেকে এখনও পায়নি। কেন এই বিলম্ব?
বাস্তব পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে রাজ্যের একাধিক পুলিশকর্তা অবশ্য ব্যুরোর পক্ষেই ‘সওয়াল’ করছেন। তাঁদের বক্তব্য, “এত কম কর্মী নিয়ে ঠিক সময়ে রিপোর্ট দেওয়া অসম্ভব। ওই বিভাগের প্রায় সব পদই বিশেষজ্ঞের। তাই পুলিশের সাধারণ পরীক্ষার মাধ্যমে কর্মী নিয়োগ করা যাবে না”
অথচ কর্মী না-পেলে বিশ্বের প্রথম এই ফিঙ্গারপ্রিন্ট ব্যুরোটি অচিরে মুখ থুবড়ে পড়বে বলে আশঙ্কা দানা বেঁধেছে বিভিন্ন মহলে। সরকারি নথি বলছে, ১৮৮৭-তে হুগলির জাঙ্গিপাড়ার চিফ ম্যাজিস্ট্রেট উইলিয়াম হার্সেল ‘প্রজা’ চিহ্নিত করতে আঙুলের ছাপ নেওয়া শুরু করেন। পরে তার ভিত্তিতেই তথ্য যাচাইয়ের প্রক্রিয়া দেশ জুড়ে চালু হয়। ১৮৯৭-এ পাকাপাকি ভাবে ফিঙ্গারপ্রিন্ট ব্যুরো তৈরি হয় রাইটার্স বিল্ডিংয়ে। পরবর্তী কালে তার অফিস ভবানী ভবনে স্থানান্তরিত হয়। ২০০৫ সালে তা চলে যায় সল্টলেকে।
কিন্তু প্রয়োজনীয় কর্মীর অভাবে ব্যুরোর এখন প্রায় ‘হাঁড়ির হাল।’ স্বরাষ্ট্র দফতরের হিসেবে, সিআইডি-র অধীনস্থ বিভাগটিতে যেখানে ৪১ জন থাকার কথা, সেখানে ৫ জুনিয়র বিশেষজ্ঞ-সহ আছেন মাত্র ছ’জন। সিনিয়র বিশেষজ্ঞের বারোটি পদই ফাঁকা। ফলে শ’দুয়েক নমুনা স্রেফ পড়ে রয়েছে। সিআইডি-র ডিজি ভি ভি থাম্বিও কবুল করেছেন, “ফিঙ্গারপ্রিন্ট ব্যুরোর অবস্থা সত্যিই খারাপ।” অবিলম্বে কর্মী নিয়োগের জন্য স্বরাষ্ট্র দফতরে আর্জি জানিয়েছে সিআইডি। রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরের এক কর্তা জানিয়েছেন, চুক্তির ভিত্তিতে ওখানে বিশেষজ্ঞ নিয়োগের চেষ্টা চলছে।
তবে শুধু লোকাভাব নয়। উপযুক্ত যন্ত্রের অভাবেও রাজ্য ফিঙ্গারপ্রিন্ট ব্যুরোর কার্যকারিতা মার খাচ্ছে। কী রকম?
এক পুলিশকর্তার ব্যাখ্যা, “আঙুলের ছাপের নমুনা দ্রুত যাচাই করতে ফিঙ্গারপ্রিন্ট অটোমেটেড ক্রিমিন্যাল ট্রেসিং সিস্টেম (ফ্যাক্টস) নামে একটা যন্ত্র বেশির ভাগ রাজ্য দশ-বারো বছর আগেই কিনে ফেলেছে। পশ্চিমবঙ্গে তা আসে ২০০৭-এ। আবার তিন বছরের মধ্যে তা অকেজোও হয়ে গিয়েছে।”
এবং তার পরে সেই যন্ত্র আর কেনা হয়নি। ফলে সন্দেহভাজনের আঙুলের ছাপ যাচাই করতে বিশেষজ্ঞেরা ফিরে গিয়েছেন মান্ধাতা আমলের পদ্ধতিতে। “ফ্যাক্টস দিয়ে কাজটা করতে যেখানে তিন-চার মিনিট লাগত, সেখানে এখন একাধিক দিন লেগে যাচ্ছে।” আক্ষেপ করছেন এক গোয়েন্দা-কর্তা।
বিভিন্ন অপরাধের তদন্তে নেমে এর খেসারত দিতে হচ্ছে পুলিশকে। রাজ্য ফিঙ্গারপ্রিন্ট ব্যুরোর ভাঁড়ারেও তেমন পরিমাণে তথ্য জমছে না। সিআইডি-সূত্রের খবর: অন্ধ্র-মহারাষ্ট্রের মতো রাজ্যে সংশ্লিষ্ট বিভাগের তথ্যপঞ্জিতে যেখানে দু’লক্ষ আঙুলের ছাপের নমুনা মজুত, সেখানে পশ্চিমবঙ্গে মাত্র ৪০ হাজার! তারও একটা বড় অংশ সংরক্ষণের অভাবে নষ্ট হতে বসেছে।
রাজ্য পুলিশের এক কর্তা বলেন, “গুজরাতের ফিঙ্গারপ্রিন্ট ব্যুরোয় দশ লাখের বেশি নমুনা রয়েছে। তিরিশটা ভ্রাম্যমান (মোবাইল) ব্যুরোও খুলেছে ওরা। আর মহারাষ্ট্র তো একটা কেন্দ্রীয় সার্ভার মারফত সমস্ত থানাকে জুড়ে দিয়েছে ফিঙ্গারপ্রিন্ট ব্যুরোর সঙ্গে!” ওই পুলিশকর্তা জানান, কম্পিউটারের মাউসে ক্লিক করেই যাতে অপরাধ ও অপরাধীর খোঁজ মেলে, সেই লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক দেশ জুড়ে একটা প্রকল্প চালু করেছে। সেই ‘ক্রাইম অ্যান্ড ক্রিমিন্যাল ট্র্যাকিং নেটওয়ার্ক অ্যান্ড সিস্টেম’-এর মূল উপকরণই হল আঙুলের ছাপের তথ্য-ভাণ্ডার।
কর্মী ও যন্ত্রের অভাবে যে ক্ষেত্রে ক্রমশ পিছিয়ে পড়ছে পশ্চিমবঙ্গ।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.