আবাসিক মেয়েরা হঠাৎ কেন বিদ্রোহী হয়ে উঠেছিলেন, তা সরেজমিন খতিয়ে দেখতে পুরুলিয়ার আনন্দমঠ হোমে গেলেন রাজ্যের স্বনির্ভর গোষ্ঠী ও স্বনিযুক্তি প্রকল্প দফতরের মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো। ঘুরে দেখার পরে হোমের পরিকাঠামো-সহ আরও কিছু সমস্যার কথা মেনে নিয়েছেন মন্ত্রী।
সরকারি এই হোমে তাঁদের বসবাসের উপযুক্ত পরিকাঠামো নেই, খাবারের মানও ভাল নয়এমন নানা অভিযোগ তুলে এবং কর্তৃপক্ষের একাংশের ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন তুলে গত ২৪ জুন আনন্দমঠ হোমে ভাঙচুর চালান কিছু আবাসিক মেয়ে। কয়েক জন আবাসিক হোমের ঘেরাটোপ থেকে বেরিয়ে সোজা পুরুলিয়া শহরেও চলে এসে আদালত চত্বরে অবস্থান-বিক্ষোভ করেন। তাঁদের দাবি ছিল, প্রশাসনকে অভিযোগের সুরাহা করতে হবে। হোমের দায়িত্বে থাকা পুরুলিয়ার অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) হৃষিকেশ মুদি তাঁদের সঙ্গে বৈঠকে বসে অভিযোগ ও সমস্যা শোনার পরে ‘বিদ্রোহী’ মেয়েরা ওই দিনই সন্ধ্যায় হোমে ফিরে যান।
মঙ্গলবার বিকেলে আচমকা মন্ত্রী হোম পরিদর্শনের সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু এ কথা তিনি হোম কর্ত্তৃপক্ষ বা প্রশাসনকে আগাম জানাননি। শান্তিরামবাবুর কথায়, “সমস্যা কোথায়, তা সরেজমিন বুঝতেই এ রকম ভাবে হোমে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই।” এ দিন মন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন জেলার ‘চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটি’র সদস্যেরাও। |
তাঁরা হোম ঘুরে দেখার পাশাপাশি আবাসিক মেয়েদের সঙ্গে কথাও বলেন। কয়েক জন আবাসিকের সঙ্গে আলাদা করে কথাও বলেন মন্ত্রী। খাবার নিয়ে মেয়েরা তাঁর কাছে অভিযোগ জানান। কী ভাবে কম জায়গায় গাদাগাদি করে থাকতে হয়, তা নিয়েও আবাসিকেরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পরে হোমের সুপার ডালিয়া আচার্যের সঙ্গেও শান্তিরামবাবু কথা বলেন। অন্য দিকে, ‘চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটি’র সদস্য শ্রীকান্ত গরাই বলেন, “নিরাপত্তা ব্যবস্থায় গলদ থাকার কারণে সেদিন মেয়েরা বেরিয়ে গিয়েছিল। পাশাপাশি হোমের অভ্যন্তরে আবাসিকদের একাংশের মধ্যে বেশ কিছুদিন ধরে যে শৃঙ্খলার অভাব ছিল, তা-ও বোঝা গিয়েছে। না হলে মেয়েরা সেদিন ওই ভাবে বাইরে বেরিয়ে যেতে পারত না। তবে এটা এক দিনে হয়নি।”
শান্তিরামবাবু বলেন, “আমি হোম ঘুরে দেখেছি, ওখানে পরিকাঠামোগত-সহ আরও কিছু সমস্যা রয়েছে। আসলে আগের সরকার এত দিন এই হোমের দিকে সে-ভাবে নজর দেয়নি। আমাদের সরকার পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য ইতিমধ্যেই ১ কোটি টাকার বেশি বরাদ্দ করেছে। ওখানে যে মেয়েরা পড়াশোনা করছে, তারা যাতে ঠিকমতো লেখাপড়া করতে পারে বা ভবিষ্যতে তাঁরা যাতে স্বনির্ভর হতে পারে, তা নিয়েও সুপারের সঙ্গে কথা বলেছি। কিছু বিষয় নিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলব।” তিনি জানান, আরও কিছু বিষয় তাঁর নজরে এসেছে। সেগুলি নিয়ে তিনি সংশ্লিষ্ট দফতরের মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলবেন। হোমের সুপার ডালিয়াদেবী বলেন, “আমাদের সমস্যার কথা মন্ত্রীকে জানিয়েছি। উনি নিজেও সব দেখেছেন। আর মেয়েদের মধ্যে হোম কর্তৃপক্ষকে নিয়ে যা অসন্তোষ রয়েছে, তা জানতে আমি নিজে ইতিমধ্যেই ওদের সঙ্গে আলোচনায় বসেছি। আরও কথা বলব।” |