বিদ্যুৎকেন্দ্রের ছাই-পুকুর (অ্যাশ পন্ড) উপচে ও ওই পুকুরের বাঁধ ফেটে ছড়ানো ছাইয়ে দীর্ঘ দিন চাপা পড়েছে বহু একর চাষের জমি, সেচের জন্য তৈরি জলাধার। চাষাবাদ বন্ধ বাঁকুড়ার গঙ্গাজলঘাঁটিতে ডিভিসি-র মেজিয়া তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র লাগোয়া এলাকায়। ডিভিসি কর্তৃপক্ষ জমি থেকে ছাই সরিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আশ্বাস দিলেও এলাকাবাসীর ক্ষোভ এখনও কমেনি। তাঁদের অভিযোগ, ছাই সরানো হচ্ছে ঢিমে তালে। চাষ মার খাচ্ছে। সমস্যা জেনে রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী মণীশ গুপ্ত ডিভিসি-র চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ সেনকে ফোন করে দ্রুত সমস্যা মেটাতে অনুরোধ জানিয়েছেন।
মেজিয়া বিদ্যুৎকেন্দ্রে এখন চালু রয়েছে ৮টি ইউনিট। ছাই ফেলার জন্য রয়েছে দু’টি পুকুর। স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য, বিদ্যুৎকেন্দ্রটি যখন চালু হয়, তখন পুকুরগুলিতে দু’টি ইউনিটের ছাই পড়ত। দীর্ঘ দিন তা না সরানোয় পুকুরগুলি উপচে ওঠার দশা হয়েছিল। সময়ের সঙ্গে নতুন ইউনিট চালু হয়েছে। কিন্তু ছাই-পুকুরের সংখ্যা না বাড়ায় সমস্যা মেটেনি। মাস তিনেক আগে বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি ছাই-পুকুর উপচে ও একটি ছাই-পুকুরের বাঁধ ফেটে ছাই-মেশা জল ভাসায় সেচের জন্য গড়া জামগাড়ি জলাধার। জলাধার ছাপিয়ে জল ঢোকে লাগোয়া রাধাকৃষ্ণপুর ও জামগাড়ি গ্রামের চাষজমিতে। সেচখাল হয়ে বাঁকদহ, সারঙ্গপুর, হদলবনি, মাছবাঁধা, ডাঙাপাড়ার মতো গ্রামগুলির চাষের জমি ঢেকে দেয় ছাই-জল।
এলাকাবাসীর দাবি, কম-বেশি ৫০০ একর জমি ছাইয়ের নীচে চাপা পড়েছে। তাঁদের ক্ষোভ, সমস্যার কথা ডিভিসি কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও ‘কাজ হয়নি’। শেষে তাঁরা প্রশাসনের দ্বারস্থ হন। সপ্তাহ তিনেক আগে এসডিও (বাঁকুড়া সদর) অরিন্দম রায় এলাকা ঘুরে ‘বিপর্যয় হয়েছে’ বলে মন্তব্য করেন। এসডিও-র উপস্থিতিতেই মেজিয়া বিদ্যুৎকেন্দ্রের চিফ ইঞ্জিনিয়ার দেবাশিস মিত্র এলাকাবাসীকে জানান, ছাই সরানো হবে। ক্ষতিপূরণও দেওয়া হবে। কিন্তু বাসিন্দাদের অভিযোগ, সে কাজ বিশেষ এগোয়নি। |
বুধবার এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, ছাই-পুকুরের বাঁধের ফাটল বোজানো হয়েছে। তবে জামগাড়ি জলাধার, জামগাড়ি গ্রাম, রাধাকৃষ্ণপুর গ্রামের মাঠ এখনও ছাইয়ের পুরু চাদরে ঢাকা। জলাধারে একটি এবং বাঁকদহ কালভার্টে ছাই সরাতে দু’টি যন্ত্র নামিয়েছে ডিভিসি। রাধাকৃষ্ণপুরের রবীন্দ্রনাথ গরাই, কাজল গরাই, রবি গরাইদের অভিযোগ, “পুকুর উপচে ছাই মাঠ ভাসিয়ে দেওয়ায় বোরো ধান তুলতে পারিনি। এখনও জমি ছাই-চাপা। তাই আমনও চাষ করতে পারলাম না।” জামগাড়ির অজিত কর্মকার, গুরুপদ কর্মকারেরা বলেন, “ডিভিসি এত আস্তে ছাই সরাচ্ছে, কবে কাজ শেষ হবে বোঝা যাচ্ছে না। ক্ষতিপূরণই পাইনি। মনে হয়, অনাহারে মরতে হবে!” তাঁদের আশঙ্কা, বর্ষার জলে ওই ছাই অন্য এলাকাতেও ছড়াবে।
স্থানীয় (বড়জোড়া) তৃণমূল বিধায়ক আশুতোষ মুখোপাধ্যায় বলেন, “ছাইয়ের সমস্যা ভয়াবহ চেহারা নিয়েছে। বেশ কয়েকশো একর জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।” সম্প্রতি তিনি বিদ্যুৎমন্ত্রীকে সমস্যার কথা জানান। মহাকরণ সূত্রের খবর, বিষয়টি জেনে বিদ্যুৎমন্ত্রী ডিভিসি-র চেয়ারম্যানকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেন।
ছাই সরানো নিয়ে এলাকাবাসীর অভিযোগ মানেননি ডিভিসি-র চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ সেন। তাঁর দাবি, “সমস্যা মিটে গিয়েছে। ছাই সরানো চলছে।” তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের চিফ ইঞ্জিনিয়ার দেবাশিস মিত্রও বলেন, “দ্রুত ছাই সরানোর জন্য ডিভিসির চেয়ারম্যান নির্দেশ দিয়েছেন। এখন পুরোদমে ছাই সরানোর কাজ চলছে। এলাকা সমীক্ষা করে ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের নামের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।” তিনি জানান, নতুন ছাই-পুকুর তৈরি করার জন্য জমি কিনতে বলেছেন ডিভিসি কর্তৃপক্ষ। সেই প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। |